Sign In

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক মর্যাদার মূলনীতি

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক মর্যাদার মূলনীতি

প্রিয় বন্ধুরা আজকে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা জানার চেষ্টা করবো স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক মর্যাদার মূলনীতি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের সম্পর্কটা কেমন এবং আকর্ষণীয় ও মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্কে অবগত করেছেন।

আর নারীদের জন্যেও ন্যায়সংগতভাবেই ঠিক সেসব অধিকার রয়েছে যেমন তাদের উপর রয়েছে পুরুষদের অধিকার। অবশ্য তাদের উপর পুরুষদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ তাআলা মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী।

সূরা আল বাকরাঃ ২২৮

নারীদের উপর যেমন পুরুষদের অধিকার রয়েছে। তেমনি পুরুষদের উপরও রয়েছে নারীদের অধিকার। আর উভয়কেই উভয়ের অধিকার প্রদান করা একান্ত কর্তব্য। তবে এতটুকু পার্থক্য আছে যে, পুরুষদের মর্যাদা নারীদের তুলনায় কিছুটা অধিক।

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক মর্যাদার মূলনীতি

এ আয়াতে সেই দিকেই ইংগিত করে বলা হয়েছে, অর্থাৎ নারীদের তুলনায় পুরুষদের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। সূরা নিসায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে-

الرجال قوامون على النساء بما فضل الله بعضهم على بعض وبما أنفقوا من أموالهم

পুরুষরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল। কারণ, আল্লাহ তাদের একের উপর অপরকে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন এবং এ জন্যে যে পুরুষরা নারীদের পেছনে তাদের সম্পদ ব্যয় করেছে।

আল কুরআনে সূরা আল বাকারার এ হােট আয়াতাংশে নর-নারীর দায়িত্ব। ও কর্তব্যের বিরাট বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে। এতে নারী-পুরুষের অধিকার সম্পর্কিত মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে।

এখানে উভয়ের অধিকার ও কর্তব্য পালন সমভাবে ওয়াজিব করে দেয়া হয়েছে। অধিকন্তু আয়াতাংশে স্ত্রীলােকদের অধিকারের কথা পুরুষদের অধিকারের পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে।

অর্থাৎ পুরুষদের উচিত তারা যেন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নারীদের অধিকার প্রদান করে। কারণ, পুরুষ তাে নিজের বাহুবলে ও আল্লাহ প্রদত্ত মর্যাদা বলে নারীর কাছ থেকে নিজের অধিকার আদায় করে নেয়।

কিন্তু পুরুষদের উচিত নারীদের অধিকারের কথা চিন্তা করা। কেননা সাধারণত নারীরা শক্তি দিয়ে নিজ অধিকার আদায় করতে পারে না। আল্লাহর বাণীর শব্দাবলী খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক মর্যাদার মূলনীতি

এখানে শব্দ দিয়ে স্বামী ও স্ত্রীর কর্তব্য ও অধিকারের সমতার কথা বলা হয়েছে।

অর্থাৎ উভয়ের প্রতি উভয়ের অধিকার সমান। তাই বলে এর মানে এ নয় যে, উভয়কেই একই ধরনের কাজ করতে হবে এবং তাদের কর্মস্থল অভিন্ন হবে।

কারণ প্রকৃতিগতভাবেই তাদেরকে দৈহিক আকৃতি, গঠন, শক্তি ও সামর্থের পার্থক্য করা হয়েছে। যে কারণে তারা সামাজিক ও পারিবারিক কাজে পরস্পরের বিকল্প নয় বরং পরিপূরক বা সম্পূরক।

আল কুরআনে পুরুষদের বিশেষ মর্যাদা দানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, পুরুষদের জন্যে নারীদের তুলনায় বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।

এখানে পুরুষদেরকে স্ত্রীদের তত্বাবধায়ক ও জিম্মদার ঘােষণা করা হয়েছে। যেমন সূরা আন নিসায় ৬ বলে পুরুষদেরকে কর্তৃত্বশীল বানিয়ে দেয়া হয়েছে।

এ তত্ত্বাবধান ও কর্তৃত্ব দান এজন্যে যে, পুরুষদের দৈহিক গঠন ও মানসিকতার সৃষ্টিগত পার্থক্যের দরুন তারা কর্তৃত্ব করারই উপযােগী। তাছাড়া স্ত্রীদের যাবতীয় ভরণ পােষণের দায়িত্ব স্বামীরই উপর বর্তায়।

আর স্ত্রীগণ হচ্ছে তাদের সহযােগী মাত্র। আল-কুরআনের ভাষায় স্ত্রীদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যেমন জঘন্য অন্যায় তেমনি তাদের। বল্গাহীনভাবে পুরুষদের আওতা মুক্ত করে দেয়াও নিরাপদ নয়।

বৈষয়িক জীবনে স্ত্রীদের পুরুষদের সম্পূর্ণ আওতামুক্ত করা নিতান্ত ভয়ের কারণ। এতে করে পৃথিবীতে রক্তপাত, ফিতনা-ফাসাদ ও বিবাদ-বিষদাদের সৃষ্টি হয়ে থাকে। আর সমাজে বিস্তার লাভ করে লজ্জাহীনতা, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা।

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক মর্যাদার মূলনীতি

হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন সমাজকে করে কলুষিত

আজকের বিশ্বে নারী প্রগতি ও নারীর অধিকারের নামে নারীকে পুরুষদের বিকল্প হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। অথচ সৃষ্টি রহস্যে নর-নারী হলাে পরস্পরের পরিপূরক বা সম্পূরক।

আল-কুরআন নারীকে তার স্বাভাবিক মর্যাদা দিয়েছে। কিন্তু তথাকথিত প্রগতিবাদীরা নারীকে স্বভাব-প্রকৃতির বিরুদ্ধে পুরুষদের কর্মস্থলে টেনে এনে সমান অধিকারের কথা বলে তাদের কাঁধে দিয়ে বসেছে দ্বিগুণ বােঝা।

স্বভাব-প্রকৃতির দেয়া নারীত্বের দায়িত্ব আর তারই সাথে কথিত প্রগতিবাদীদের আরােপিত পুরুষের সমান পুরুষােচিত দায়িত্ব। এতে করে নারীদের প্রতি বাড়তি যুলুমই চাপিয়ে দেয়া হয়েছে মাত্র।

প্রকৃতিগতভাবে নারীত্ব ও মাতৃত্বের দায়িত্ব তাদের পালন করতেই হচ্ছে।

আবার পুরুষদের কর্মক্ষেত্রে তাদের প্রতিযােগী হয়ে উপার্জনের দায়িত্বও তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

সামাজিক শান্তি শৃংখলা মানব চরিত্রের স্বাভাবিক প্রবণতা, সর্বোপরি স্ত্রীলােকদের সুবিধার্থেই পুরুষকে স্ত্রীদের উপর কিছুটা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। অধিকন্তু তা পালন করা ফরয করেও দেয়া হয়েছে।

এর অর্থ অবশ্যই এ নয় যে, পুরুষরা স্ত্রীদের সাথে যথেচ্ছ আচরণ করবে অথবা স্বামীরা স্ত্রীদের ঘরের আসবাবপত্র বা গৃহপালিত জন্তু-জানােয়ারের মত ব্যবহার করবে।

বরং পুরুষদের এ বিশেষ মর্যাদাটুকু রাব্বল আলামীনের পক্ষ থেকে এজন্যেই বরাদ্ধ করা হয়েছে যাতে পৃথিবীর জীব পরিবেশ তথা মানব পরিবেশের সামগ্রিক ভারসাম্য সংরক্ষিত হয়।

প্ৰসংগত উল্লেখ্য যে, একমাত্র ইসলামই নারীদের যথার্থ মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে। কথাটা এজন্যে প্রশ্নাতীত সত্য যে ইসলাম তথা কুরআনসুন্নাহ সেই আল্লাহরই দেয়া বিধান, যে আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন—তাদের নর-নারীতে শ্রেণী বিন্যাস করেছেন। আর আল্লাহর চেয়ে তার সৃষ্টির কল্যাণ করার যােগ্যতা কার আছে?

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক মর্যাদার মূলনীতি

নারীর সামাজিক মর্যাদা সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ আল কুরআনে বলা হয়েছে ; তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সদাচরণ করে জীবন-যাপন কর।

হাদীসে এসেঁছে ,“তােমাদের মধ্যে উত্তম সে ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” তা ছাড়া “বেহেশত মায়েদের পদতলে” ইত্যাদি। নারীগণের অর্থনৈতিক অধিকার ইসলাম ছাড়া আর কোথাও নেই বলা চলে।

ইসলাম নারীকে তারই হাতে সমস্ত মােহরানার টাকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। স্ত্রীর চাহিদা মােতাবেক মােহরের অর্থ তাকে দিতে হয়। আর মােহরের পরিমাণ হতে হবে মর্যাদার ভিত্তিতে।

টাকা স্ত্রীকেই দিতে হয় আর তাতে স্বামীর কোনাে অধিকারই থাকে না। আর তখন থেকে স্ত্রীর ভরণপােষণের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব স্বামীর উপরই ন্যস্ত।

কসমেটিকস থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যয়ভার স্বামীকে বহন করতে হয়। এমনকি স্ত্রীর আয়ের উৎস থাকলেও তার ব্যয়ভার স্বামীর উপরই বর্তায়। তার আয়ের মালিক সেই হবে অথচ তার ব্যয়ভার সম্পূর্ণরূপে বহন কমবে স্বামী। পিতা-মাতার সম্পতিত্তে ও স্বামীর সম্পত্তিতেও তার হিস্যা সংরক্ষিত আছে।

নারীর এতবড় অর্থনেতিক নিরাপত্তা বিশ্বের অন্য কোনাে জাতির মধ্যে নেই।

মুসলিম মহিলারা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই মতলববাজদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে এত সুন্দর খােদায়ী ব্যবস্থা তথা ইসলামী জীবন পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করতে দেখা যায়। কতই না ভাল হত, যদি শিক্ষিত মহিলারা দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা করত।

আজকের সমাজে আল্লাহর দেয়া উপরােক্ত বিশেষ মর্যাদার অপব্যবহার করে পুরুষরা নারীদের উপর যেমন চালাচ্ছে নির্যাতন ও অত্যাচার; তেমনি এ নির্যাতন থেকে নিষ্কৃতির নামে এবং নারী স্বাধীনতার ধূয়া তুলে অবলা নারীদের নামিয়ে আনা হচ্ছে পুরুষদের কর্মস্থলে।

নারী মুক্তির আকর্ষণীয় যবনিকার অন্তরালে তাদের গণ্য করা হচ্ছে ভােগ্য পণ্যে বা ভােজার দ্রব্যে। মানব ইতিহেিসর সামগ্রিক পরিণতির প্রতি লক্ষ্য রেখে এগুতে অক্ষম অসহায় নারী সমাজ অপরিণামদর্শী ও সামগ্রিক কল্যাণ সম্পর্কে অজ্ঞ পণ্ডিতমন্য কতিপয় পুরুষের পাতানাে ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের চরম অবমাননা ও লাঞ্ছনা গঞ্জনার হাতে সঁফে দিচ্ছে।

আজকের পাশ্চাত্যের নারী সভ্যতার ইতিহাস একথার জ্বলন্ত সাক্ষী। তবুও কি মুক্তিকামী নারী সমাজের বােপােদয় হবে না। অন্যথা অনাগত প্রজন্ম এদের কখনাে ক্ষমার চোখে দেখবে না। তাদের আদালতে এদের দেখতে পাওয়া যাবে আসামীর কাঠ গড়ায়।

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক মর্যাদার মূলনীতি

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন,

আল্লাহ তা’আলা নারীদের তুলনায় পুরুষদের বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন। তাই তাদের (পুরুষদের) অতি ধৈর্য ও সতর্কতা সহকারে চলা উচিত।

যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে কত পালনে কোনাে প্রকার গাফলতি বা ত্রুটি দেখা যায়, তবে তা সহ্য করে নেবে এবং স্ত্রীদের প্রতি নিজের কর্তব্য পালনে মােটেই অবহেলা করবে না।

পরিশেষে আল্লাহর নিজের বৈশিষ্ট্য প্রসংগে স্বয়ং তাঁরই কথা,: “আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী” বলে ইংগিত করা হয়েছে যে নর-নারীর বৈশিষ্ট্যের তারতম্য ও পুরুষদের কিছুটা অতিরিক্ত মর্যাদাদান।

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক মর্যাদার মূলনীতি

কোনাে প্রকারের বৈষম্য সৃষ্টি বা পক্ষপাতিত্বজনক নয়; বরং তার অসীম জ্ঞান ও অনুপম ক্ষমতার কারণেই তিনি সৃষ্টিকূলের বৈশিষ্ট্য ও তারতম্য সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন বিধায় যা কল্যাণকর তাই করে থাকেন।

সৃষ্টির সার্বিক মঙ্গল কোন্ পথে—তা একমাত্র স্রষ্টাই জানেন। তাই তিনি সেভাবেই সুশৃঙখল নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

আমাদের প্রকাশিত সকল তথ্য সবার আগে পাওয়ার জন্য গালফ্হাইব এর ফেসবুক পেইজ লাইক ও ফলো করে রাখুন এবং ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *