Sign In

মহানবীর শিক্ষানীতি কেমন ছিল

মহানবীর শিক্ষানীতি কেমন ছিল

চলুন জেনে নেই কেমন ছিল মহানবীর শিক্ষানীতি কেমন ছিল। চলুন জেনে নেই কেমন ছিল মহানবী হযরত মুসা আঃ সালামের শিক্ষানীতি। মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত রাসুল তিনি মহান আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক দিকভ্রষ্ট মানুষদের সঠিক পথে নিয়ে আসার জন্য সারাজীবন কাজ করে গেছেন।

তৎকালীন সময়ে শিক্ষার বিস্তারে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাম এর অবদান ছিল অনেক। আজকে আমরা জানার চেষ্টা করব কেমন ছিল মহানবীর শিক্ষানীতি এবং কীভাবে তিনি শিক্ষায় অবদান রাখার চেষ্টা করেছেন।

মহানবীর শিক্ষানীতি

আদর্শ জাতি গঠনের জন্যে প্রয়ােজন আদর্শ ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা। মহানবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে একটি বিশ্বজনীন জাতি গঠনের উদ্দেশ্যেই পাঠানাে হয়েছিল।

ইসলাম আল্লাহর মনােনীত একমাত্র জীবনাদর্শ। এ আদর্শের ভিত্তিতে মানবজীবন গঠনের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবীগণকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আদর্শের ভিত্তিতে একটি বিরাট মানবগােষ্ঠী গঠন করে তাকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।

শুধুমাত্র মানুষকে ইসলামের আদর্শ শিক্ষা দানের মাধ্যমেই তিনি এই বিরাট বিপ্লব সম্পাদন করেন। শিক্ষা দানের মাধ্যমে তিনি প্রথমে মানসিক বিপ্লব ঘটান। তারই ফলশ্রুতিতে সংঘটিত হয় নৈতিক ও সামাজিক বিপ্লব। ইসলামী বিপ্লব ছাড়া বিনা বল প্রয়ােগে শুধু শিক্ষা দানের মাধ্যমে পৃথিবীতে আর কোনাে বিপ্লব সংঘটিত হয়নি।

মহানবীর শিক্ষানীতি কেমন ছিল

তাঁর এই শিক্ষাভিত্তিক বিপ্লব পৃথিবীর এক অনন্য ইতিহাস। অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও মূর্খতার চরম অন্ধকারে নিপতিত একটি অধপতিত জাতিকে শুধুমাত্র আদর্শিক শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতিতে তিনি রূপান্তরিত করেন। গঠন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব দল।

এ ছিলাে একটি অনন্য আদর্শের অধিকারী মানব দল। কোনাে দিক থেকেই তাঁদের সাথে পৃথিবীর অন্য কোনাে মানব গােষ্ঠীর তুলনা হয়না।

এখানে আমরা আলােচনা করে দেখবাে, কোন্ ধরনের শিক্ষার মাধ্যমে মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অনন্য শ্রেষ্ঠ মানব দলটি গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন?

রসূলের শিক্ষানীতির কতিপয় দিক (মহানবীর শিক্ষানীতি কেমন ছিল)

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আল্লাহ্র নবী। সর্বশেষ নবী। নবুয়্যতি মিশনের সর্বশেষ আদর্শ। তার পরে এ বিশ্বে আর কোনাে নবীর আগমন ঘটবেনা।

তাই তার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’আলা নবুয়্যতি শিক্ষা মিশনের পূর্ণতা দান করেন। এ কারণে তাঁর প্রদত্ত শিক্ষা কাঠামাে ছিলাে সর্বদিক থেকে পূর্ণাংগ। মােলকলায় সমৃদ্ধ, সর্বাংগীন সুন্দর ও পরিপাটি। তার শিক্ষা ব্যবস্থা বিনির্মিত হয়েছিল মানব জাতির ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তির উদ্দেশ্যে।

তাঁর শিক্ষানীতি কোনাে বিশেষ জাতি গােষ্ঠীর জন্যে নয়, বরং বিশ্ব মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে রচিত হয়েছে। তা কোনাে বিশেষ যুগ বা কালের জন্যে রচিত হয়নি বরং সর্বকালের মানুষের মুক্তির দিশা তাতে রয়েছে। তাই তাঁর প্রদর্শিত শিক্ষানীতি সার্বজনীন ও চিরন্তন।

কিয়ামত পর্যন্ত এই চিরন্তন শিক্ষানীতির বিকল্প কোনাে শিক্ষানীতি মানবতার জন্যে সর্বাংগীন কল্যাণবহ হবেনা। তার দেয়া শিক্ষাই কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের শাশ্বত ও সার্বজনীন শিক্ষাদর্শ।

তাঁর শিক্ষানীতির মৌলিক বৈশিষ্টগুলাে নিম্নরূপঃ

১. জ্ঞানের মূল উৎস আল্লাহ তা’আলা (মহানবীর শিক্ষানীতি কেমন ছিল)

রসূলের শিক্ষানীতির প্রথম কথাই হলাে, জ্ঞানের প্রকৃত উৎস আল্লাহ্ তা’আলা। মানুষ ও বিশ্ব নিখিলের স্রষ্টা মহান আল্লাহ্ই সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞানের মূল উৎস ও প্রকৃত মালিক:

قل انما العلم عند الله (الملك : ۲۹، الأحقاف : ۲۳) “হে নবী বলােঃ আল্লাহই সমস্ত জ্ঞানের মালিক”

সূরা মুলকঃ ২৬, আহকাফ : ২৩

والله عليم حكيم (النساء : ۲۹) “আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহা প্রজ্ঞাময়”

সূরা নিসা : ২৬

গােপন প্রকাশ্য, দৃশ্য অদৃশ্য, মূর্ত বিমূর্ত সব কিছুর জ্ঞান তাঁর কাছে রয়েছে এবং একমাত্র তাঁরই কাছে আছে-

هو الله الذى إله إلا هو عالم التنيب والشهادة “তিনিই আল্লাহ যিনি ছাড়া আর কোনাে ইলাহ নেই এবং যিনি দৃশ্য অদৃশ্য
সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী।” (সূরা হাশরঃ ২২)

মানুষ এতােই সীমিত জ্ঞানের অধিকারী যে, তাঁর অসীম জ্ঞান সীমার নাগালের ধারে কাছেও পৌছুতে সক্ষম নয়। তবে তিনি ইচ্ছে করে মানুষকে যতােটুকু জ্ঞান দান করতে চান, সে কেবল ততােটুকু জানেঃ

ولا يبطون بشئ من علمه الا بما شاء “তাঁর জ্ঞাত বিষয়ের কোনাে কিছুই মানুষ নিজের আয়ত্ত্বাধীন করতে
পারেনা, তবে তিনি যতটুকু চান।”

সূরা বাকারা : ২৫৫

মানুষকে তিনিই জ্ঞান দান করেন। তবে মানুষকে তিনি সামান্য জ্ঞানই দান করেছেনঃ

وما تم من العلم إلا قلي”- (الاسراء : ۸۰) “তােমাদেরকে জ্ঞানের কোনাে অংশ দেয়া হয়নি, তবে সামান্য মাত্র।”

সূরা বনি ইসরাঈলঃ ৮৫

তাই, মানুষের কর্তব্য তার কাছেই জ্ঞানের জন্যে আরাধনা করা: বলাে: “প্রভু! আমাকে আরাে অধিক জ্ঞান দাও।” (সূরা তােয়াহাঃ ১১৪)

২. জ্ঞানের মূলসূত্র অহী ও নবুয়্যত (মহানবীর শিক্ষানীতি কেমন ছিল)

জ্ঞানের মূল উৎস আল্লাহ্ তা’আলা। আল্লাহ্ প্রদত্ত জ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান। এই প্রকৃত জ্ঞান লাভ করা ছাড়া মানুষের পক্ষে প্রকৃত কল্যাণ ও মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়।

আর আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জ্ঞান লাভের সূত্র হলাে অহী ও নবুয়্যত। আল্লাহ্ যুগে যুগে বিভিন্ন জাতির কাছে তাদের মধ্য থেকেই কিছু কিছু ব্যক্তিকে নবী রসূল নিযুক্ত করেছেন।

তাদের কাছে তিনি প্রকৃত জ্ঞান অবতীর্ণ করেন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তার মাধ্যমে তিনি মানবতার মুক্তির জন্যে পূর্ণ জ্ঞান অবতীর্ণ করেন।

যে পদ্ধতিতে নবীর কাছে জ্ঞান অবতীর্ণ করা হয়, তার পারিভাষিক নাম ‘অহী’। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী হবার কারণে তার মাধ্যমে অবতীর্ণ শিক্ষা সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ নিজেই গ্রহণ করেছেন।

মহানবীর শিক্ষানীতি কেমন ছিল

এ শিক্ষা আমাদের কাছে দুইভাবে সংরক্ষিত আছে। এক, কুরআনের মাধ্যমে। দুই, হাদীস বা সুন্নাতে রসূলের মাধ্যমে কুরআন সম্পূর্ণ নির্ভুল গ্রন্থ।

একেকটি শব্দসহ গােটা গ্রন্থটি সন্দেহ সংশয়ের সম্পূর্ণ উর্ধ্বে। এর প্রতিটি বাক্য ও শব্দ হুবহু [as it is] আল্লাহ্ নিকট থেকে অবতীর্ণ। এ হচ্ছে জ্ঞানের সম্পূর্ণ নির্ভুল ও অনাবিল সূত্র। হাদীস মূলত কুরআনেরই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ।

কুরআনকে নবুয়্যতি পন্থা ও দৃষ্টান্ত অনুযায়ী বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া হাদীসের মাধ্যমেই জানা সম্ভব। তাই ইহজগত ও পরজগতের সর্বাংগীন কল্যাণ লাভ করতে হলে মানুষকে অবশ্যি জ্ঞানের এই মূল সূত্রের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। এছাড়া বিকল্প নেই।

“এই কুরআন আমার কাছে অহীর মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়েছে, যেনাে আমি এর সাহায্যে তােমাদের সতর্ক করতে পারি। (সূরা আন’আম : ১৯]

وان تتلقى القران بين ان حكيم عليم، (النمل :6): “নিঃসন্দেহে তুমি এই কুরআন এক মহাবিজ্ঞ সর্বজ্ঞানী সত্তার নিকট থেকে লাভ করছে।” (সূরা নামল : ৬)

وانزل الله عليك التاب والحكمة وعلمك مالم تكن: (\r : J1) “আল্লাহ তােমার প্রতি কিতাব ও হিকমাহ নাযিল করেছেন আর তােমাকে। এমন জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন যা তােমার জানা ছিলােনা।” (সূরা নিসা : ১১৩)

ان هذا القران يهدى ليلتي هي أقوم ويبرالمؤمنین: “এই কুরআন সেই পথ প্রদর্শন করে, যা সম্পূর্ণ সরল সােজা ও ঋজু। আর যারা একে মেনে নেয়, তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান করে।” (সূরা বনি ইসরাঈলঃ ৯)

شهر رمضان الذي أنزل فيه القرآن هدى ليلاس وبينات من الهدى – (البقره : ۱۸۰): “রমযান মাস। এ মাসেই কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এতে গােটা মানব জাতির জন্যে রয়েছে জীবন যাপনের বিধান এবং তা এমন সুস্পষ্ট শিক্ষায় পরিপূর্ণ যা সঠিক ও সত্য পথ প্রদর্শন করে। (সূরা আল বাকারা : ১৮৫)

৩. আসল শিক্ষক নবী নিজে (মহানবীর শিক্ষানীতি কেমন ছিল)

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে গেছেন, তার মূল শিক্ষক রসূল নিজেই। কী শিক্ষা দিতে হবে? শিক্ষানীতি কী হবে? শিক্ষা ব্যবস্থা কী হবে?

কোন্ পদ্ধতিতে শিক্ষা দান করতে হবে? এসব ব্যাপারে রসূল নিজেই আদর্শ। তাকেই আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার সকল দিক ও বিভাগে অনুসরণ করতে হবে তাঁরই পদাংক :

لقد كان لكم في رسول الله أسوة حسنة لمن كان برجوا الله واليوم الأخر- (الاحزاب : ۲۱): “তােমাদের জন্যে আল্লাহর রসূলের মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম নমুনা। ঐ ব্যক্তির জন্যে, যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি আশাবাদী।” (সূরা আহযাব : ২১)

তিনি শুধু নমুনাই নন। বরঞ্চ মুমিনদের পক্ষে তার নমুনা গ্রহণ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। জীবনের সবকিছু গ্রহণ বর্জন করতে হবে কেবল তাঁর শিক্ষার ভিত্তিতে-

وما أتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا – “রসূল তােমাদের যা দেয় তাই গ্রহণ করাে আর যা বর্জন করতে বলে, তা থেকে বিরত থাকো।” (সূরা হাশরঃ ৭)

ان تم تحبون الله فاتبونی بگم الله “হে নবী! তাদের বললঃ তােমরা যদি সত্যিই আল্লাহর প্রতি ভালবাসা পােষণ করাে, তবে আমাকে অনুসরণ করাে।” (সূরা আলে ইমরান : ৩১)

মহানবীর শিক্ষানীতি কেমন ছিল

৪. আল্লাহর দাসত্ব ও মানুষের প্রতিনিধিত্ব নীতির শিক্ষা ব্যবস্থা

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গােটা শিক্ষা ব্যবস্থা যে মূল বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, তাহলে মানুষ বিশ্ব নিখিলের সৃষ্টিকর্তা, মালিক ও পরিচালক এক লা-শরীক আল্লাহর দাস। তাঁর দাসত্ব করার জন্যেই তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি তাঁর দাস মানুষকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন-

وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون (الذاریات ) : “আমি জিন আর মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধু মাত্র আমার দাসত্ব করার জন্যে”- (সূরা যারিয়াত : ৫৬)

এই দাস মানুষকে পৃথিবীতে যে তাঁর প্রতিনিধিও নিযুক্ত করবেন, একথা মানুষকে সৃষ্টি করবার প্রাক্কালেই তিনি ফেরেশতাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন।

“যখন তােমার প্রভু ফেরেশতাদের বলেছিলেন? পৃথিবীতে আমি প্রতিনিধি বানাব।” (সূরা আল বাকারা: ৩০)

মানুষের মধ্যে আল্লাহর দাসত্ব ও প্রতিনিধিত্ব করার চেতনা জাগ্রত করে দিয়ে তাকে আল্লাহর সত্যিকার দাস ও প্রতিনিধিরূপে গড়ে তােলাই এ শিক্ষানীতির মূল কথা। আর এটাই মানুষের প্রকৃত ও সত্যিকারের মর্যাদা। তাই নবুয়্যতি শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য আদর্শ নাগরিক তৈরি’ নয়, আদর্শ মানুষ তৈরি।

এই শিক্ষানীতি মানুষকে যেভাবে গড়ে তুলবার পরিকল্পনা দিয়েছে, তাহলাে, মানুষ এক লা-শারীক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। রসূলের মাধ্যমে প্রদত্ত বিধানের (দীন ও শরীয়ার] ভিত্তিতে তাঁর দাসত্ব করবে।

সে শুধু নিজের একার মুক্তির জন্যেই কাজ করবেনা, বরঞ্চ আল্লাহ প্রদত্ত বিধানের ভিত্তিতে গােটা বিশ্ব মানবতার পার্থিব ও পারলৌকিক কল্যাণ, মুক্তি ও উন্নয়নের জন্যে নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাবে।

এসব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করলে আদালতে আখিরাতে তাকে কঠিন জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে এবং পরিণতিতে চিরকাল যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভােগ করতে হবে।

মহানবীর শিক্ষানীতি কেমন ছিল

পক্ষান্তরে এসব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে গেলে পরকালে আল্লাহর কাছ থেকে বিরাট পুরস্কার লাভ করবে। চিরকাল জান্নাতে বসবাস করবে-এ অনুভূতি নিয়েই দায়িত্ব পালন করবে।

এক্ষেত্রে তার সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি ও ভালবাসা লাভকে তার জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করবে। এভাবেই মানুষ সত্যিকারভাবে ইবাদত ও খিলাফতের সঠিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আদর্শ মানুষে পরিণত হবে। আর এ উদ্দেশ্যেই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছেঃ

ومن التماس من يرى نفسه ابتغاء مرضات الله والله رفيف بالعباد- (البقره : ۲۰۷)

“আরেকটি মানব দল আছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে নিজেদের জান প্রাণ উৎসর্গ করে দেয়। মূলত, আল্লাহ তাঁর এই দাসদের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল।” (সূরা আল বাকারা : ২০৭)

মানুষকে এভাবে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তােলাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য। কারণ এটাই মানুষের পার্থিব ও পারলৌকিক মুক্তি ও কল্যাণ লাভের একমাত্র পথ।

৫. পূর্ণাংগ জীবন ভিত্তিক সমন্বিত শিক্ষা

মুহাম্মদ রসূলুল্লাহর শিক্ষা মানব জীবনের কোনাে একটি বা দুটি দিকের জন্যে সীমাবদ্ধ শিক্ষা নয়। বরঞ্চ তাঁর শিক্ষা মানব জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগ পরিব্যাপ্ত।

আধুনিক কালের শিক্ষা ব্যবস্থায় কেবল বৈষয়িক ও বস্তুগত শিক্ষার প্রতিই গুরুত্বারােপ করা হয়। এই একমুখী বস্তুগত শিক্ষাই বর্তমান বিশ্বের সমস্ত বিপর্যয়ের মূল কারণ। আসলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পূর্ণাঙ্গ জীবন ভিত্তিক শিক্ষাই কেবল মানুষকে মুক্তি দিতে পারে।

ইসলাম মানব প্রকৃতির স্বাভাবিক বিকাশ সাধন করতে চায়। তাই ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম। রসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথিদের একই সাথে আত্মিক, মানসিক, নৈতিক, শারীরিক, জৈবিক ও সামাজিক শিক্ষা প্রদান করেছেন। এর একটিকে অপরটি থেকে পৃথক করেননি।

সমন্বয় করেছেন সবগুলাের সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করেছেন। মানব জীবনকে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করেননি। বরঞ্চ একটি এককের অধীন করেছেন।

মূলত জীবনের সকল দিকের সামঞ্জস্যপূর্ণ জ্ঞান ও উপলব্ধির মাধ্যমে জীবনের মােল আনাকে বিকশিত করতে পারলেই মানুষ ‘আদর্শ মানুষে পরিণত হতে পারে-

ليس البر أن تموتوا وجوهكم قبل المشرق والقرب ولي البر من امن بالله واليوم الآخر والملكة والكتاب والبي واتى المال على ځينو نوى التربى واليتى والساين وابن الشيل والشايلين وفي التراب وأقام

الصلوة واتى الثروة والوفون بعهدهم إذا عاهدوا الشبرين في البأساء والضراء وجين البس-اولئك الذين صدا وأولكم التقون (البقره : ۱۷۷)

“পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানাে আসল পূণ্যের কাজ নয়। প্রকৃত পূণ্যের কাজ তাে সেই ব্যক্তি করলাে, যে নিষ্ঠার সাথে ঈমান আনলাে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতা, আল কিতাব ও নবীদের প্রতি আর আল্লাহর ভালবাসা পাবার জন্যে নিজের ধন সম্পদ ব্যয় করলাে আত্মীয় স্বজন, এতীম, মিসকীন, পথিক, সাহায্যপ্রার্থী ও দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্যে।

মহানবীর শিক্ষানীতি কেমন ছিল

তাছাড়া সালাত কায়েম করলাে এবং যাকাত পরিশােধ করলাে আর এই পূণ্যবান লােকেরা হয়ে থাকে প্রতিশ্রুতি পূর্ণকারী এবং দারিদ্র দুঃসময়, দুঃখ দুর্দশা, বিপদ আপদ ও সত্য মিথ্যার সংগ্রামে ধৈর্য, দৃঢ়তা ও অটলতা অবলম্বনকারী। এরাই প্রকৃত সত্যপন্থী আর এরাই ন্যায়বান আদর্শ মানুষ।” (সূরা আল বাকারা : ১৭৭)

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে এ রকম সত্যপন্থী ন্যায়বান আদর্শ মানুষই তৈরি করেছিলেন।

জীবনের সকল দিক ও বিভাগের সর্বোত্তম মানবীয় গুণাবলী বিকশিত করে দিয়েছিলেন তিনি তার সর্বাংগীন পরিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে।

এ শিক্ষা মানুষকে কেবল বৈষয়িক দিক থেকেই যােগ্য করেনা, পরকালীন সাফল্যও প্রদান করে। তাইতাে নবীর ছাত্ররা তাদের মনিবের দরবারে উভয় জগতের সাফল্য ও কল্যাণের ফরিয়াদ করেঃ

ربنا انا في الدنيا حسنة وفي الاخيرة من وقنا: “আমাদের প্রভু! আমাদেরকে দুনিয়ার কল্যাণও দান করাে। আর পরকালের কল্যাণও দান করাে এবং আগুনের শাস্তি থেকে বাঁচাও। (সূরা বাকারাঃ২০১১)

বস্তুত এই শিক্ষানীতির পূর্ণাংগতার কারণেই নবীর সাথিরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব দলে পরিণত হয়েছিলেন।

আপনার জন্য আরও কিছু তথ্যঃ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *