Sign In

সাধারণ ভগ্নাংশ এবং ভগ্নাংশের তুলনা

সাধারণ ভগ্নাংশ এবং ভগ্নাংশের তুলনা

প্রিয় শিক্ষকগণ, আজকে আমরা জানবো সাধারণ ভগ্নাংশ এবং ভগ্নাংশের তুলনা সম্পর্কে। পূর্বের মডিউলে স্বাভাবিক সংখ্যা ও অঙ্কপাতন থেকে অঙ্কপাতন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণনা রীতি, বিভাজ্যতা, মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা, লসাগু এবং গসাগু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।

এই মডিউলে প্রথম অধ্যায়ের পরবর্তী অংশ “সাধারণ ভগ্নাংশ এবং দশমিক ভগ্নাংশ” নিয়ে আলোচনা করা হবে। আপনি চাইলে শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতা সম্প্রসারণ আর্টিকেলটি পড়ে নিতে পারেন।

সাধারণ ভগ্নাংশ এবং ভগ্নাংশের তুলনা

মডিউল ১ এর শিক্ষাক্রম আলোচনায় Scaffolding বা শিক্ষার্থীর শিখন দৃঢ়করণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছিল। এই দৃঢ়করণের জন্য শিক্ষাক্রমে বিষয়বস্তু এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেখানে বিষয়ের পর্যায়ক্রমিক বিস্তার ঘটানো হয়েছে। বিষয়টি নিম্নরূপ-

সাধারণ ভগ্নাংশ এবং ভগ্নাংশের তুলনা,

এ শিক্ষাক্রমের মূল ধারণা হলো কোনো বিষয় পর্যায়ক্রমে শিখলে ঐ বিষয়টির শিখন দীর্ঘস্থায়ী হয়। যেমন- বিভিন্ন শ্রেণিতে নতুন নতুন বিষয় না পড়িয়ে যদি একই বিষয় শ্রেণি অনুযায়ী ধীরে ধীরে বিস্তৃত করে পুনরাবৃত্তি করা হয়, তবে শিক্ষার্থীদের শিখন দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং তাদের জ্ঞানের বিস্তার ও গভীরতা উভয়ই বৃদ্ধি পাবে।

বিষয়ভিত্তিক আলোচনা (সাধারণ ভগ্নাংশ এবং ভগ্নাংশের তুলনা)

শিক্ষার্থীরা ভগ্নাংশের প্রাথমিক ধারণা, অর্থাৎ ভগ্নাংশ কী, কত ধরনের ভগ্নাংশ রয়েছে, সেগুলো কী কী প্রভৃতি বিষয় নিয়ে ধারণা পূর্বের শ্রেণিগুলোতে পেয়েছে।

ভগ্নাংশের আলোচনাটিও তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে সেভাবেই সাজানো হয়েছে যেখানে এর আলোচনার পর্যায়ক্রমিক বিস্তার ঘটেছে। সে অনুযায়ী নিচের ক্রমানুসারে এই বিষয়টি সাজানো হয়েছে –

সাধারণ ভগ্নাংশ এবং ভগ্নাংশের তুলনা

ভগ্নাংশের আলোচনায় যে বিষয়গুলোতে আলোকপাত করা হবে সেগুলো হলো-

ক) ভগ্নাংশ কী

খ) ভগ্নাংশের প্রকারভেদ

গ) ভগ্নাংশের তুলনা

প্রথমে ভগ্নাংশের প্রাথমিক ধারণা দিয়েই আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। ভগ্নাংশ কথাটিকে যদি শিক্ষক বিশ্লেষণ করে বলেন, শিক্ষার্থীদের তা মনে থাকবে-

সাধারণ ভগ্নাংশ এবং ভগ্নাংশের তুলনা
ভগ্নাংশের ধারণা

ভগ্নাংশ কথাটির অর্থ হল ভগ্ন অংশ, অর্থাৎ কোন সম্পূর্ণ জিনিসের কিছু অংশ। এই ধারণাই গণিতেও ব্যবহার করা হয়। যেমন, একটি চকলেট বার যদি ৬ ভাগে ভাগ করা থাকে, আর তা থেকে যদি দুই ভাগ খাওয়া হয়, তাহলে একে বলা যায় যে, চকলেট বারের – অংশ খাওয়া হয়েছে।

আবার ভগ্নাংশের প্রকারভেদ সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া প্রয়োজন। ধরা যাক, একটি কেক চার ভাগে ভাগ করা আছে। তিনজন বন্ধু যদি ওই কেকটি খায়, তাহলে প্রত্যেকে ১/৪ কেকের অংশ করে খাবে।

তাহলে মোট 8/৩ খাওয়া হবে কেকের অংশ। আবার যদি ৫/8 আরও ২ জন যোগ দেয়, তাহলে কত অংশ খাওয়া হবে? তখন খাওয়া হবে কেকের 8 অংশ। কিন্তু কেক ভাগ করা হয়েছিল ৪ ভাগে। তাহলে – কীভাবে হয়?

