Sign In

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের পােশাক স্বরূপ

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের পােশাক স্বরূপ

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের পােশাক স্বরূপ: আলােচ্য আয়াতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা, নৈকট্য ও অবিচ্ছেদ্যতা সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের পােশাক স্বরূপ। দেহ ও পােশাক যেমন পরস্পরের একান্ত ঘনিষ্ট অবিচ্ছেদ, স্বামী-স্ত্রীও তেমনি একে অপরের জন্যে একান্ত আপনজন।

আমাদের সমাজে সামান্য সমস্যায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা লক্ষ্য করা যায়। তারা সঠিকভাবে ইসলামের চর্চা করলে এই বিষয়ে আরও অবগত হতে পারতেন।

পােশাক যেমন দেহকে হেফাজত করে ও তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, স্বামী-স্ত্রীও। তেমনি পরস্পরকে সংরক্ষণ ও পরস্পরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। পােশাক যেমন শীত ও গরমের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্কও মানুষকে পদস্খলন ও জীবনের দুঃখ-দুর্দশা থেকে বাঁচিয়ে রাখে।

সমস্যাটি তৎকালীন সাহাবায়ে কিরামের সিয়াম পালন ব্যাপদেশে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানকে কেন্দ্র করে দেখা দিয়েছিল। তখন ইফতার গ্রহণের পর থেকে দ্ৰিা গমন পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস জায়েয ছিল। কিন্তু দ্ৰিাগমনের পর রাত্রি থাকা সত্ত্বেও কেউ পানাহার বা স্ত্রী সহবাস করতে পারতাে না।

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের পােশাক স্বরূপ

সিয়ামের রাতে তােমাদের জন্যে স্ত্রী সহবাস হালাল করা হলাে। তারা তােমাদের জন্যে পােশাক আর তােমরাও তাদের জন্যে পােশাক। আল্লাহর জানা আছে যে, তােমরা নিজেদের সাথে নিজেরাই খিয়ানত করেছ। তিনি তােমাদের তাওবা কবুল করেছেন ও তােমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। এখন তােমরা স্ত্রী সহবাস কর আর তােমাদের জন্যে আল্লাহ যা হালাল করে দিয়েছেন তা সন্ধান কর।

(সূরা আল বাকারা : ১৮৭)

আল্লামা ইবনে কাসীরের মতে ইসলামের প্রথম দিকে তা ছিল নিষিদ্ধ। এ আয়াতে তা হালাল করা হয়েছে। কিন্তু তাফহীমুল কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ ব্যাপারে কোনাে সুস্পষ্ট নীতি বিধান ছিল না।

তবুও মুসলমানরা এরূপ করাকে নাজায়েয বলেই মনে করতাে। নাজায়েয অথবা মাকরূহ ধারণা থাকা সত্ত্বেও তারা স্ত্রী সহবাস করতেন। এতে তাদের মনে অপরাধী ভাব বিরাজ করতাে।

এ আয়াতে আল্লাহ মুমিনদের মনের সংকীর্ণতা পরিহার করে বিবেকের পূর্ণ আশ্বস্তি ও পবিত্রতার অনুভূতি সহ স্ত্রীগমন করার নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লামা ইবনে কাসীর (র) তাঁর তাফসীরে ইবনে কাসীরে অনেকগুলাে বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন। এখানে সংক্ষিপ্ত একটি বর্ণনার উদ্ধৃতি দেয়া গেল।

একদিন হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা) দাঁড়িয়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! বিগত রাত্রে আমি আমার স্ত্রীর কাছে সেই অভিলাষ ব্যক্ত করেছিলাম যা সাধারণত একজন পুরুষ তার স্ত্রীর কাছে করে থাকে।

আমার স্ত্রী জানালাে, সে ঘুমিয়েছিল। কিন্তু তার সে কথাকে আমি বাহানা মনে করে তার সাথে সহবাস করেছি। এ ঘটনার পর উপরােক্ত আয়াত-নাযিল হয়।

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের পােশাক স্বরূপ

ঘটনাটির আরেকটি দিক হলাে হযরত কা’ব ইবনে মালেক (রা)-এর বর্ণনা। তিনি বলেন, পরদিন প্রত্যুষেই উমর ইবনে খাত্তাব (রা) রাসূলের খিদমতে হাজির হয়ে তাঁর অবস্থা (উপরােক্ত ঘটনা) বর্ণনা করেন। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেন-

তােমরা যে নিজেদের ব্যাপারে খেয়ানত করেছিলে তা আল্লাহ জানেন। অতপর আল্লাহ তােমাদের তাওবা কবুল করেছেন, আর তােমাদের ক্ষমা করেছেন। সুতরাং এখন থেকে তােমরা (সুবহে সাদেক পর্যন্ত) স্ত্রী সহবাস করতে পার।

সূরা আল বাকারা : ১৮৭

স্ত্রীগণ তােমাদের জন্য পােশাক আর তােমরাও তাদের জন্য পােশাক

উক্ত আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় হযরত ইবনে আব্বাস (রা), মুজাহিদ, সাঈদ ইবনে যুবাইর প্রমুখ বলেন-

স্ত্রীগণ তােমাদের মানসিক শান্তি ও তৃপ্তি স্বরূপ আর তােমরাও তাদের জন্যে শান্তি ও তৃপ্তি স্বরূপ।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা), মুজাহিদ, সাঈদ ইবনে যুবাইর প্রমুখ

রবী ইবনে আনাস এর ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, অর্থাৎ “তারা তােমাদের জন্যে লেপ স্বরূপ আর তােমরাও তাদের জন্যে লেপ স্বরূপ।

এসব ব্যাখ্যার সারকথা হলাে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে এক সাথে অহরহ মিলেমিশে থাকতে হয় এবং পরস্পরের সান্নিধ্যে ও সংস্পর্শে জীবন কাটাতে হয়। একই শয্যায় শয়ন করতে হয়।

সুতরাং রমযানের রাতের বেলায় রােযা যেন। তাদের জন্যে পীড়াদায়ক না হয়, সেজন্যে রযমানের রাতে স্ত্রীসহবাস হালাল করে দেয়া হয়েছে।

মানব সৃষ্টির আদিকাল থেকেই স্বামী-স্ত্রী সহবাসকে আল্লাহ তাআলা মানুষের স্বভাবগত ধর্মে পরিণত করে দিয়েছেন।

আল্লাহ তা’আলা যে কারণে প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ)-কে সৃষ্টি করে বিবি হাওয়া (আ)-কে তার জীবন সংগীনি (স্ত্রী) হিসাবে সৃষ্টি করে বেহেশতে শান্তিতে বসবাস করতে দিলেন।

মানব বংশ রক্ষার জন্যে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ থেকে একজন পুরুষ ও একজন মহিলাকে দিয়ে সমাজ জীবনের ভিত্তি স্থাপিত করতেই ইসলামে বিবাহ নীতির প্রবর্তন করা হয়েছে। এটি হচ্ছে ফিতরাতের ধর্ম ইসলামের স্বাভাবিক পদ্ধতি।

আলােচ্য আয়াতে স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের জন্যে পােশাক ঘােষণা দিয়ে। মানব স্বভাবের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দেয়া হয়েছে। দু’জন পৃথক স্বত্ত্বা হলেও দু’জনই অবিচ্ছেদ্য হয়ে দুনিয়ার জীবন যাপন করে থাকে।

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের পােশাক স্বরূপ

স্ত্রীদের সে জন্যেই অর্ধাঙ্গীনী বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। কিন্তু আজকের সমাজে মেকী ভালবাসার অপপরে পড়ে আল্লাহর ঘােষিত স্বামী-স্ত্রীর সেই অকপট মধুর সম্পর্ক আর বাকী নেই।

অধিকন্তু আজকের সমাজে যৌতুকের প্রাধান্য এবং ঘােষিত ও অঘােষিত যৌতুক প্রথার দৌরাত্মে দাম্পত্য জীবনের সেই প্রাকৃতিক প্রেম-প্রীতি বিলীন প্রায়। শরীয়তী বিবাহের পরিবর্তে বাণিজ্যিক বিবাহ মুসলিম সমাজকেও আজ এক ভয়াবহ পর্যায়ে উপনীত করেছে।

মুসলমানদের সচেতনতা ও খাটী শরয়তী রাষ্ট্রব্যবস্থা ছাড়া এ মারাত্মক পর্যায় অতিক্রম করা কি সম্ভব? আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছেঃ

মসজিদে ইতিকাফে থাকা অবস্থায় তােমরা স্ত্রীসহবাস করাে না।

রমযানের রাতে খানা-পিনা ও স্ত্রীসহবাস ইত্যাদি হালাল করা হয়েছে, কিন্তু রমযানের শেষ ১০দিনে যে ই’তিকাফ এর বিধান রয়েছে সেই ইতিকাফে থাকা অবস্থায় রাত্রী বেলায়ও স্ত্রী সহবাস জায়েয নেই।

এখানে খানা-পিনা ও স্ত্রীসহবাসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ ই’তিকাফকারী ব্যক্তি রমানের রাতের বেলায় পানাহার করতে পারবে ঠিকই তবে স্ত্রীসঙ্গম করতে পারবে না।

এ হুকুম কেবল ইতিকাফকারী রােযাদারের জন্য মাত্র, আর ই’তিকাফ ছাড়া রােযাদারদের জন্য এ হুকুম প্রযােজ্য নয়। আয়াতটির শেষাংশে বলা হয়েছে-

আর তােমরা স্ত্রীসহবাস করাে না যখন তােমরা মসজিদসমূহে ই’তিকাফ অবস্থায় থাক। এসব হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা, সুতরাং তােমরা এসবের ধারেকাছেও যেও না।

(ইতিকাফ) শব্দের অর্থ কোনাে স্থানে অবস্থান করা।’ কুরআন-সুন্নাহর পরিভাষায় কতগুলাে বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে একটা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে ই’তিকাফ বলে।

মসজিদসমূহে (বহুবচন) বলে বুঝানাে হয়েছে যে, এ ই’তিকাফ যে কোনো মসজিদে হতে পারে। অবশ্য মসজিদ বলতে যেসব মসজিদে নিয়মিত জামাআত হয়ে থাকে তাকেই বুঝানাে হয়ে থাকে।

ইতিকাফে থাকা অবস্থায় নিজের মানবিক ও প্রাকৃতিক প্রয়ােজন পূরণ করার জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া যায়, কিন্তু যৌন স্বাদ আস্বাদন করা থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ দূরে রাখা একান্ত অপরিহার্য।

রােযাদার ও ইতিকাফকারীর জন্য এসব সীমারেখা বলে দেয়ার পর আল্লাহ তা’আলা সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, এসব সীমারেখার ধারেও যেও না।

অর্থাৎ যেখান থেকে গুনাহের সীমানা শুরু হচ্ছে ঠিক সেই শেষ প্রান্তের সীমানা লাইনে চলাফেরা করা বিপদজনক। সীমানা থেকে দূরে অবস্থান করাই নিরাপদ ব্যবস্থা। কারণ সীমানা বরাবর চলতে গেলে ভুলেও সীমানার ওপারে পা চলে যেতে পারে।

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের পােশাক স্বরূপ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *