Sign In

পূর্ববর্তী শরিয়তেও রয়েছে সদাচারের নির্দেশ

পূর্ববর্তী শরিয়তেও রয়েছে সদাচারের নির্দেশ

পিতা-মাতা ও সমাজের মানুষের সাথে ভালো আচরণের বিধান শুধুমাত্র পবিত্র কুরআনে নয় বরং আল্লাহ প্রেরিত অন্যন্য পূর্ববর্তী শরিয়তেও রয়েছে সদাচারের নির্দেশ এই প্রমাণ পাওয়া যায়। আজকে মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার ও সকল মানুষের সাথে সদাচারের নির্দেশ পূর্ববর্তী শরীয়তসমূহেও বিদ্যমান ছিল সংক্রান্ত বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো।

এই তথ্যটি আপনাকে পূর্ববর্তী শরিয়তেও রয়েছে সদাচারের নির্দেশ সংক্রান্ত জানানোর জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। আপনি এর থেকে কিছু শিখতে পারলেই আমাদের সার্থকতা।

আপনি যদি আমাদের আগের আর্টিকেল মানব ইতিহাসের জঘন্যতম অধ্যায় – পুরুষকে হত্যা করে নারীকে জীবিত রাখা না পড়ে থাকেন তাহলে চোখ বুলিয়ে নিন।

পূর্ববর্তী শরিয়তেও রয়েছে সদাচারের নির্দেশ

স্মরণ করাে, যখন ইসরাঈল সন্তানদের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তােমরা আল্লাহ ছাড়া কারাে ইবাদাত করবে না, আর মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে; আর ইয়াতীম ও মিসকীনের সাথেও। তাছাড়া মানুষের সাথে ভাল কথা বলবে। নামায কায়েম করবে ও যাকাত দিবে।

সূরা আল বাকারাঃ ৮৩

মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার ও সকল মানুষের সাথে সদাচারের নির্দেশ পূর্ববর্তী শরীয়তসমূহেও বিদ্যমান ছিল

উপরােক্ত আয়াতে প্রতীয়মান হয় যে, তাওহীদ পন্থী হওয়া, মাতা ও পিতার সেবাযত্ন করা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম-মিসকীন, বালক-বালিকা ও দীন দরিদ্রের সাথে সদ্ব্যবহার করা, সকল মানুষের সাথে নম্র ব্যবহার করা এবং নামায কায়েম করা ও যাকাত আদায় করা বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্বের শরীয়তসমূহেরও নির্দেশ ছিল।

এখানে এসব বিষয়ে বনী ইসরাঈলের সাথে তাওরাতে এ অঙ্গীকারও পাকা-পােকত ওয়াদা নেয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আল কুরআনের বহু স্থানে মানব জাতিকে আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদ মেনে নেয়ার নির্দেশের পর পরই নিজের মাতা ও পিতার সেবাযত্ন করার প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে।

বরং বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ সরাসরি তাওহীদের পরেই মাতা ও পিতার প্রতি ইহসান করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন ইরশাদ হচ্ছে-

وقضى ربك ألا تعبوا الأ اياه وبالوالدين إحسانا د

তােমার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন যে তােমরা আল্লাহ ছাড়া কারাে ইবাদাত করাে না, আর মাতা-পিতার সাথে ইহসান বা সদাচার করাে।

সূরা বনী ইসরাঈলঃ ২৩

সূরা লােকমানে বলেছেনঃ তুমি আমার প্রতি ও তােমার মাতা-পিতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও

এভাবে সৃষ্টিকর্তা রাব্বল আলামীন নারীকেও অর্থাৎ মাতাকেও পিতার সাথে মর্যাদা দিয়ে নর-নারী সবাইকে নিজ নিজ মাতা ও পিতার খিদমত ও শােকর আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর এ নির্দেশ হচ্ছে আল্লাহর একত্ববাদ স্বীকৃতির সাথে সাথে মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য পালন করার।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার এক বাণীতে পিতার তুলনায় মাতা অর্থাৎ নারী জাতির সেবা শুশ্রষার প্রতি অধিকতর গুরুত্ব আরােপ করেছেন।

একদা জনৈক সাহাবী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কার প্রতি সদাচার প্রদর্শন করবাে?

তিনি বললেন, তােমার মায়ের প্রতি।

দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করলেন, তারপর?

তিনি বললেন, তােমার মায়ের প্রতি।

তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলেন, তারপর? তিনি এবারও জবাব দিলেন তােমার মায়ের প্রতি।

৪র্থবার জিজ্ঞাসিত হলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব দিলেন, “তােমার পিতার প্রতি।”

অন্য হাদীসে কিছু সংযােজন করা হয়েছে যে, অতপর তােমার রক্ত সম্পর্কের নিকটাত্মীয়ের প্রতি। হযরত আদম (আ) তথা পৃথিবীর প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী থেকে শুরু হয় মানব জাতির প্রতি আল্লাহর হুকুম-আহকাম ও বিধানাবলীর নির্দেশনা।

মানব জাতির প্রতি আল্লাহর প্রতিটি নির্দেশে নিহিত রয়েছে মানুষের কল্যাণ আর প্রতিটি নিষেধের মধ্যে তাদের ধ্বংস ও ক্ষতির কারণ।

তাওহীদ বা একত্ববাদে বিশ্বাস ও আমল মানুষের স্বার্থেই আবশ্যকীয়। মাতা-পিতা হচ্ছে পৃথিবীতে মানুষের বংশের সিলসিলা জারী থাকার একমাত্র কার্যকর মাধ্যম।

এজন্যে তাওহীদী আকীদার পাশাপাশি মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার জন্য রাব্বল আলামীন নির্দেশ দিয়েছেন। আবার মৌলিক ইবাদাতের পাশাপাশি মানুষের সাথে সদাচার তথা আল্লাহর মাখলুকাতের হক আদায় করাও কর্তব্য।

ইয়াতীম, মিসকীন, আত্মীয় স্বজন—সকলের সাথে সদ্ব্যবহার করার, সকল মানুষের সাথে ভাল কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা।

মানবেতিহাসের সকল অধ্যায়েও নবী রাসূলগণের যুগে আল্লাহর মৌলিক বিধান অপরিবর্তনীয়। সকল যুগের মানুষের জন্যই কল্যাণ ও অকল্যাণের মৌলিক আমল অভিন্ন।

বরং ইবাদাতের মৌল কাঠামােতে সংযােজন এবং পরিবর্তন হলেও তাওহীদী আকীদা, মাতা-পিতার প্রতি সদাচার, মানুষ তথা সকল সৃষ্টিকে ভালবাসার নির্দেশ রয়েছে অপরিবর্তনীয়। কারণ, এযে মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়ােজন।

তথ্যসূত্র:

১. কুরআনুল কারীম ও ইসলামিক ফাউণ্ডেশন
২. কুরআনুল হাকীমঃ শাহ রফিউদ্দীন (র) ও আশরাফ আলী থানবী (র)
৩. মাআরেফুল কুরআন-মুফতী মুহাম্মদ শফী (র)
৪. তাফহীমুল কুরআন ও সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (র)
৫. তাফসীরে ইবনে কাসির-আল্লামা ইবনে কাসির (র)

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *