লালসাবৃত্তি চরিতার্থই স্ত্রীসহবাসের উদ্দেশ্য নয়
ইসলামে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ককে অত্যন্ত মধুর ও মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। লালসাবৃত্তি চরিতার্থই স্ত্রীসহবাসের উদ্দেশ্য নয়। বরং এর আরও অনেক গভীর বিষয় রয়েছে যা আজকে আমরা জানার চেষ্টা করবো।
গত আলোচনায় আমরা জেনেছি, হায়েজ অবস্থায় স্ত্রীর সাথে স্বামীর আচরণ কেমন হওয়া উচিত আশা করছি আপনার এটি ভালো লেগেছে। তাহলে আজকের আলোচনায় মন দিন।
তােমাদের স্ত্রীগণ তােমাদের জন্যে কৃষি ক্ষেত্র। তাই তােমরা নিজেদের কৃষি ক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার। তবে নিজেদের জন্যে কিছু যােগাড় করে রাখ। আর আল্লাহকে ভয় কর। জেনে রেখ, তােমাদের অবশ্যই একদিন তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে হবে। আর মুমিনদের সুসংবাদ দাও।
সূরা আল বাকারাঃ ২২৩)
লালসাবৃত্তি চরিতার্থই স্ত্রীসহবাসের উদ্দেশ্য নয়
স্ত্রী জাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য এ নয় যে, তারা পুরুষদের “বিহার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। বরং দুনিয়ার জীবন-যাপনে নর-নারী হবে পরস্পরের সহযাত্রী। সহাবস্থানের ব্যাপদেশে বৈধ উপায়ে তাদের সংগমের অনুমতি রয়েছে।
প্রকৃতিগতভাবে তাদের মাঝে সেই স্পৃহাও রয়েছে। কিন্তু তাই বলে নারীদেরকে পুরুষের যৌন ক্ষুধা মিটানাের জন্যেই সৃষ্টি করা হয়নি, সৃষ্টি করা হয়েছে।
আল্লাহর পৃথিবীতে মানব বংশ বিস্তার সহ দুনিয়ার জীবন-যাপনে, পুরুষের সহগামী হিসেবে। বরং নর-নারীর পারস্পরিক আকর্ষণ সৃষ্টির পেছনেও সৃষ্টির ক্রমধারা জারী রাখা তথা মানব বংশের বিস্তার সাধন করার উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে।
উদ্দেশ্য এ নয় যে, সহবাস বা সংগমের কারণে সন্তান হবে, বরং সন্তান উৎপাদনের মাধ্যম ও প্রসেস হলাে স্ত্রীসংগম। যে কারণে আল্লাহ তাআলা স্ত্রীদেরকে পুরুষদের কৃষিক্ষেত্র বলে স্ত্রী ও পুরুষের মধ্যে ক্ষেত ও কৃষকের সম্পর্ক নির্ধারণ করেছেন।
লালসাবৃত্তি চরিতার্থই স্ত্রীসহবাসের উদ্দেশ্য নয়
সুফিয়ান, আবু নাঈম ও ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন যে, ইবনে মুনকাদির বলেন, আমি হযরত জাবির (রা)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ইয়াহুদীরা বলতাে পেছনের দিক থেকে স্ত্রীসংগম করলে সেই সংগমের সন্তান টেরা হয়।
এ প্রেক্ষাপটে উপরােক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়।
ইবনে জারিজ একটি হাদীস বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, পেছন দিক সনুখ দিক—যেদিক থেকেই ইচ্ছা মিলতে পারবে, তবে স্থান হবে যৌনদ্বার বা স্ত্রীলিংগ।
ইমাম আহমদ ও সুনান সংকলকগণ একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন যে, বাহায ইবনে হাকীমের দাদা রাসূলুল্লাহ (স)-কে জিজ্ঞেস করেন। হে আল্লাহর রাসূল ! আমরা আমাদের স্ত্রীর কাছে কিভাবে আসবাে?
- আরও পড়ুনঃ বৈবাহিক সম্পর্ক কেবল যৌন সম্পর্কই নয়
উত্তরে তিনি বললেন, তারা তােমাদের ক্ষেত্র স্বরূপ, তাদেরকে যেভাবে যে দিক থেকে ইচ্ছা ব্যবহার কর। তবে তাদের মুখের উপর মেরাে না, গালমন্দ করাে না, ক্রোধবশতঃ তাদের থেকে পৃথক হয়ে অন্য ঘরে থেকো না।
আল্লামা ইবনে কাসীর তাঁর বিখ্যাত তাফসীর তাফসীরে ইবনে কাসীরে বহু হাদীস এ প্রসংগে উল্লেখ করেছেন। সবক’টি হাদীসই উপরােক্ত আয়াতের সমর্থক ও ব্যাখ্যা স্বরূপ।
অর্থাৎ স্ত্রী সংগম সামনের দিক থেকে ও পেছন দিক থেকে উভয় দিক থেকেই জায়েয;
তবে অবশ্যই যৌনদ্বার হতে হবে। তাউস (র) বলেন, জনৈক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-কে স্ত্রীদের গুহ্যদ্বার দিয়ে সহবাস করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “তুমি কি আমাকে কুফরী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছাে?” আল্লামা ইবনে কাসীর এটিকে সহীহ বর্ণনা রূপে লিপিবদ্ধ করেছেন।
লালসাবৃত্তি চরিতার্থই স্ত্রীসহবাসের উদ্দেশ্য নয়
হযরত আবু হুরাইরা (রা) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, সে ব্যক্তি অভিশপ্ত যে তার স্ত্রীর গুহ্যদ্বার দিয়ে সহবাস করে।”
হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে আরেকটি হাদীস আল্লামা ইবনে কাসীর (র) তাঁর তাফসীরে উদ্ধৃত করেছেন যে, নবী (স) বলেছেন, “যে ব্যক্তি স্ত্রীদের বা পুরুষদের গুহ্যদ্বার দিয়ে সঙ্গম করে সে কুফরী করে।”
আয়াতের শেষাংশে আছে: বিভিন্ন তাফসীরে এর তরজমা হলােঃ তােমরা তােমাদের জন্যে কিছু করিও (আল কুরআনুল করীম (ইসলামিক ফাউণ্ডেশন) -নিজেদের পরিত্রাণের জন্যে নেক আমল পেশ করতে থাকি।
-(ইবনে কাসীর) -তােমাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে চিন্তা করিও।-(তাফহীমুল কুরআন) -নিজেদের জন্যে আগামী দিনের ব্যবস্থা কর।-(মাআরেফুল কুরআন) এ আয়াতাংশের দু’টো অৰ্থ হতে পারে।
লালসাবৃত্তি চরিতার্থই স্ত্রীসহবাসের উদ্দেশ্য নয়
এক. নিজের বংশ রক্ষার জন্যে চেষ্টা কর। যেন তােমার মৃত্যুর পর তােমার স্থলাভিষিক্ত বর্তমান থাকে।
দুই. আল কুরআনে নারী নবাগত বংশধরকে তােমার স্থলাভিষিক্ত করতে হলে দ্বীন ইসলাম, নৈতিক চরিত্র তথা মনুষ্যত্বের ভূষণে ভূষিত করার চেষ্টা কর।
পরবর্তী আয়াতাংশে সতর্ক করে বলা হয়েছে এ ব্যাপারে যদি ইচ্ছাকৃত অবহেলা ও ত্রুটি দেখাও তবে সে জন্যে অবশ্যই আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
আমাদের প্রকাশিত সকল তথ্য সবার আগে পাওয়ার জন্য গালফ্হাইব এর ফেসবুক পেইজ লাইক ও ফলো করে রাখুন এবং ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।