Sign In

বিংশ শতাব্দীতে পদার্থবিদ্যার দর্শনে সময়ের ধারণা

বিংশ শতাব্দীতে পদার্থবিদ্যার দর্শনে সময়ের ধারণা

সময় নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। বিংশ শতাব্দীতে পদার্থবিদ্যার দর্শনে সময়ের ধারণা নিয়ে জানবো আজ। এই প্রবন্ধের সবচেয়ে রহস্যময় জিনিস এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সময়। সময় এর তারতম্যের কারণে মানুষ এবং অন্যান্য পশুপাখি তাদের জীবনের উপর অনেক প্রভাব লক্ষ্য করে।

সময় নিয়ে সুযোগ বর্তমান সময়ের মানুষ ভাবছে এ বিষয়টা মোটেও তেমন নয়। বিংশ শতাব্দীর আগে মানুষ সময় নিয়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন। গত পর্বে আমরা জেনেছি সময় সম্পর্কে প্রাচীন বিজ্ঞানপূর্ব ধারণা এবং তার প্রভাব সম্পর্কে। আপনারা চাইলেই সেটি পড়ে নিতে পারেন।

বিংশ শতাব্দীতে পদার্থবিদ্যার দর্শনে সময়

বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মানুষ সময় বা কাল নিয়ে গভীর গবেষণা করতে পারছে। অতীতে অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীর আগে জ্ঞান-বিজ্ঞান কত উন্নত না থাকলেও বিজ্ঞানীরা সময় নিয়ে গবেষণা থামিয়ে রাখেন নি।

বিংশ শতাব্দীতে পদার্থবিদ্যার দর্শনে সময়ের ধারণা আর্টিকেলে আমরা সে বিষয়টি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। আশা করছি এটি পাঠের মাধ্যমে আপনি বিংশ শতাব্দীতে পদার্থবিজ্ঞানী কিভাবে সময়কে সংজ্ঞায়িত করেছেন বা সময় সম্পর্কে তারা কি ভেবেছেন তা জানতে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

বিংশ শতাব্দীতে পদার্থবিদ্যার দর্শনে সময়

বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ ও সময় (দেশকাল)

যে কোন ঘটনার সময়ের কথা আমরা যখন বলি তখন ঘটনার প্রসঙ্গ কাঠামোয় মিলিয়ে নেয়া ঘড়ি দিয়ে মাপা সময়ের কথাই বলি। দুটি জড়কাঠামো পরস্পরের মধ্যে আপেক্ষিক গতিবিশিষ্ট।

কোন ঘটনার সময়ের উল্লেখের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রসঙ্গ কাঠামো আমাদের জানা প্রয়োজন কারণ তা না হলে সময়ের কোন অর্থ হয় না। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতত্ত্বের আগে আমাদের ধারণা ছিল যে সময় একটি পরম রাশি এবং তা বস্তুর উপর নির্ভর করে না।

কিন্তু এ ধারণা ভিত্তিহীন কারণ সময় মাপার জন্য যে ঘড়ি আমরা ব্যবহার করি তা মেলানোর জন্য যুগপৎ বা একই সময়ের ধারণা ব্যবহার করতে হয় এবং তা হচ্ছে আপেক্ষিক।

সময়ের পরমত্ব যদি আমরা বাদ দেই তবে আপেক্ষিকতার নীতি এবং আলোর গতিবেগের ধ্রুবত্ব এই দুইয়ের সঙ্গে যে আপাতবিরোধ তা আর থাকে না।

বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ ও সময় (দেশকাল)

সময়ের ধারণা প্রত্যেকের নিজের ঘড়ি থেকে নেয়া এবং দুই সময়কে এক ভাবার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই ।

এই জন্যই প্রত্যেক জড়কাঠামোর দর্শক তার নিজস্ব দৈর্ঘ্য মাপার দণ্ড এবং সময় মাপার যন্ত্র ব্যবহার করে আলোর যে গতিবেগ পায় তা বিশ্বব্যাপী ধ্রুবসংখ্যা।

দৈর্ঘ্য আপেক্ষিক, সময়ও আপেক্ষিক শুধুমাত্র আলোর গতিবেগ একটি জড় কাঠামোয় নিরপেক্ষ ধ্রুবরাশি। আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতত্ত্বের এটাই মূলভিত্তি।

মহাবিশ্বে কোন বস্তুই স্থির নয়। সবাই ঘুরছে। তাই সব গতিই হচ্ছে আপেক্ষিক। একের তুলনায় অন্যের গতিবেগই হচ্ছে আপেক্ষিক গতি । কোনও বস্তুর নিজস্ব গতি বলে কিছু নেই। ঐ থেকেই তত্ত্বটার নাম আপেক্ষিকতাবাদ ।

পৃথিবী সূর্যকে, সূর্য ভেগা নক্ষত্রের দিকে গ্যালাকটিক সিস্টেমকে ঘিরে পাক খাচ্ছে

গোটা গ্যালাকটিক সিস্টেম আবার আবর্তিত হতে হতে একদিকে ছুটে চলেছে। সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড গতির ছন্দে আবদ্ধ, কেউ স্থির নেই। বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু বলে কিছু নেই । কোন কিছুই গতিহীন হতে পারে না।

সবাই চলেছে পরস্পরের সঙ্গে আপেক্ষিক বেগে। স্থান ও কাল পরস্পর সম্পৃক্ত। প্রতিটি বস্তু এই অপরিবর্তনীয় আইন মেনে চলে। সময় ধ্বংস হলে স্থানের অস্তিত্ব লোপ পায়। স্থান ধ্বংস হলে সময়ের ধারণাও আর থাকে না। কেন এটা এমন হয় তা কেউ জানে না।

আপেক্ষিকতাবাদের সবচেয়ে বিস্ময়কর কথাটা হল এই যে কোন জাগতিক বস্তু গতিবৃদ্ধি করতে করতে আলোর গতির সমান হতে পারবে না, বা তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। আলোর গতি হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার। এ সূত্রে আরো বলা আছে গতিবেগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বস্তুর ‘ভর’ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ।

ফলে তার শক্তিরও বৃদ্ধি হয়; কারণ, একই গতিসম্পন্ন দুটি বস্তুর মধ্যে যদি একটার ওজন (ভর) বেশি হয় তবে সেটি বেশি শক্তিশালীও হয়।

আইনস্টাইন অঙ্ক কষে দেখলেন—ভর-বৃদ্ধির জন্য যে অতিরিক্ত শক্তি পাওয়া যাচ্ছে সেটার পরিমাণ ভর-বৃদ্ধির সঙ্গে আলোর গতির বর্গের গুণফল।

এ থেকে আরো সিদ্ধান্তে আসা গেল যে কোন বস্তুর সম্পূর্ণ ভরকেই শক্তিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব। আইনস্টাইন তার ঐ ক্ষুদ্রতম সমীকরণ সূত্রে E = mc2 প্রমাণ করেন । যেখানে E হচ্ছে শক্তির পরিমাণ, m হচ্ছে ভর এবং c যথারীতি আলোর গতি।

পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারের প্রায় অর্ধশতাব্দী পূর্বেই তিনি বললেন, কণা মাত্র বস্তুকে সম্পূর্ণভাবে শক্তিতে রূপান্তরিত করলে ধারণাতীত শক্তির জন্ম দেয়া যাবে।

আপেক্ষিকতাবাদ আরও বলছে

আপেক্ষিক গতির বৃদ্ধির সঙ্গে সময়ের ক্রমশঃ হ্রাস পাবে। এতদিন ধরে আমরা জানতাম ‘কাল’ যেন একটি প্রবহমান নদী—যার গতি অপরিবর্তনশীল। যে মুহূর্তটি অতিক্রান্ত তাকে আর কিছুতে ফিরিয়ে আনা যাবে না। আইনস্টাইন এই ধারণাটার মূলেই কুঠারাঘাত করলেন।

আর্দ্রা নক্ষত্র-পৃথিবী থেকে প্রায় ৩০০ আলোকবর্ষ দূরে। (প্রতি সেকেন্ডে আলো ১ লাখ ছিয়াশি হাজার মাইল বেগে চলতে চলতে ১ বছরে (৩৬৫ দিন x ২৪ x ৬০ x ৬০ যত দূর যাবে (৫০.৮৮ × ১০১২ মাইল) ততটুকু দূরত্বকে ১ আলোক বর্ষ বলে।)

সেখানে বসে যদি কোন দর্শক আজ, এই মুহূর্তে ঢাকা শহরকে দেখতে পায় তবে সে দেখতে পাবে নবাব শায়েস্তা খানকে । কারণ ঐ সময় পৃথিবী থেকে যে আলোকরশ্মি রওয়ানা হয়েছিল আজই তো তা আর্দ্রা- নক্ষত্রে পৌঁছালো।

আর্দ্রার নক্ষত্রের বদলে দর্শকটি যদি থাকে এন্ড্রোমিডা-গ্যালাক্সিতে তাহলে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে সে কোন ‘মানুষ’কে দেখতে পাবে না—মানুষ তখনও আসেনি পৃথিবীতে। দেখতে পাবে ম্যামথ আর স্যাবর টুথেড় খড়গ-দন্ত বাঘদের । তাহলে কেমন করে বলি অতীতের মুহূর্তটিকে কোনক্রমেই ফিরিয়ে আনা যাবে না?

সময় শ্লথগতি হওয়ার বিষয়ে আর একটা উদাহরণ দেয়া যাক । একটি রকেটে করে পাঁচজন যাত্রী নিয়ে স্বাতী নক্ষত্রের দিকে রওয়ানা দিন।

স্বাতী নক্ষত্র ‘বুটিশ’ মণ্ডলে এবং তার দূরত্ব তেত্রিশ আলোকবর্ষ

ধরা যাক, রকেটের গতিবেগ আলোর গতির খুব কাছাকাছি। তাহলে ঐ গতিবেগে ছুটলে আমাদের কল্পিত রকেটটি তেত্রিশ বছরের কিছু বেশি সময়ে ঐ স্বাতী নক্ষত্রে পৌঁছবে।

তৎক্ষণাৎ সে একই গতিবেগে পৃথিবীর দিকে রওয়ানা হলে ছেষট্টি বছরের কিছু পরে পৃথিবীতে ফিরে আসবে।

যেহেতু রকেটের গতিবেগ ছিল আলোর গতির কাছাকাছি, তাই নভোচারীদের ঘড়ি পৃথিবীর ঘড়ির তুলনায় অনেক ধীর গতিতে চলেছে।

ওদের কাছে এই ছেষট্টি বছর সময়কাল হয়তো এক মাসের বেশি মনে হবে না। তারা পৃথিবীতে ফিরে এসে দেখবে তাদের তরুণী পত্নীরা পলিতকেশা বৃদ্ধা। আর দু বছরের ছেলে ওদের চেয়ে চল্লিশ বছরের বড় দেখাবে।

স্বাতী নক্ষত্র ‘বুটিশ' মণ্ডলে এবং তার দূরত্ব তেত্রিশ আলোকবর্ষ

মোটকথা, এ যাবৎকাল ‘সময়’ সম্বন্ধে আমরা যে ধারণাটা পোষণ করে এসেছি সেটাই ভ্রান্ত । ‘কাল’ কোন একমুখী সমগতিতে নিরবচ্ছিন্ন ধারায় প্রবহমান স্রোতের মত নয়। ‘কাল’ হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মান্ডের একটি অঙ্গ, যার অপর অঙ্গ হচ্ছে ‘স্থান’। স্থান ও কাল অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত—একে অপরের উপর নির্ভরশীল, একে অপরের দ্বারা প্রভাবিত ।

আপেক্ষিকতাবাদ থিয়োরী বলছে, কোন দুটি বিন্দুর দূরত্ব বোঝাতে ‘সময়’-এরও একটা ভূমিকা আছে।

আইনস্টাইন জানালেন, দূরত্ব মাপা যাবে দুটি বিন্দুর নয়, দুটি ঘটনার যে দুটি ঘটনা ঘটেছে ত্রি-মাত্রিক (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা) স্থানিক দূরত্বে এবং এক-মাত্রিক (একদিকে) সময়ের ব্যবধানে। টেনসর ক্যালকুলাসে এ ধরণের অঙ্ক কষা হয়।

সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ ও সময়

সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদে অভিকর্ষ শক্তির ব্যাখ্যা আছে ভাল করে । আমরা ইতিপূর্বে যা আলোচনা করেছি তা হল বিশেষ আপেক্ষিক থিয়োরী-বিশেষ বিশেষ সমস্যার জবাব ।

একটি গোলাকার বস্তুর (পৃথিবী, তারা) পৃষ্ঠদেশে কোন ঘটনার ‘সময় ও স্থান’ যদি বৃত্তাকারে আগের অবস্থানে ফিরে আসে তবে এজন্য ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেমন ঘটবে, তেমনি ঘটনাকে এমনভাবে বৃত্তে স্থাপন করা যাবে যাতে ঐ ঘটনা আর ঘটবে না।

সাধারণ আপেক্ষিক সূত্রে বলা হয় অভিকর্ষ ক্ষেত্রে সময় ধীরে বহে। অভিকর্ষের শক্তিতে স্থান বেকে যাওয়াতে কালও তার গতি হারায়।

পাহাড়ে উঁচু নিচু ১ মাইল পথ চলা আর সমতল স্থানে ১ মাইল পথ চলার যে পার্থক্য অনেকটা এরকমই ঐ থিয়োরীতে বলা হয়েছে। পাহাড়ে ১ ঘন্টায় ১ মাইল গেলে মনে হবে অনেকক্ষণ ধরে পথ চলছে পথিক। পথ শেষ হচ্ছে না ।

নিউটনের ধারণা

সূর্য অভিকর্ষের টানে পৃথিবীকে টানছে বলেই পৃথিবী ক্রমাগত তাকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে, এ ধারণাটাই ভুল।

আইনস্টাইন বললেন—আসলে সূর্যের ভর তার সন্নিকটস্থ স্থান-কাল সম্পৃক্ত বিশ্বকে বাঁকিয়ে দিচ্ছে; আর সেই বক্র মহাকাশে পৃথিবীর ঐ ভাবে চলা ছাড়া উপায় নেই।

সোজা কথায় মহাকাশে যেখানে যেখানে বড় বড় নক্ষত্র আছে, গ্যালাক্সি আছে, সেখানেই মহাকাশ একটু বেঁকেছে বা তুবড়েছে।

এখানে ‘মহাকাশ’ মানে শুধু স্থানবাচক মহাশূন্য নয়, স্থান ও কালের সম্পৃক্ত বিশ্বাকাশ। মহাকাশের তো উপর-নিচ নেই, তাই তুবড়েছে বা টোল খেয়েছে না বলে ফুলে উঠেছে বললেও ভুল হয় না ।

অভিকর্ষ ক্ষেত্র যদি খুব শক্তিশালী হয় তা হলে অদ্ভুত অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে থাকবে। কোন তারকা ধ্বংস হয়ে গেলে পর যখন কৃষ্ণবিবরে পরিণত হয় (এ প্রসঙ্গে পরে আমরা আসব) তখন এর ভিতর থেকে আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না।

কৃষ্ণবিবর উৎসের তারাটির কেন্দ্র থেকে ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের (critical radius ) মধ্যে কোন বস্তুকে আসতে অসীম সময় লেগে যাবে—

এটা বাইরের কোন দর্শকের কাছে মনে হবে। কিন্তু বস্তুটির নিজের কাছে সময় লাগবে সামান্য মুহূর্ত মাত্র। কৃষ্ণবিবরের অভ্যন্তরে স্থান ও কাল থেকে যায়।

কালো গহ্বর বা কৃষ্ণবিবর (ব্ল্যাক হোল)

সাম্প্রতিককালে জ্যোর্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে যে বিষয়টিকে নিয়ে বেশ উত্তেজনাকর আলোচনা চলছে তা হল ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, সূর্যের ভরের সমান বা তার দেড়গুণ পর্যন্ত ভর বিশিষ্ট তারাগুলি জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে যখন সব হাইড্রোজেন জ্বালানি পুড়িয়ে ফেলে, তখন এদের কেন্দ্রের বিক্রিয়াজনিত বিকিরণ চাপ কমে যেতে থাকে;

কালো গহ্বর বা কৃষ্ণবিবর (ব্ল্যাক হোল)

ফলে মহাকর্ষ ও বিকিরণ বলের পার্থক্য বাড়তে থাকে। মহাকর্ষ বলের ঠেলায় কেন্দ্রের পদার্থ আরো সঙ্কুচিত হয় এবং বিকিরণ চাপে বাইরের গ্যাসীয় আবরণ বাড়তে বাড়তে কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কেন্দ্রটি তখন সাদা বামন তারায় পরিণত হয়;

এ অবস্থায় তারাটির আয়তন আগের আয়তনের একশত ভাগের একভাগে পরিনত হয়।

তারাটির কেন্দ্রকণার ঘনত্ব এত বেশি বৃদ্ধি পায় যে

মহাকর্ষ চাপে পরমাণুর কেন্দ্রকণার ইলেকট্রন আবরণ ভেঙে পড়ে, এক সময় জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে তারাটির ভিতরের তাপ বিকীর্ণ হতে থাকে এবং সে তাপও একদিক নিঃশেষ হয়ে যায়।

তারাটি শীতল কালো বামন বা বেটে তারায় পরিণত হয় । এমতাবস্থায় যদি একটি নক্ষত্রের ভর সূর্যের ভরের আড়াইগুণেরও বেশি থেকে যায়, তাহলে কোন প্রাকৃতিক শক্তিই ঐ নক্ষত্রটিকে আর এর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারবে না।

অভিকর্ষ বলের চাপে নক্ষত্রটি ক্রমাগত গুটিয়ে যেতে থাকবে—আয়তন ক্ষুদ্র থেকে আরো ক্ষুদ্রতর হবার দিকে এগিয়ে চলবে দ্রুত গতিতে।

কেন্দ্রের দিকে ধ্বসে পড়তে থাকা তারার আয়তন যত কমে আসবে এর অভিকর্ষ বলের পরিমাণও ক্রমান্বয়ে বাড়বে। আবার অভিকর্ষের পরিমাণ যত বাড়তে থাকে, নক্ষত্রের ধ্বসও তত দ্রুত বাড়তে থাকে।

আইনস্টাইন ১৯১৬ সালে বলেছিলেন যে একটি নক্ষত্রের আলো সূর্যের পাশ ঘেষে যাবার সময় সূর্যের জোরালো অভিকর্ষের টানে আলোক রেখাটি বেকে যাবে-সোজা কথাটা হল এই যে, অভিকর্ষের প্রভাবে ক্ষেত্র বক্রাকৃতি লাভ করে;

শুধু ক্ষেত্রও নয়, সময়ের গতিও মন্থর হয়ে আসে, সময়ও যেন বক্রতা লাভ করতে থাকে। কোন অভিকর্ষ বল যত জোরালো হতে থাকবে এর ক্ষেত্রে এই ক্ষেত্র ও সময়ের বক্রতাও তত বেড়ে চলবে।

এ জাতীয় একটা পরিস্থিতি যত চলতে থাকবে, নক্ষত্রটির অভিকর্ষের মাপটাও বিরাট হয়ে উঠবে। ধ্বসে পড়ার সর্বশেষ পর্যায়ে নক্ষত্রটির অভিকর্ষের মাপ এমন এক চরম মাত্রায় (critical stage) গিয়ে পৌঁছল যে, ক্ষেত্র ও সময়ের বক্রতাও তার সর্বোচ্চ মাত্রাকে গেল ছাড়িয়ে, আলোও তার উৎসের মধ্যে বন্দী হয়ে পড়ল।

সময়ের গতি হয়ে পড়ল চূড়ান্তভাবে স্তব্দ

বাইরের জগতের সঙ্গে বস্তুটির সমস্ত যোগাযোগের সূত্র হারিয়ে গেল। মহাবিশ্বের কোল থেকে বস্তুটি যেন চিরকালের মত অদৃশ্য হয়ে গেল । অদৃশ্য বস্তুটিই হল কৃষ্ণবিবর।

সূর্যের তিনগুণ ভর বিশিষ্ট একটি নক্ষত্রের ব্যাস যখন অভিকর্ষবলজনিত সংকোচনের প্রভাবে মাত্র ১৭ কিলোমিটারে এসে দাঁড়ায়, তখন মহাবিশ্ব থেকে বস্তুটির পুরোপুরি অন্তর্ধান ঘটে। ঐ বস্তুটির ভিতরে কি ঘটনা ঘটে, তা আমাদের জানার উপায় নেই !

কেননা আলো বা বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে কোন সংকেতই ঐ বস্তুটি থেকে আমাদের কাছে পৌছায় না।

এক বিরাট অন্ধকারের জগতের ভেতর তলিয়ে বসে আছে এই অতি ক্ষুদ্রকায় নক্ষত্রটি, তাই এর নাম কৃষ্ণবিবর। কোন মানুষ তার নিকটে গেলে রকেটে চড়ে সেখান থেকে সে আর কোনদিন ফিরে আসতে পারবে না।

কোন সিগনালও পাঠাতে পারবে না সে। কোনো সিগনালই মহাকর্ষ বল কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে না। তাকে একটা কালো গহ্বরের ভিতরে প্রবেশ করতে দেখা যাবে ।

তারপরে সে চিরদিনের জন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে

আমাদেরই ছায়াপথেই নাকি দশ কোটি কালো গহ্বর অদৃশ্যভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হিসাব করে দেখা গেছে যে, কালো গহ্বর পর্যায়েই মহাকর্ষজনিত সংকোচন শেষ হয়ে যায় না।

এরপর কালো গহ্বরও ক্রমাগত সঙ্কুচিত হতে হতে প্রায় শূন্য আয়তনের পদার্থে পরিনত হয়। অত্যাধিক ভর বিশিষ্ট তারার সৃষ্ট কালো গহ্বর, নিজ মহাকর্ষ চাপে এত বেশি সঙ্কুচিত হতে পারে যে, শেষ পর্যন্ত একটা পরমাণুর আকার ধারণ করে এবং একটা গাণিতিক বিন্দুতে পরিনত হয়।

কালো গহ্বরের কেন্দ্রে অবস্থিত এই অতি ক্ষুদ্র, অতি সঙ্কুচিত বস্তুকে ‘এককত্ব’ (singularity) বলা হয়। এই এককত্ব, কালো গহ্বর দ্বারা বেষ্টিত । মাঝখানে কয়েক কিলোমিটার জায়গা সম্পূর্ণ খালি । কোন বস্তু সে জায়গার মহাকর্ষ কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে না ।

একটি কৃষ্ণ গহ্বরের কেন্দ্রে Singularity রূপী একক বিন্দুতে চাপ

বস্তুর ঘনত্ব এবং ক্ষেত্রও সময়ের বক্রতা সবই পৌঁছায় প্রায় এক অসীম অঙ্কে। সেখানে প্রতি ঘন ইঞ্চি পরিমিত ক্ষেত্রে বস্তুর ঘনত্ব দাঁড়াতে পারে কয়েক লক্ষ কোটি টন। পদার্থ যে সেখানে সত্যি কি অবস্থায় রয়েছে, তা বিজ্ঞানীদের জানা নেই; কারণ বর্তমানের কোন জ্ঞান, সূত্র দিয়ে এটা অনুধাবন করা যায় না।

একটি কৃষ্ণ গহ্বরের ভেতর যদি আমরা যাবার চেষ্টা করি তাহলে প্রথমে একটি শীর্ণ আলোক বৃত্তকে (Photon Sphere) কৃষ্ণ গহ্বরটির ওপর পরিক্রমারত অবস্থায় আমরা দেখতে পাব।

তারপরই আমরা প্রবেশ করব ঘটনারূপী দিগন্তের বৃত্তের মধ্যে এবং সঙ্গে সঙ্গে বাইরের বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। সর্বশেষে, এক সেকেন্ডের এক লক্ষ ভাগ সময়ের মধ্যে আমরা কৃষ্ণ গহ্বরের একেবারে কেন্দ্রের ওপর (Singularity) গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ব—

যেখানে ক্ষেত্র ও সময়ের এক অসীম বক্রাকৃতির মধ্যে সমস্ত বস্তুর অস্তিত্ব যেন একবারে লোপাট হয়ে বসে আছে। সোয়াতচাইল্ড নামে এক পদার্থবিদ এই তত্ত্বের ক্ষেত্র সম্পর্কিত সমীকরণগুলোর সমাধান আবিষ্কার করেছিলেন।

যার উপর ভিত্তি করে কৃষ্ণ গহ্বরের মডেল নির্মাণ করা হয়। এটা হচ্ছে এমন একটি বস্তু, যা রয়েছে স্থির অবস্থায়, চেহারাটা যার বর্তুলাকৃতি, আপন অক্ষের চারপাশে যে ঘূর্ণমান নয় এবং যার কোনো বৈদ্যুতিক চার্জ নেই।

এখন প্রশ্নটা হল এমন একটা কৃষ্ণগহ্বর আকাশে কেমন করে খুঁজে পাওয়া যাবে?

কালো গহ্বরের পাশে যদি কোন তারা থাকে, তাহলে কালো গহ্বরের আকর্ষণে সেই তারা থেকে পদার্থ ছিটকে বেরিয়ে গিয়ে, কালো গহ্বরের চারপাশে একটা চাকতির আকারে জমা হতে থাকে এবং কালো গহ্বরের ভিতরে গিয়ে অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত এক্সরে বিকিরণ করতে থাকে।

এতেই কালো গহ্বরের অস্তিত্ব জানা যায়। ১৯৯০ সনে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক মহাকাশে হাবল দূরবীন স্থাপন করার পর ঐটির সাহায্যে এ পর্যন্ত কয়েক ডজন ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব প্রমাণিত করা গেছে ।

অন্যদিকে একটি আবর্তনশীল কৃষ্ণ গহ্বরের চারপাশে ক্ষেত্র ও সময়ের ধর্মাবলী কিরূপ নেবে, তা ১৯৬৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানী রয়, পি, কার সমাধান করেন।

এটা একটা অবিশ্বাস্য আবিষ্কার। এ জাতীয় একটি কৃষ্ণগহ্বর আমাদের বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ সাধন করতে পারে অজানা অসংখ্য বিশ্বের। যোগাযোগের মাধ্যম হল White holes বা শ্বেত গহ্বর। এদেরও রয়েছে কেন্দ্রবিন্দু বা Singularity এবং ঘটনারূপী দিগন্ত বৃত্ত (event horizon)। অন্য বিশ্ব থেকে বস্তু বা শক্তি এই শ্বেত গহ্বরের মাধ্যমে আমাদের বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করতে পারে বা সোজা কথায় চালান হয়ে আসতে পারে।

শ্বেত গহ্বর হল মহাবিশ্বের বস্তু এবং শক্তির এক নিরবচ্ছিন্ন উৎস। শ্বেত গহ্বরের ভেতর থেকে জোরালো তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তি সৃষ্টি হচ্ছে।

কালো গহ্বরের জোয়ার ব্যাসার্ধ (Tidal Radius)

কোন বস্তু কালো গহ্বর থেকে একটা বিশেষ দূরত্বে এসে পড়লে, মহাকর্ষ বলের প্রভাবে বস্তুটিতে জোয়ার দেখা দেয়। এই দূরত্বকে কালো গহ্বরের জোয়ার ব্যাসার্ধ ( tidal radius ) বলে।

বস্তুটির পদার্থ কালো গহ্বরের দিকে স্ফীত হয়ে উঠে এবং সেদিকে অগ্রসর হয়ে তার চারদিকে চাকতির মত জমা হতে থাকে এবং ঘুরতে ঘুরতে এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়, যেখান থেকে সারাসরি কালো গহ্বরের ভিতরে গিয়ে পড়ে। এই জায়গাটিকে ঘটনা দিগন্ত (event horizon) বলে।

সুতরাং দেখা যায় যে জোয়ার ব্যাসার্ধের বাইরে থাকলে বিপদের আশঙ্কা নাই। ‘ঘটনা দিগন্তের’ ভিতরে ক্রমে পড়লে আর রক্ষা নাই, একেবারে অতল কালো গহ্বরের ভিতর গিয়ে পড়তে হবে । প্রত্যাবর্তনের কোন আশাই থাকবে না একেবারে অদৃশ্য হয়ে যাবে ।

কালো গহ্বর সাধারণ তারার চাইতে অনেক অনেক ছোট এবং সংখ্যায়ও কম । তাই তাদের সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষ হবার সম্ভাবনা অত্যন্ত বিরল।

এককত্বের চারদিকে ঘুরতে থাকবে

কোন মহাশূন্যযানের চালক যদি কোন কালো গহ্বরের ঘটনা দিগন্তে গিয়ে পৌঁছোয় তাহলে সে তার মহাশূন্যযান সমেত সঙ্গে সঙ্গেই কেন্দ্রীয় অতি ক্ষুদ্র এককত্বে বা কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছুবে না, বরং এককত্বের চারদিকে ঘুরতে থাকবে।

একটি গর্ত আবর্তিত হচ্ছে, এটা ভাবাই যায় না। প্রকৃত পক্ষে এর অর্থ হচ্ছে, কেন্দ্রীয় এককত্ব কোন কিছুকে তার নিজের দিকে আকর্ষন করে না? বরং অনবরত পাশের দিকে আকর্ষণ করে। ফলে বস্তুটি কুণ্ডলিতভাবে গহ্বরের ভিতরে প্রবেশ করে।

বস্তুটি যখন গহ্বরের যথেষ্ট ভিতরে এককত্বের নিকটে গিয়ে পৌঁছায়, তখন তার পার্শ্ববেগ বস্তুটিকে এমন কেন্দ্রাতিগ বল প্রদান করে যে, সেটা এককত্বের মহাকর্ষ বলের সাথে সমতায় উপনীত হয়। এই অবস্থায় তার আর কেন্দ্রের এককত্বে পৌঁছে ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার ভয় থাকে না তবে আমাদের এই বিশ্বে ফিরে আসারও সম্ভাবনা থাকে না ।

কালো গহ্বরের তত্ত্বে আরো বলা হয় যে, বস্তুটির এই নিরাপদ আশ্রয়, অন্য বিশ্বের অনুরূপ অংশের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারে। সেই অংশে অন্য বিশ্বের সাদা গহ্বরের কেন্দ্র অবস্থিত। এটি কালো গহ্বরের সম্পূর্ণ বিপরীত।

কালো গহ্বরের ঘটনা দিগন্তের ভিতরে গিয়ে পৌঁছলে বস্তু কেন্দ্রের চারদিকে ঘুরতে থাকে। আর সাদা গহ্বরের ঘটনা দিগন্তের ভিতরে পড়লে, বস্তুটি বাইরের দিকে নিক্ষিপ্ত হয়।

ব্ল্যাকহোল কি মৃত্যুর পরবর্তী আরেক জগৎ নাকি ভগবান বিষ্ণুর চোখের মণি

ব্ল্যাক হোল নিয়ে দূরকল্পনার শেষ আর নেই। কোন নভোচারী যদি গ্যালাক্সির গহীনে যেতে যেতে প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবীতে সিগন্যাল পাঠাতে থাকে হঠাৎ যদি সে কৃষ্ণবিবর বা মহাশূন্যে হারিয়ে যাওয়া এমন কোন অন্ধকার তারার সোয়ার্চশিল্ড ব্যাসার্ধের ভিতরে এসে পড়ে তখন পৃথিবীতে তার বন্ধুরা আতঙ্কের সঙ্গে দেখবে যে, নভোচারীর সিগন্যাল আর প্রতি সেকেন্ডে আসছে না, আসছে অনেক দেরী করে এবং মাঝে মাঝে . .

তারপর ঘণ্টার পরে, বৎসর পরে, শতাব্দী পরে . . . তারপর কোনদিন আর কোন সিগন্যাল আসবে না । আর ঐ দিকে নভোচারী নিজের ঘড়ি দেখে প্রতি সেকেন্ডেই পাঠিয়ে যাচ্ছে সিগন্যাল ।

এ রকম ক্ষুদে তারা শুধু অভিষ্ট বলের মাধ্যমে বহিঃবিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে । এ উদাহরণটাকে তুলনা করা যেতে পারে জীবন থেকে মৃত্যুতে গমন করার সঙ্গে।

পৃথিবীর লোকদের কাছে ঐ নভোচারী মৃত, সে আর ফিরে আসবে না কোনদিন। আর নভোচারী নিজে কৃষ্ণ বিবরে চিরদিনের জন্য বন্দী হয়ে পড়ল। এখানে তার মৃত্যু নেই । যুগে যুগে দার্শনিকেরা বলে গেছেন মৃত্যু হচ্ছে জীবনের এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় গমন করা মাত্র। এটাই এখানে প্রমাণিত হচ্ছে।

‘অহং’ এর শেষ আবাসস্থল ঐ এককবিন্দু

জ্যোর্তিবিদদের কাছে সোয়াশ্রীডের ব্যাসার্ধ পর্যন্তই দেশ-কালের সীমানা তারপর কৃষ্ণ বিবরের ভিতরে সাইকোবাইওলজিক্যাল বাস্তব চেতনা নভোচারীর অবস্থান—’অহং’ এর শেষ আবাসস্থল ঐ এককবিন্দু। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের সঙ্গে পারিপার্শ্বিক জগতের পারস্পরিক সম্পর্কের একটা খুব উঁচু ধরণের উদাহরণ হচ্ছে বক্ষ্যমান তত্ত্বটি ।

নভোচারী ঘটনা দিগন্তে ঢুকার সময় শেষবারের মত কলসীর কোণার উপর দিয়ে বাইরে যখন তাকাবে সে দেখবে বিশ্বব্রহ্মান্ডের শেষ পরিণতি-ভবিষ্যত, আর পিছন পানে ফিরলে দেখতে পাবে বিশ্বের অতীত। কয়েক মুহূর্তের ভিতর তারপর সে কৃষ্ণবিবরের গহন অতলে হারিয়ে যাবে চিরদিনের মত।

এটাই হচ্ছে মানবজীবনের শেষ ট্রাজেডি- মহাকালের অজানা রহস্য। সময় তার বিচিত্র যাত্রাপথে চলতে শুরু করার পর শুধু এখানে এসে নিজেকে হারিয়ে ফেলে-স্তব্দ হয়ে যায় তার গতি। মৃত্যু ঘটে তার।

বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বহাল তবিয়তে বর্তমান

মহাপ্রলয়ের পর একবার মার্কন্ডেয় পণ্ডিত বের হলেন বিশ্ব পরিভ্রমণে । সমুদ্রে পানির উপর ভাসমান এক বিরাট পুরুষকে শয়ান দেখে তিনি তার নাভী দিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখেন সেখানে পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বহাল তবিয়তে বর্তমান।

ঐ পুরুষটি ছিল স্বয়ং নারায়ণ- ভগবান বিষ্ণু। মার্কণ্ডেয়র প্রশ্নের জবাবে বিষ্ণু জানান বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাস। কালের হাত থেকে ব্রহ্মারও রেহাই নেই। বিষ্ণু আরও দেখালেন নিজের চোখের কালো মনির ভিতর দিয়ে ঢুকে আবার বের হলেন তিনি।

মার্কণ্ডেয় মুনি দেখলেন ভগবান বিষ্ণুর চোখের ভিতর যেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রবেশ দ্বার। বিষ্ণুর (লর্ড কৃষ্ণ স্বয়ং-তার এক রূপ) চোখের কালো মনিটুকু কি কোন ব্ল্যাক হোল?

ঐ ব্ল্যাক হোল দিয়ে ঢুকে তারপর অন্য বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে উপনীত হওয়া যায়? ভগবান বিষ্ণু আরো দেখিয়েছিলেন তার পেটের ভিতরে এরকম অসংখ্য বিশ্বব্রহ্মান্ড ঘুরে বেড়াচ্ছে সীমাহীন সেই বিশ্বে জীবজগৎ রয়েছে সবই চলছে মহাকালের অমোঘ নিয়তি অনুসারে ধ্বংশ হচ্ছে, তারপর সৃষ্টি, বিবর্তন-এ খেলা মায়ার খেলা। বুঝতে বেজায় কষ্ট।

প্রিয় পাঠক, GulfHive এর বিংশ শতাব্দীতে পদার্থবিদ্যার দর্শনে সময়ের ধারণা আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনাদের সময়ের বিচিত্র কাহিনী ও মহাকালের অজানা রহস্য তথ্য দেওয়ার জন্য প্রকাশিত হয়েছে। এই পোস্ট এর বিষয়ে আপনার কোনো অভিযোগ বা পরামর্শ থাকলে নিচের বাটনে ক্লিক করে কমেন্ট করুন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনি চাইলে ফেসবুকে আমাদের সাথে কানেক্ট থাকতে পারেন।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *