বৈবাহিক সম্পর্ক কেবল যৌন সম্পর্কই নয়
অনেকেই মনে করে স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক কেবলই যৌন সম্পর্ক কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়। বৈবাহিক সম্পর্ক কেবল যৌন সম্পর্কই নয়, বরং এটি একটি গভীর সামাজিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও তামান্দুনিক সম্পর্ক। আমরা প্রকৃতভাবে এর গভীরতা অনুমান করতে না পাড়ায় মাঝে মাঝে সমস্যা হয়ে যায়।
চলুন আজকে জেনে আসি কিসের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে যে, বৈবাহিক সম্পর্ক কেবল যৌন সম্পর্কই নয়। পবিত্র কুরআনের আলোকে এটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
বৈবাহিক সম্পর্ক কেবল যৌন সম্পর্কই নয়
তােমরা কোনাে মুশরিক নারীকে ঈমান না আনা পর্যন্ত বিবাহ করাে না। মুশরিক নারী তােমাদের মুগ্ধ করলেও তার চেয়ে ঈমানদার দাসী অনেক উত্তম। তেমনি কোনাে মুশরিক পুরুষ ঈমান না আনা পর্যন্ত তােমাদের কন্যাদের তার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করাে না।
মুশরিক পুরুষ তােমাদের মুগ্ধ করলেও তার চেয়ে বরং একজন ঈমানদার দাস অনেক ভাল। কারণ তারা (মুশরিকরা) আহ্বান করে জাহান্নামের দিকে আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহ্বান করেন। তিনি তাঁর বিধানসমূহ মানুষের জন্যে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন—যেন তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
সূরা আল বাকারা: ২২১
বৈবাহিক সম্পর্ক কেবল যৌন সম্পর্কই নয় বরং তা এক গভীর সামাজিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও তামান্দুনিক সম্পর্ক
আলােচ্য আয়াতে মু’মিন পুরুষ ও স্ত্রীদের জন্যে মুশরিকদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা বা হওয়া হারাম ঘােষণা করা হয়েছে। আহলে কিতাবদের মুশরিকগণ সহ সর্ব প্রকার মুশরিকের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ ঘােষিত হয়েছে।
ঈমানদার ও মুশরিক স্বামী-স্ত্রীর প্রভাব পরস্পরের উপর পড়ে থাকে। সেই পরিবারে ঈমান ও কুফরীর একটা জগাখিচুড়ী জীবনধারা দানা বেঁধে উঠতে পারে।
এ জাতীয় জীবনধারা মুশরেকী বা কুফরী জীবন বিধানের দৃষ্টিতে আপত্তিজনক নাও হতে পারে; কিন্তু ইসলামী জীবন বিধানের চোখে তা কিছুতেই বরদাশত করার বিষয় নয়। দু’জনের মধ্যে যেই অধিকতর প্রভাবশালী হবে পরিবারের সদস্যগণের উপর তার প্রভাব পড়বে সর্বাধিক।
এতে পরবর্তী বংশধরদের জগাখিচুড়ী চরিত্রই প্রকাশ পেয়ে থাকবে। তাছাড়া দু’জন যদি চরমপন্থী হয় তাহলে দাম্পত্য জীবন কলহপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কোনাে প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তি কেবলমাত্র যৌন ভােগ-লালসা চরিতার্থ করার এমন একটি অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির উদ্ভব হতে দিতে পারে না। কোনাে ঈমানদার ব্যক্তি যদি কখনাে কোনাে মুশরিকের প্রেমে পড়ে তখন তার ঈমান, তার বংশ-পরিবার এবং নিজের দ্বীন ও চরিত্র রক্ষার জন্যে ব্যক্তিগত হৃদয়াবেগ কুরবানী করাই তার কর্তব্য।
কারণ তাদের সাথে এরূপ সম্পর্কের ফলে কুফর ও শিরকের মধ্যে নিমগ্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তীব্রভাবে মুশরিক মহিলা বা পুরুষ কোনাে ঈমানদার পুরুষ বা মহিলার জন্যে উপযুক্ত বা বিবাহযােগ্য হতে পারে না—যতক্ষণ না সে ঈমান আনবে মুসলমান হবে।
বৈবাহিক সম্পর্ক কেবল যৌন সম্পর্কই নয়
অমুসলিম নারী-পুরুষ যতই দৈহিক বা আর্থিক আকর্ষণ সম্পন্ন হােক না কেন, সে কখনাে ঈমানদারদের দাম্পত্য সাথী হতে পারে না। কারণ স্বরূপ কুরআন ঘােষণা করেছে যে, তারা তাে জাহান্নামের অগ্নির দিকেই আহ্বান করে থাকে। আর আল্লাহ আহ্বান করেন জান্নাতের দিকে।
তাই আল্লাহ চান না যে, কোনাে বান্দা-বান্দী অমুসলিম জীবনসাথীর সংস্পর্শে গিয়ে তার প্রেমে পড়ে তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে অথবা তার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নিজেকে আল্লাহর ইচ্ছার বিপরীত পথে পরিচালিত করতে থাকে।
যৌন সম্পর্ক অনেকটা পাশবিক আকর্ষণ।
মানব জীবনে যৌন আকর্ষণ আল্লাহর সৃষ্টি কৌশলের একটা বিশেষ দিক মাত্র।
পারিবারিক জীবনের ভিত্তি ও মানব বংশ রক্ষার জন্যে আল্লাহ তা’আলা নারী-পুরুষ সৃষ্টি করে তাদের বয়সের একটা সীমা পর্যন্ত যৌন আকর্ষণ দিয়েছেন।
পরিবারের ভিত্তি স্থাপন করে মানব সমাজের শৃংখলা আনয়ন করে মানব বংশ বৃদ্ধি করে ও আধ্যাত্মিকতার উন্মেষ ঘটিয়ে পূর্ণ মানবতা হাসিলের জন্যে দাম্পত্য জীবনে নর-নারীর এক সুনিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের পেছনে এ যৌন আকর্ষণের ভূমিকা উল্লেখযােগ্য।
অনেক সময় আধ্যাত্মিক প্রেম সাধনায় পাশবিক প্রেম প্রাথমিক সােপানের ন্যায় গণ্য হয়ে থাকে। ইশকে মাজাযী’ থেকে মানুষ ‘ইশকে হাকীকীর স্তরে উপনীত হতে পারে।
সুতরাং যৌন ক্ষুধা নিবৃত্তিই বিবাহের উদ্দেশ্য হতে পারে না।
এটা তাে যুবক-যুবতীর মনের সাময়িক সম্পূর্ণ অস্থায়ী অবস্থা মাত্র। স্বামী-স্ত্রীর পূর্ণাঙ্গ সম্পর্কের একটা দিক মাত্র। একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলেও একমাত্র দিক এটা নয়।
এক জোড়া দম্পত্তির পুরাে জীবনের সফলতার জন্যে তাদের সার্বিক সহযােগিতা একান্তভাবে কাম্য। কাজেই দুজনের চিন্তাধারা, মন-মানসিকতা আল কুরআনে নারী ও আকীদা-বিশ্বাসে সামঞ্জস্য একান্ত অপরিহার্য।
কোনাে অমুসলিম নারী একজন মুসলিম নরের জন্যে উপযুক্ত নয়, যেমন করে একজন অমুসলিম পুরুষ একজন মুসলিম নারীর সাথী হওয়ার যােগ্য নয়। অমুসলিম নর-নারীর দৈহিক সৌন্দর্য ও আর্থিক সচ্ছলতা এ ক্ষেত্রে মােটেই গণ্য হতে পারে না।
আমাদের সমাজে দেখা যায়, সহশিক্ষার কারণে অনেক স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী যৌন আকর্ষণে পরস্পরকে ভালবেসে মাতা-পিতার প্রতি কলংক লেপন করে ও বেরিয়ে চলে যায়। আর তাদের ঐ সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত বিচ্ছিন্নতায় রূপায়িত হতেও দেখা যায়।
বৈবাহিক সম্পর্ক কেবল যৌন সম্পর্কই নয়
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা যায় লাভ মেরেজের প্রায় ৭০% শেষ পর্যন্ত বিবাহ বিচ্ছেদের সম্মুখীন হয়।
কারণসমূহের মধ্যে প্রধানত এর সাময়িক আকর্ষণ, বাহ্যিক ভালবাসা, আবেগ প্রবণতা, অদূরদর্শিতা এবং সর্বোপরি মাতা-পিতার সদিচ্ছার অভাবই এজন্য দায়ি বলে মনে করা হয়।
বিবাহে মানুষের পুরাে দুনিয়ার জীবনের জন্য সাথী নির্বাচন করা হয়ে থাকে। তাই ইসলাম উভয়কে এখতিয়ার দিয়েছে পরস্পরকে দেখে শুনে নেয়ার জন্য।
তা ছাড়া বর ও কনের সার্বিক সমতা (কুফু) হওয়ার প্রতি গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে ইসলামে। বিশেষতঃ দীনের ব্যাপারে সতর্কতা অত্যাবশ্যক। আদর্শিক মানসিকতা ও আমলী জিন্দেগীতে বর-কনে যেন অভিন্ন হয়, তৎপ্রতি লক্ষ্য রাখা কর্তব্য।
বৈবাহিক সম্পর্ক কেবল যৌন সম্পর্কই নয়