জান্নাতে যেমন সঙ্গী পাবেন নারী ও পুরুষ
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা জানিয়েছেন জান্নাতে যেমন সঙ্গী পাবেন নারী ও পুরুষ মুমিন বান্দারা। মানুষ তার আমলের উপর ভিত্তি করে জান্নাত লাভ করবেন এবং জান্নাতে তাদের জন্য উত্তম সঙ্গী নির্ধারণ করে রেখেছেন মহান আল্লাহ।
চলুন আমরা আজ অধ্যাপক মোহাম্মদ মোশারফ হোসাইন রচিত আল-কুরআনে নারী গ্রন্থের আলোকে জান্নাতে যেমন সঙ্গী পাবেন নারী ও পুরুষ সেই বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো।
জান্নাতে যেমন সঙ্গী পাবেন
ولهم فيها أزواج مطهرة وهم فيها خلدون (البقرة : ۲۰)
সূরা আল বাকারা : ২৫
জান্নাতবাসীদের জন্যে পুত-পবিত্র যুগল রয়েছে। সেখানে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করবে।
সৎকর্মশীল ঈমানদার লােকদের জন্যে নির্ধারিত স্থায়ী নিবাস হবে জান্নাত। তথায় অনুপম সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের উপকরণাদির মধ্যে পবিত্র যুগল বা জোড়ও থাকবে।
আরবী ভাষায় (আওয়াজ) যওজ শব্দের বহুবচন। অর্থ যুগল বা জোড়। স্ত্রী ও স্বামী উভয়ের জন্যেই এ শব্দ সমভাবে প্রযােজ্য। স্বামীর যওজ স্ত্রী, আর স্ত্রীর যওজ স্বামী।
এ অর্থে সঙ্কৰ্মশীল পুরুষ পাবে পবিত্র রমণী আর সল্কর্মশীলা রমণী পাবে নির্মল চরিত্রের স্বামী। দুনিয়ার জীবনে যে ব্যক্তি সকর্মশীল ঈমানদার, কিন্তু তার স্ত্রী যদি হয় অসৎ চরিত্রের দুষ্কর্মশীলা। এ ধরনের দুনিয়ার যুগলের পরকালের জীবনে পূর্বের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে।
অতপর সকর্মশীল ঈমানদার লােকটিকে স্ত্রী হিসেবে অন্য কোনাে সৎকর্মশীলা পূত-পবিত্র রমণী দেয়া হবে। আর যদি মহিলাটি হয় সকর্মশীলা আর স্বামী হয় চরিত্রহীন বেঈমান।
তখন ঐ অসৎ স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাকেও অন্য কোনাে চরিত্রবান ঈমানদার স্বামী দেয়া হবে। অবশ্য কোনাে দম্পতির উভয়ই যদি দুনিয়াতে নেককার হয়, তবে পরকালীন জীবনেও তাদের পূর্ব সম্পর্ক বহাল থাকবে।
সর্বাবস্থায় তাদের এ সম্পর্ক হবে চিরস্থায়ী। দুনিয়ার জীবনের স্বামী-স্ত্রী বেহেশতেও স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবে। তাদের সম্পর্ক অটুট থাকবে।-(তাফহীমুল কুরআন)
জান্নাতে যেমন সঙ্গী পাবেন নারী ও পুরুষ
কুরআন শরীফের অনেক মুফাসির উপরােক্ত আয়াতের তরজমায় (1) আওয়াজ শব্দের অর্থ করেছেন স্ত্রী, সংগিনী বা রমণী শব্দ দিয়ে। কারণ, আয়াতের মধ্যে হুম’ শব্দ পুরুষ বাচক সর্বনাম।
তাই তাদের জন্যে আযওয়াজ হবে রমণী বা স্ত্রী। কিন্তু হুম’ শব্দ পুরুষ বাচক সর্বনাম হলেও এর মধ্যে জান্নাতবাসীনী নারীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যে শুধু পুরুষ বাচক সর্বনামের ব্যবহার কুরআনের বিভিন্ন স্থানে পরিলক্ষিত হয়। যেমন- “তােমাদের জন্যে রােযা ফরয করা হলাে” এখানে কুম’ শব্দ পুরুষ বাচক সর্বনাম হলেও তা মূলতঃ নর-নারী উভয়ের জন্যে প্রযােজ্য।
উপরােক্ত আয়াতে কারিমায় (আযওয়াজ) শব্দের বিশেষণ নেয়া হয়েছে ‘ (মােতাহ্হারাহ) শব্দ। সুতরাং, মানে পূতপবিত্র যুগল বা জোড়া। আরবীতে পুংলিঙ্গ বাচক বহুবচন শব্দের (বিশেষণ) স্ত্রীলিঙ্গ বাচক একবচন শব্দ ব্যবহারের রীতি প্রচলিত আছে। কাজেই শব্দের কারণেও ‘আওয়ায’ শব্দ দ্বারা কেবল স্ত্রী বুঝাবে না।
হাদীসে কুদসীতে আছে-
عن ابي هريرة رض قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم، قال الله تعالی اعددت لعبادي الصالحين ما لا عين رأت ولا أذن سمعت ولا خطر على قلب بشر(رواه البخاري، ومسلم والترمذي وابن ماجاه)
হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ বলেছেন, “আমার নেক বান্দাদের জন্য আমি এমন অনেক কিছু রেখেছি, যা কোনাে চক্ষু দেখেনি, কোনাে কান শশানেনি, আর না কোনাে মানুষের অন্তরে সে বিষয়ে জাগ্রত হয়েছে।
-(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযি, ইবনে মাযাহ)
কুরআন শরীফের উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস শরীফ থেকে জানা যায় জান্নাতে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য মওজুদ থাকবে অসংখ্য না-নিয়ামত ও বহু সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সামগ্রী, আরও থাকবে পবিত্র জীবন সংগী—জান্নাতী পুরুষের জন্য সতী-সাধ্বী ও পবিত্র নারী—আর জান্নাতী নারীর জন্য সৎ পুরুষ।
জান্নাতে যেমন সঙ্গী পাবেন নারী ও পুরুষ
জান্নাতের পবিত্র জীবন সংগিনী বা স্ত্রী হবে যাবতীয় বাহ্যিক ও গঠনগত ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে পবিত্র, তাছাড়া পেশাব-পায়খানা রজস্রাব ইত্যাদি ঘৃণ্য বস্তুর ঊর্ধে। তেমনি নীতি ভ্রষ্টতা, চরিত্রহীনতা, অবাধ্যতা প্রভৃতি আভ্যন্তরীণ ক্রটি ও কদর্যতা-প্রভৃতির লেশমাত্রও তাদের মধ্যে পাওয়া যাবে না। (মাআরেফুল কুরআন)
জান্নাতে নর-নারীর পূত-পবিত্রতা বলতে বুঝায় গঠনগত ত্রুটি বিচ্যুতি ও চারিত্রিক কলুষতা মুক্ত হওয়া। তারা পেশাব-পায়খানা ইত্যাদি ঘৃণ্য বস্তু থেকে পবিত্র ও নিষ্কলুষ থাকবে।
অনুরূপভাবে নীতি ভ্রষ্টতা, চরিত্রহীনতা ও আবাধ্যতা প্রভৃতি আভ্যন্তরীণ টি এবং কদর্যতা থেকেও পবিত্র পরিচ্ছন্ন এমনকি নারীদের রজস্রাব থেকেও তারা মুক্ত থাকবে।
অনুরূপভাবে নীতি ভ্রষ্টতা, চরিত্রহীনতা, অবাধ্যতা প্রভৃতি আভ্যন্তরীণ ক্রটি ও কদর্যতার লেশমাত্রও তাদের মধ্যে পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ তারা বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন দোষ তথা দৈহিক ও মানসিক যাবতীয় পংকিলতা, অপবিত্রতা ও নিকৃষ্টতা থেকে থাকবে সম্পূর্ণ পবিত্র ও স্বচ্ছ।
জান্নাতে যেমন সঙ্গী পাবেন নারী ও পুরুষ
কুরআন ও হাদীসে জান্নাতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সামগ্রীকে মানুষের বুঝার জন্যে দুনিয়ার কোনাে আরামদায়ক সুখ সামগ্রীর সাথে তুলনা করা হলেও তার অর্থ জান্নাত ও দুনিয়ার বস্তুর সামঞ্জস্যতা বর্ণনা করা নয়।
বরং মানুষের জানানা বস্তুর নিরিখে তা অনুধাবন করানােই উদ্দেশ্য। বস্তুত জান্নাতের কোনাে নিয়ামতের নজীর দুনিয়ার কোথায়ও নেই।
পৃথিবীর কোনাে চোখ জান্নাতের নিয়ামত দেখেনি, কোনাে কান সে ব্যাপারে শােনেনি, আর কোনাে মানুষের অন্তরে তার ধারণারও উদ্রেক হয়নি।-(হাদীসে কুদসী)
তথ্যসূত্র (Source):
১. আল-কুরআনুল করীম-ইসলামিক ফাউণ্ডেশন;
২. মায়ারেফুল কুরআন-মুফতী মুহাম্মদ শফী (র);
৩. কুরআনুল হাকীম-শাহ রফিউদ্দীন (র) ও আশরাফ আলী থানবী (র);
৪. বায়ানুল কুরআন-আশরাফ আলী থানবী (র);
৫. তাফহীমুল কুরআন-সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (র);