সাধারণ ভগ্নাংশ

সাধারণ ভগ্নাংশ

এখানে সম্পূর্ণ একটি কেকের সবগুলো অংশ অর্থাৎ ৪ অংশ খাওয়া হয়েছে। আবার অন্য আরেকটি চার ভাগে ভাগ করা কেক থেকেও একটি অংশ খাওয়া হয়েছে। তাই কে এভাবেও লেখা যেতে পারে, ১০। এখানে তিন ধরনের ভগ্নাংশ পাওয়া গেল, এগুলোর ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে ৷

৩/৪ হল প্রকৃত ভগ্নাংশ, যেখানে লব ছোট, এবং হর বড়।

৫/৪ হল অপ্রকৃত ভগ্নাংশ, যেখানে লব বড়, এবং হর ছোট।

হল মিশ্র ভগ্নাংশ। অপ্রকৃত ভগ্নাংশের সম্পূর্ণ অংশকে যখন আলাদা করে লেখা হয়, তখন তাকে বলা হয় মিশ্র ভগ্নাংশ।

এভাবে ভগ্নাংশ কী এবং ভগ্নাংশের প্রকারভেদ সম্পর্কে বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে শিক্ষার্থীদের ধারণা দেওয়া যেতে পারে। এরপর ক্রমান্বয়ে ভগ্নাংশের তুলনা কীভাবে করা যায় এবং এ সম্পর্কিত সমস্যা সমাধান সংক্রান্ত আলোচনা করা যেতে পারে।

যেমন, একটি মালবাহী ট্রেন এবং একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের দৈর্ঘ্য সমান। কিন্তু মালবাহী ট্রেনে বগির সংখ্যা হল ৭. টি, এবং যাত্রীবাহী ট্রেনে বগির সংখ্যা হল ১০ টি। তাহলে মালবাহী ট্রেনের একটি বগি এবং যাত্রীবাহী ট্রেনের একটি বগির মধ্যে কোনটির দৈর্ঘ্য বেশি হবে?

ভিন্নহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশের তুলনা

ভিন্নহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশের তুলনা
চিত্রটি দেখলে বোঝা যাবে, মালবাহী ট্রেনের একটি বগির দৈর্ঘ্য বেশি।

অর্থাৎ, একে যদি ভগ্নাংশ আকারে প্রকাশ করা হয়, তাহলে, মালবাহী ট্রেনের একটি বগির দৈর্ঘ্য হল অন্যদিকে যাত্রীবাহী ট্রেনের একটি বগির দৈর্ঘ্য হল;

অতএব, এদের মধ্যে ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে,যদি দুটি ভগ্নাংশের লব একই হয়, তাহলে যে ভগ্নাংশের হর বড়, সেই ভগ্নাংশ ছোট হবে।

আবার, যদি দুটি ভগ্নাংশের হর একই হয়, তাহলে যে ভগ্নাংশের লব বড়, সেই ভগ্নাংশটি বড় হবে। যেমন, দুটি সমান আয়তক্ষেত্র যদি ৫ ভাগে ভাগ করা হয়, তাহলে ৪/৫, ৩/৫ থেকে বড় হবে। নিচের ছবিটি দেখলে বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে৷

সাধারণ ভগ্নাংশ এবং ভগ্নাংশের তুলনা শিখন-শেখানো

উপরোক্ত আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে একটি পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করলে তা কেমন হবে তা এই পর্যায়ে আলোচনা করা হল। শুরুতে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষাক্রমে ভগ্নাংশের শিখনফল-এ কী রয়েছে তা দেখা যাক-

শিখনফলে বলা হয়েছে, এই পাঠ শেষে শিক্ষার্থীরা সাধারণ ভগ্নাংশ এবং দশমিক ভগ্নাংশের গসাগু এবং লসাগু নির্ণয় করতে পারবে। সাধারণ ভগ্নাংশ ও দশমিক ভগ্নাংশের সরলীকরণ করে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারবে।

ষষ্ঠ শ্রেণির পূর্বের শ্রেণিগুলোতেই মূলত ভগ্নাংশের ধারণা, প্রকারভেদ, যোগ, বিয়োগ, গুণ এবং ভাগ ইত্যাদি ধারণাগুলো দেওয়া হয়েছে। ভগ্নাংশের গসাগু ও লসাগুর ধারণাটি নতুন। তাই শিখনফলে শুধু এই অংশটুকুর উল্লেখ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেহেতু এই বিষয়গুলো পূর্বোক্ত শ্রেণিগুলোতেই পেয়েছে, তাই এই বিষয়ের পাঠদানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে প্রচুর অনুশীলন করানোর সুযোগ শিক্ষকের রয়েছে।

সাধারণ ভগ্নাংশ পূর্বজ্ঞান যাচাই

শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন উদাহরণ ও প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞান যাচাই করতে পারেন৷ যেমন, ভগ্নাংশের ধারণা দেওয়ার জন্য উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে,

চার বন্ধু মিলে একটি তরমুজ কিনে সমানভাগে ভাগ করে নিলে প্রত্যেকে তরমুজের কতটুকু অংশ ভাগে পাবে ? এ ধরনের কোন প্রশ্নের মাধ্যমে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে।

ভগ্নাংশের তুলনা পাঠদান কার্যক্রম

এরপর শিক্ষক ভগ্নাংশের ধারণা, শ্রেণিবিভাগ, ভগ্নাংশের তুলনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় করবেন। এখানে লক্ষণীয় পাঠদানে শিখন শেখানো পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।

বিষয় অনুযায়ী কোন পদ্ধতি বা কী কী উপায়ে বিষয়টি উপস্থাপন করলে শিক্ষার্থীদের শিখনকে সহজ এবং স্থায়ী করবে সেটি অবশ্যই শিক্ষককে বিবেচনা করতে হবে।

শিক্ষা উপকরণঃ সাধারণ ভগ্নাংশ এবং ভগ্নাংশের তুলনা

ভগ্নাংশের ধারণা ও তুলনার পাঠে আমরা বেশকিছু শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে পাঠ উপস্থাপন করতে পারি। যেমন-

১। ছবি ব্যবহার করে গল্পের মাধ্যমে উপস্থাপন- শিক্ষক ছবি এঁকে নিয়ে আসতে পারেন, কিংবা বোর্ডে আঁকতে পারেন। মডিউল ২-এ দেখানো হয়েছিল গাণিতিক সমস্যাকে ছবির মাধ্যমে উপস্থাপন করে কীভাবে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে সংযুক্ত করা যায়।

২। বোর্ড, খাতা কলমের ব্যবহার- সচরাচর আমরা বোর্ড এবং খাতা কলম শ্রেণিকক্ষে ব্যবহার করে থাকি। এগুলোর যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমেও আকর্ষণীয়ভাবে পাঠ উপস্থাপন করা যায়৷

৩। পাঠ সংশ্লিষ্ট ভিডিও প্রদর্শন করে- পাঠ সংশ্লিষ্ট কোন ভিডিও প্রদর্শন করা যেতে পারে। যেমন, এখানে পূর্ণসংখ্যার ধারণা সংক্রান্ত ভিডিওর কোন অংশ ব্যাখ্যা করে আলোচনা করতে পারেন।

নিচের ভিডিওতে সাধারণ ভগ্নাংশ এবং ভগ্নাংশের তুলনা শেখানোর বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রিয় পাঠক, GulfHive এর সাধারণ ভগ্নাংশ এবং ভগ্নাংশের তুলনা আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনাদের রিচ টু টিচ: গণিত শিখন-শেখানো (ষষ্ঠ শ্রেণি) অনলাইন কোর্স তথ্য দেওয়ার জন্য প্রকাশিত হয়েছে। এই পোস্ট এর বিষয়ে আপনার কোনো অভিযোগ বা পরামর্শ থাকলে নিচের বাটনে ক্লিক করে কমেন্ট করুন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনি চাইলে ফেসবুকে আমাদের সাথে কানেক্ট থাকতে পারেন।

সাধারণ ভগ্নাংশ এবং ভগ্নাংশের তুলনা কুইজ

প্রশ্ন-১. নিচের কোনটি ‘শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন’ এর অন্তর্ভুক্ত নয়?

ক. প্রশ্নোত্তর

খ. বোর্ডে বা খাতায় লিখতে দেওয়া

গ. একক বা দলীয় কাজ

ঘ. পাঠসংশ্লিষ্ট ভিডিও দেখা

প্রশ্ন-২. Scaffolding অর্থ কী?

ক. পূর্বজ্ঞান যাচাই

খ. শিক্ষার্থীর শিখন দৃঢ়করণ

গ. শিক্ষার্থীকে সাহায্য করা

ঘ. মূল্যায়ন

প্রশ্ন-৩. শিক্ষার্থীরা ভগ্নাংশের ধারণা প্রথম পেয়েছে-

ক. তৃতীয় শ্রেণিতে

খ. চতুর্থ শ্রেণিতে

গ. পঞ্চম শ্রেণিতে

ঘ. ষষ্ঠ শ্রেণিতে

ভগ্নাংশের যোগের কথার সমস্যা – Fraction Addition word problem

ভগ্নাংশের বিয়োগের কথার সমস্যা

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *