সময় মাপার নীতিসমূহ
সময় নিয়ে যাদের আগ্রহ সময় মাপার নীতিসমূহ জানা তাদের জন্য জরুরি। আমরা সবাই সময়ের মধ্য দিয়ে যাই। এই মহা বিশ্বের সব কিছুই সময়ে আবহে চলে। কিন্তু সময় পরিমাপ করা হয় কিভাবে তা জানা আমাদের জন্য আবশ্যক। সময় পরিমাপের নীতিগুলো কি এই নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
গালফ হাইব ডট কম এর নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে গতপর্বে আমরা আলোচনা করেছি বিংশ শতাব্দীতে পদার্থবিদ্যার দর্শনে সময়ের ধারণা নিয়ে। আশা করছি আপনার সেটি ভালো লেগেছে। তাহলে পড়ে ফেলুন আমাদের আজকের আর্টিকেল।
সময় মাপার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি
ক্রোনোমিটার
জ্যোতিবিজ্ঞানে, গতিবিদ্যায় ও আণবিক বিজ্ঞানে বিভিন্ন প্রয়োজনে সময় মাপার যন্ত্রাদি ব্যবহার করা হয়।
জ্যোর্তিবিদ্যায় টেলিস্কোপ দিয়ে তারা, নক্ষত্রজগত পর্যবেক্ষণ করার সময় ঠিক সময়টা লিপিবদ্ধ করতে হয়। এটা একটা ক্ষুদ্র, ভিজুয়াল ট্রানজিট যন্ত্র বা মেরিডিয়ান সমতলে আটকানো । অধুনা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে সময় এবং তারার অক্ষাংশ এক সাথে রেজিস্ট্রি হয়।
১৯৩৪ সনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত হত জেনিথ টিউব ফটোগ্রাফী, উহা টেলিস্কোপ টিউবের সাথে সমান্তরালভাবে আটকানো থাকত। উঁচু দিগন্তে কোন তারার আগমন ঘটলেই একটি মোটর ফটোপ্লেটটিকে টেনে নিয়ে যেত। ঘুর্ণায়মান প্লেটে সঙ্কেত পড়া মাত্র একটি ঘড়ি তা রেকর্ড করে নেয়।
যান্ত্রিক ঘড়ি হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র যা সময়ের গতি বা প্রবাহ নির্দেশ করে। এতে রয়েছে দুটি/তিনটি কাটা যা সময়ের গতিকে নির্দেশ করে, কাপতে কাপতে চলতে থাকে অবিরত, আর রয়েছে সময় নির্দেশক সংখ্যা সোজা কথায় কয়টা বাজল।
কাটা বা ডিজিটাল অবয়বের ঘড়ি এখন বাজারে দেখা যায়। ১৫৮৩ সনে গ্যালিলিওর যুগান্তকরী আবিষ্কার ‘দোলনের সময়’ নির্ণয় যান্ত্রিক ঘড়ি আবিষ্কারে সাহায্য করে।
ডেনমার্কের গনিতজ্ঞ হুগেনস প্রথম দোলক ঘড়ি আবিষ্কার করেন ১৬৫৬ সনে। ১৯২৫ সালে এই ঘড়ির চরম উৎকর্ষতা সাধন হয়। মন্থর গতির হার হচ্ছে এক সেকেন্ডের এক হাজার ভাগের এক ভাগ এক দিনে।
কোয়ার্টজ স্ফটিক ঘড়ি
কম্পনের হার বা মাত্রাকে সুতীক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রিত করে সময় জ্ঞাপন করে এই ঘড়ি। ১৯৩০ সনে এটা প্রথম ব্যবহৃত হয়। ১৯৬০ সনের দিকে উন্নতি হয় বেশ।
কোয়ার্টজ স্ফটিক তার চেহারা নষ্ট হয়ে গেলে তার দেহের বিভিন্ন অংশে ইলেকট্রিক বিভবের পার্থক্য হয়ে পড়ে। এই বিভব পার্থক্যটুকুই স্ফটিকের ইলেকট্রিক সার্কিটের কম্পনের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বর্তমানে প্রতিদিনে ১০১১ বার কম্পনে ১টি কম্পনের তারতম্য ঘটে এই ঘড়িতে। অনেক সুক্ষ্ম মাপের সময়ের জন্য এ ঘড়ির দরকার পড়ে।
আণবিক ঘড়ি
অণুর এনার্জি পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়মিত বৈদ্যুতিক চুম্বকীয় বিকিরণের তরঙ্গ সৃষ্টি করে এই ঘড়ি তার কাজ চালায়।
বিভিন্ন অণু/পরমাণুর তরঙ্গ একই সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে এক্ষেত্রে।
১৯৪৭ সনে এ ঘড়ির উদ্ভব ঘটে। অবস্থান থেকে এনার্জি যখন অন্য অবস্থানে যায় (উত্তপ্ত করলে) তখন তার রশ্মি বিকিরণকে রেকর্ড করা হয়।
১৯৪৯ সনে অ্যামোনিয়া নিয়ন্ত্রিত ঘড়ি ওয়াশিংটনে প্রথম ব্যবহৃত হয়।
১৯৫৪ সনে শব্দের ব্যবহার করে এর উন্নতি সাধন করা হয়েছে। ১০০ বিলিয়ন বারে ১ বার ভুল হয়।
- আরও পড়ুনঃ বিশ্বকোষের ভাষায় সময় বা কাল
সিজিয়াম ঘড়ি
মৌলিক পদার্থ সিজিয়ামের রশ্মি প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে সিজিয়াম বিম আণবিক ঘড়ি ১৯৫৫ সনে সর্বপ্রথম ব্যবহার হয়ে থাকে। সিজিয়ামের কম্পনের মাত্রার সঙ্গে এফিমেরিস সময়ের সামঞ্জস্য করে চন্দ্রের দূরত্ব মাপা হয়েছে পৃথিবী থেকে।
এতে দেখা গেছে প্রতি সেকেন্ডে উত্তপ্ত সিজিয়ামের অণু/পরমাণুগুলি ৯, ১৯২, ৬৩১, ৭৭० বার কাপে । অর্থাৎ ৯ বিলিয়ন বারের উপর কাপে ১ সেকেন্ডে।
৩০ কেজি ওজন বিশিষ্ট একটি সিজিয়াম ঘড়ি নির্মাণ করা হয়েছে যাতে ভুল হয় ১০ ট্রিলিয়ন বারে ২ বার মাত্র। এসব ঘড়ি দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হবে না কোনদিন। তবে পরীক্ষাগারে অনেক সুক্ষ্ম মাপজোকের বেলায় এ ঘড়ি অপরিহার্য্য।
হাইড্রোজেন ঘড়ি
হার্ভার্ডেড আবিষ্কৃত হয় এটা। অতি উচ্চ স্থিতিশীল হাইড্রোজেন ম্যাজের (সুক্ষ্ম কণা) যার পরিমাণ হচ্ছে ১০০ ট্রিলিয়ন পার্টে ১ বার। এটা তরঙ্গ ত্বরণ যন্ত্রপাতিতে প্রাথমিক কণাদের আয়ুষ্কাল মাপতেই ব্যবহৃত হয়।
রুবিডিয়াম ঘড়ি
উচ্চ স্থিতিশীল গ্যাস কোষ ব্যবহার করে রুবিডিয়াম ঘড়ি আবিষ্কৃত হয়েছে। সিজিয়াম ঘড়ির মত অত নির্ভরশীল নয়। নির্মাণে ও স্থাপনের উপর কম্পনের নির্ভরশীলতাই এ ত্রুটির কারণ।
সঠিক সময় নির্ধারণের প্রচেষ্টা
গত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা এটা অনুভব করেছেন —বৈজ্ঞানিক গবেষণার উন্নতির সাথে সাথে। ১৯৬৪ সনে ওজনের সম্মেলন ঠিক করে দেয় ‘সিজিয়াম এর আইসোটপ ১৩৩ পরিবর্তনের সময় যে বিকিরণ হয় তার কম্পনের হার হচ্ছে প্রতি আণবিক সেকেন্ডে ৯,১৯২,৬৩১,৭৭০ বার।’ এক সৌরদিনে ৮৬,৪০০ গড় সেকেন্ড।
এটা আণবিক সময়ের ৮৬,৪০০.০০২৬ সেকেন্ড হচ্ছে গড় সৌরদিনের সঠিক দৈর্ঘ্য (সময়)। বিশ্বে প্রায় ৫০টি আণবিক ঘড়ি রয়েছে। রকেট, শীপে, মিসাইল সেন্টারে এগুলি ব্যবহৃত হয় । কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্য নিয়ে সঠিক সময় বিভিন্ন দেশের রেডিও টেলিভিশনে প্রচারিত হয় প্রতিদিন।
কোটি কোটি বৎসর আগের ফসিল, বস্তুর বয়স নির্ণয় করা হয় তেজষ্ক্রিয়তার উপর নির্ভর করে। ১০০ থেকে ৫০ হাজার বছরের আগের জিনিসের বয়স নির্ণয় কার্বন-১৪ পদ্ধতি ব্যবহার করে সম্ভব।
মহাজাগতিক রশ্মির ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-১৪ উৎপন্ন হয় এবং খাদ্য দ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমে মানবদেহে কার্বন-১২ প্রবেশ করে এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না । কার্বন-১৪ এবং কার্বন-১২ এর অনুপাত বের করে তারপর বয়স নির্ণয় করা হয়।
- আরও পড়ুনঃ মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিখন-শেখানো
আপেক্ষিকতাবাদে বলা হয়েছে, চলন্ত ঘড়ি (রকেটে, যানবাহনে) পড়ে থাকা, ঘড়ি অপেক্ষা আস্তে আস্তে চলে। তবে এতে ২টি তুলনার ঘড়ি এবং তৃতীয় নিরপেক্ষ ঘড়ির কথা হিসেবে রাখতে হবে।
কম শক্তিশালী অভিকর্ষ ক্ষেত্রে সময় (ঘড়ি) দ্রুত দৌড়ায়। সূর্যের চতুর্দিকে আবর্তনের ফলে, অভিকর্ষ ক্ষেত্রের টানেও সময় মন্থর হয়ে পড়ে। পৃথিবীর পূর্ব গোলার্ধে ভ্রমণ করলে ঘড়ির সময় পার্থক্য দেখাবে পশ্চিম দিকের যাত্রীর ঘড়ির তুলনায়।
পৃথিবীর ঘুর্ণনের ফলে এটা হচ্ছে। পৃথিবী পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ঘুরছে। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে রাত ০.০৬ মাইক্রো সেকেন্ড মন্থর হয়েছে এবং পশ্চিম দিকে বেড়ে গেছে ০.২৭ মাইক্রোসেকেন্ড। সময়ের এ রকম আরো কত বিচিত্র গতি রয়েছে তা শুধু সময়ের সৃষ্টিকর্তাই জানেন । কোরানে আল্লাহ নিজেকেই মহাকাল বলে ঘোষণা করেছেন ।
সময়ের বাহন ঘড়ির ইতিহাস
ছ’হাজার বছর আগে প্রাচীন মিশরে সমস্ত দিনকে ১২ ঘন্টায় ভাগ করা হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২৭০০ অব্দে চীনারাও একইভাবে সময়ের ভাগ করেছিল। দিন ও রাতকে ১২ ঘন্টায় ভাগ করার পদ্ধতিটা গ্রীকদের মধ্যেও প্রচলিত ছিল;
সূর্য ঘড়ি
মিশরে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ অব্দে সবচেয়ে প্রাচীন সূর্য ঘড়ির সন্ধান মিলেছে এটা সহজ যন্ত্র। এতে নোমন নামে একটা কাঁটা বা নির্দেশক আছে। এটা এমনভাবে আটকান থাকে যাতে এর ছায়া একটা সমতল পিঠে বা ডায়ালের উপর পড়ে। বিভিন্ন ঘন্টা নির্দেশ করার জন্য ডায়ালের গায়ে মিনিটের চিহ্ন দেয়া থাকে ।
পৃথিবীর প্রায় দেশেই সূর্য ঘড়ির প্রচলন ছিল। অনেকে মনে করেন যে, মিশরের পিরামিড সময় হিসেব করার কাজেও ব্যবহৃত হত। নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের ক্লিওপেট্রার সূচ হয়তো প্রকাণ্ড সূর্য ঘড়ির নোমান হিসেবে তৈরি হয়েছিল।
- আরও পড়ুনঃ বিভিন্ন শিখন তত্ত্বের প্রাথমিক ধারণা
খ্রিস্টপূর্ব ২৪০ সনে বেরোসস্ নামে এক ক্যালডীয় পাদ্রী জ্যোতির্বিদ সম্পূর্ণ নতুন ধরণের সূর্য ঘড়ি আবিষ্কার করেন। সমতল ডায়ালের পরিবর্তে তিনি একটা ফাঁপা বলের অর্ধাংশের আকৃতির ন্যায় এক ডায়ালের ব্যবহার করেন।
এতে নোমানটি থাকত ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরালভাবে । অর্ধ-গোলক ডায়ালের ভেতর নোমনের ছায়ার অবস্থানগুলিকে চিহ্নিত করে ঘন্টা ও মিনিটের হিসেব করা হত। “বেরোসিসের হোমিসাইকেল” নামে এ ঘড়ি কয়েকশ বছর ধরে ব্যবহৃত হয়েছে।
তাপরপর অঙ্কশাস্ত্রের উন্নতির সাথে সাথে সূর্য ঘড়িরও উন্নতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ত্রিকোণমিতি বেশ উপকারে এসেছে। খ্রিস্টীয় আঠারো শতকে নতুন ঘড়ি আবিষ্কারের ফলে সূর্য ঘড়ির ব্যবহার কমে যেতে থাকে।
ঢাকার বলদা গার্ডেনে অবস্থিত একটি সূর্য ঘড়ি এখনও সময় দেখিয়ে যাচ্ছে। যখন সূর্য থাকে তখন শুধু দিনের বেলায় এ ঘড়ি চলে।
জল ঘড়ি
৫০০০ বছর আগে চীনদেশে জলঘড়ি বা ক্লেপসাইড্রার প্রচলন ছিল । পাত্রের তলার একটা ফুটো থাকত আর সেটা দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি নিচে পড়ত । ফুটোটাকে ছোট বড় করে সহজেই পানি পড়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করা যেত।
পানির পাত্রটিকে ২৪টি ভাগে ভাগ করে এই ভাগগুলো দাগ কেটে চিহ্নিত করা হত। পানি কমে বিভিন্ন দাগের সমান হয়ে সময় নির্দেশ করত।
সে যুগে ভারতবর্ষে আর এক ধরণের জল ঘড়ির প্রচলন ছিল। একটা গামলার তলায় ছোট একটা ফুটো থাকত। পানি ভর্তি আর একটা বড় গামলায় এটাকে ভাসিয়ে দেয়া হত, ফলে তা আস্তে আস্তে পানিতে ডুবতে থাকত। গামলার গায়ে দাগ কেটে তখন সময়ের হিসেব করা যেত।
খলিফা হারুণ-অর-রশীদ ৮০৭ সালে ফ্রান্সের বিজ্ঞ রাজা শার্লমেনের জন্য একটি সোনার পাতে মোড়া জল ঘড়ি উপহার পাঠান। এ ঘড়ির ডায়ালে বারোটি ঘন্টার চিহ্নের বদলে ছিল বারোটি দরজা।
যখন কোন ঘন্টা নির্দেশ করার সময় হত তখন সে ঘন্টার দরজা খুলে যেত। সে দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসত নির্দিষ্ট সংখ্যক বল। বলগুলো পিতলের একটা পাত্রের উপর পড়ে সময় সঙ্কেত জানিয়ে দিত। ঠিক বারোটার সময় প্রতিটি দরজায় দেখা দিত একজন ঘোড়সওয়ার, তারপর দরজাগুলি বন্ধ হয়ে যেত।
অতীতে আমাদের বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য শহরেও জল ঘড়ি ও সূর্য ঘড়ির প্রচলন ছিল। প্রায় ১৩৫ বৎসর আগে বিখ্যাত বাগী বিপিনপাল তার আত্মজীবনীতে জল ঘড়ি ব্যবহারের এক মনোজ্ঞ বর্ণনা দিয়েছেন।
আওয়ার গ্লাস বা বালি ঘড়ি
খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে লিওপ্রান্ড নামে কার্থেজীয় এক সন্নাসী এ ঘড়ি আবিষ্কার করেন। এই যন্ত্রে ফানেলের মত দু’টো কাঁচের পাত্র একটা সৰু ‘নল দিয়ে যুক্ত থাকত। কাঁচের পাত্র দুটা সমান আকৃতির এবং একটা অন্যটার উপরে অবস্থান করত।
উপরের পাত্রটিতে ভরা থাকত খুব সুক্ষ্ম, পরিষ্কার বালি। সরু নল দিয়ে, এ বালি গড়িয়ে পড়ত অন্য পাত্রে।
সমস্ত বালি পড়তে সময় লাগত এক ঘন্টা।
ঠিক এক ঘন্টা পরে যন্ত্রটিকে ঘুরিয়ে দেয়া হত তাতে উপরের খালি পাত্রটি থাকত এবার নিচে। আর নিচের বালি ভর্তি পাত্রটি থাকত উপরে।
এভাবে সারাদিন ঘড়ির ব্যবহার চলত। অনেক ঘড়িতে বালির বদলে পারদ ও ব্যবহৃত হত বলে জানা যায়।
বহুবিদ কাজের জন্য আওয়ার গ্লাস তৈরি করা হত। জাহাজের গতি ঠিক করার জন্য ২৮ সেকেন্ডের হিসেব দেয়ার মত এরকম আওয়ার গ্লাস প্রথম যুগে তৈরি হয় । জাহাজের গতি মাপার জন্যে ‘লগচিপ’ নামে এক টুকরো কাঠকে ‘লগলাইন’ বলে পরিচিত সরু রশি দিয়ে বেঁধে সাগরে ফেলে দেয়া হত।
- আরও পড়ুনঃ শিখন মডেল : 5E নির্দেশনামূলক মডেল
এই রশিতে প্রতি ৪৭ ফুট ৩ ইঞ্চি পরে পরে একটি করে গেরো বা নট দেয়া থাকত। কাঠটা পানিতে ফেলে দিলেই রশিতে টান পড়ত। যে নাবিক রশিটি ধরে থাকত সে দেখত ২৮ সেকেন্ডে তার হাত দিয়ে কয়টি গেরো বা নট বেরিয়ে চলে যাচ্ছে।
যদি ১০টি গিঠ যেত, তবে তাই হত জাহাজের গতিবেগ। এ থেকেই নৌযানের গতিবেগ সম্বন্ধীয় ‘নট’ কথাটি এসেছে। হিসেবটা ছিল খুবই মজার। ৪৭ ফুট ৩ ইঞ্চি ১ নটিক্যাল মাইলের (৬,৮০০২০ ফুট) অনুপাত;
যেমন ২৮ সেকেন্ডে আর এক ঘন্টার অনুপাত ছিল সমান। সে জন্য গিঠ গোনা আর নটিক্যাল মাইল গোণার ফল একই হত।
আগুন ঘড়ি
প্রাচীন যুগে চীন দেশের লোকেরা এক রকম দড়ি ঘড়ি তৈরি করেছিল। দড়ির গায়ে সমান দূরে দূরে কতকগুলো গিট দিয়ে দিত। এক মাথায় আগুন লাগিয়ে দিলে দড়িটা ধীরে ধীরে জ্বলতে থাকত। এক গিট থেকে অন্য গিট পর্যন্ত পৌঁছাতে কতটুকু সময় লাগল তার হিসেবে করা হত। জাপানেও এ ব্যবস্থা চালু ছিল!
বাতি ঘড়ি
রোমান আমলে এ ঘড়ি তৈরি হয়। এটা থেকে যেমন আলো পাওয়া যেত তেমনি মিলত সময়ের হিসেব। একটা সরু কাঁচের নল দিয়ে ঘড়িটি তৈরি হত।
নলটার নিচের দিক ছিল বন্ধ। এর গায়ে ঘন্টার দাগ কাটা থাকত। নলটি খাড়াভাবে দাড় করিয়ে তেল ভর্তি করা হত। তারপর সেই তেলের উপর জ্বালিয়ে দেয়া হত বাতি, বাতি জ্বলে তেল পুড়াত আর নল বেয়ে তেলের উপরিভাগ নিচে নেমে আসত।
দাগ কাটা নল থেকে তখন অনায়াশেই সময় নির্ধারণ করা যেত। গ্রামাঞ্চলের লোকেরা এর ব্যবহার করত। মোমবাতি আবিষ্কারের সাথে সাথে এটাকে ঘড়ি হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়।
একটা বিশেষ আকৃতির মোমবাতি পুড়ে শেষ হতে কতক্ষণ লাগছে তাই হিসেব করা হত, এরপর এই আকৃতির মোমবাতিকে ঘন্টা হারে সহজেই ভাগ করা হত।
আর এরূপ ভাগ করা হত মোমবাতির গায়ে নানা রঙ দিয়ে। কথিত আছে যে, ইংল্যান্ডের রাজা আলফ্রেড দি গ্রেট নাকি মোমের ঘড়ি আবিষ্কার করেন।
তিনি দিন ও রাতকে প্রতি আট ঘন্টার প্রহরে তাগ করে নেন। তার এই প্রহরগুলোকে ধর্মকাজে, প্রজাদের কাজে, আমোদ-প্রমোদ ও অবসর বিনোদন হিসেবে ধরা হত।
ক্লক
পুরোপুরি যান্ত্রিক পদ্ধতিতে তৈরি প্রথম ঘড়ি হচ্ছে ক্লক। বলা হয় খ্রিস্টপূর্ব ২০০ সনে আর্কিমিডিস এই যন্ত্র আবিষ্কার করেন। তিনি চাকাযুক্ত একটি যন্ত্র তৈরি করেন। চাকার চলন শক্তি একটা ভারি জিনিসের উপর নির্ভরশীল ছিল। এর শক্তি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন নিয়ন্ত্রক যন্ত্র ছিল না।
ঘড়ি তৈরির ইতিহাসে রোমান দার্শনিক ও গণিতবিদ বোয়োফিয়াস (৪৭৫-৫২৪ সাল) এবং ভেরোনার আর্কিডিকন প্যাসিফিকাসের নাম উল্লেখযোগ্য।
৯৯০ খ্রিস্টাব্দে ফরাসী পাদ্রী গার্বাট পরে (পাপ দ্বিতীয় সিলভেষ্টার) একটি ঘড়ি তৈরি করেন। এর পর ঘড়ি গীর্জায় গীর্জায় ব্যবহৃত হতে থাকে একাদশ খ্রিস্টাব্দ থেকে।
প্রাচীন ও মধ্যযুগের ঘড়িগুলো ছিল বেশ বড় ও ভারী
কখনো কখনো ৫০০ পাউন্ডেরও বেশি ভারী জিনিস ব্যবহার করতে হত। প্রায় দু’শো বছর আগে রাশিয়ার জার একটি বিরাট ঘড়ি বানান, ওজন দু’শো টন। নেপোলিয়নের ১৮১২ সনে মস্কো আক্রমণের সময় অগ্নিকাণ্ডে ঘড়িটির একটা অংশ ফেটে যায়।
এটা ইতিহাসে মস্কোর ঘন্টা নামে বিখ্যাত। মস্কোর ঘন্টা কোনদিনও বাজেনি । গীর্জাতে মানুষকে ডাকার জন্য ও ক্রেমলিনে সময় ঘোষণা (প্রহরীদের প্রহর) ঘোষণার জন্য এটা ব্যবহৃত হবার কথা ছিল।
১৩৬৪ সালে ফ্রান্সের রাজা পঞ্চম চার্লস প্যারিসের রাজপ্রসাদের টাওয়ারে একটা ঘড়ি বসাতে মনস্থ করেন। এজন্যে তিনি ভুরটেমবার্গের প্রসিদ্ধ ঘড়ি নির্মাতা হেনরী দ্য ভিক্কে ডেকে পাঠান । তিনি পনের বছরে ১৩৭৯ সনে ঘড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। সে যুগের ঘড়িগুলোর মধ্যে দ্য ভিকের ঘড়িটিকে অনেকটা আধুনিক ঘড়ির মতো বলা চলে।
দ্যাভিকের ঘড়িটি একটানা ৫০০ বছর পর্যন্ত সঠিক সময় দিয়েছে
নুরেমবার্গের এক ঘড়ি প্রস্তুতকারক পিটার হেনলাইন ঘড়িতে ঝুলন্ত ভারের বদলে একটা স্প্রিং এর ব্যবহার করেন প্রথমবারের মত।
একটা লম্বা স্প্রিংকে যতোই পেঁচিয়ে রাখবার চেষ্টা করা যাক না কেন সেটা সুযোগ পেলেই সে প্যাঁচ খুলে ফেলার চেষ্টা করবে। এই স্প্রিং দিয়ে চালানো হল ঘড়ি। ঘড়িতে চাবি দিয়ে স্প্রিংকে যতো প্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া যাবে, খোলার সময় আবার ততগুলো প্যাচই খুলে আসবে।
কিন্তু স্প্রিংকে তার ইচ্ছে মতো খুলতে দিলে হবে না, তাহলে এক সঙ্গেই সবটা খুলে যাবে। তাই এই স্প্রিং-এর সঙ্গে লাগানো হল গায়ে গায়ে ঠেকানো কতকগুলো ধারকাটা চাকা, তারপর তার সাথে যোগ করা হলো ঘড়ির কাঁটা।
এই সবের ফলে নির্দিষ্ট হারে স্প্রিং-এর প্যাঁচ খুলবে, ঘুরবে ধারকাটা চাকাগুলো আর তার সাথে ঘুরবে ঘড়ির কাটা দুটো। এ স্প্রিং-এর নাম হল মেইন স্প্রিং।
এর ফলে বড় ঘড়ি তৈরি করার প্রয়োজন ফুরাল। তবে এতে নতুন সমস্যা তৈরি হল । ধারকাটা চাকা দিয়ে মেইন স্প্রিংকে ঘুরিয়ে কুণ্ডলী পাকাতে হতো কিন্তু স্প্রিংটা খুলে আসার সাথে সাথে তার চাকা ঘোরাবার শক্তি ও কমে আসত । ফলে মেইন স্প্রিং খুলতে শুরু করার পর ঘড়ি শ্লো চলতে থাকত।
মেইন স্প্রিং এর শক্তির সমতা বিধানের ব্যবস্থা
১৫২৫ সনে মেইন স্প্রিং এর শক্তির সমতা বিধানের ব্যবস্থা করেন জ্যাকব জেক নামে বোহেমিয়ার প্রাগ শহরের এক ঘড়ি নির্মাতা। তিনি নিচ থেকে উপর দিকে সরু হয়ে গেছে এমন একটি চাকা-ফিউজি ব্যবহার করেন।
মেইন স্প্রিং এর ব্যারেলের সাথে ফিতে বেঁধে সে ফিতেকে ফিউজের গায়ে প্যাচানো খাঁজে খাঁজে লাগিয়ে দেওয়া হতো। এখন মেইন স্প্রিং খোলার সাথে সাথে ব্যারেলটাও ঘুরতে থাকত এবং তার গায়ে ফিতেটা আস্তে আস্তে পেঁচিয়ে যেত।
সঙ্গে সঙ্গে ফিতের টানে ফিউজিটাও ঘুরত । প্ৰথমে ফিউজির সরু অংশের ফিতে খুলে যেত-ক্রমে মেইন স্প্রিংয়ের গতি কমে আসায় তার শক্তিও কমে যেতো–তখন ফিতেটা ফিউজির প্রশস্ত জায়গায় টান দিত ।
এভাবে মেইন স্প্রিংয়ের শক্তির সমতা রক্ষা করা হতো, যাতে ঘড়ির উপর সবটুকু শক্তি সব সময়েই সমান থাকে । এটা ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। বাকী সমস্যা বল নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের উন্নতি করা।
ওয়াচ
মেইন স্প্রিংয়ের আবিষ্কারক পিটার হেনলাইন ছোট ঘড়ির (ওয়াচ) প্রবর্তন করেন। এগুলি ক্লকেরই ক্ষুদ্র সংস্করণ। ১৫২৫ সনে ফিউজি ব্যবহার করায় ওয়াচগুলো- বেশ সময় দিতে থাকে।
১৫৫০ সালে লোহার চাকার বদলে পেতলের চাকার ব্যবহার শুরু হয়। এ সময়েই লোহার পিনের বদলে স্ক্রুর ব্যবহার শুরু হয়। ১৬০০ সালের দিকে ওয়াচে স্বচ্ছ কাঁচের প্রয়োগ শুরু হয়। মিনিটের কাটার ব্যবহার আরম্ভ হয় ১৬৭৩ সালের দিকে।
ক্রিশ্চিয়ান হয়গ্যানস, যিনি প্রথম ক্লকে দোলনের ব্যবহার করেন—১৬৭৪ খ্রিস্টাব্দে ‘হেয়ার স্প্রিং এর আবিষ্কার করেন। এটা সময় নির্ণয়ের ইতিহাসে এক নবযুগ আনে । এখান থেকে নির্ভরযোগ্য ওয়াচ তৈরি সম্ভব হল।
নিকোলাস ফ্যাসিও নামে সুইজারল্যান্ডের এক ঘড়ি নির্মাতা প্রথম ঘড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে ‘জুয়েল’ ব্যবহার শুরু করেন। ওয়াচের চাকাগুলো ছোট ধরার (axles) সাথে লাগানো থাকে।
এই ধুরার সরু প্রান্তকে বলা হয় পিভট্। চাকাগুলোর দাঁত খাঁজে খাঁজে মিলিয়ে ঠিকমতো বসিয়ে রাখার জন্য পিভটগুলোকে ধাতুর তৈরি ছোট প্লেটের ফুটোর মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়।
চাকাগুলো যাতে না সরে যায় সে জন্যে উপরে নিচে দুটো প্লেট থাকে
এখন চাকা ঘুরার সাথে সাথে ফুটোগুলো ক্ষয়ে বড় হতে থাকে। ফলে ঢাকা আর ঠিক জায়গায় থাকে না এবং চাকাগুলো খাঁজে খাঁজে আর মিলে না। কাজেই ওয়াচের গতি কমে বন্ধ হয়ে যেত;
ফ্যাসিও চেপ্টা গোলাকৃতি জুয়েলের অংশ কেটে সেই ফুটোতে বসিয়ে দেবার ব্যবস্থা করলেন। গুগুলো ধাতব প্লেটের সাথে মিশে থাকবার ব্যবস্থা রাখা হল।
এখন পিভট্ বেশ শক্ত জিনিসের উপর ঘুরবে এবং একে ঠিকমত তেল দিয়ে রাখলে ঘর্ষন কমে ওয়াচকে সঠিক সময় দেবার উপযোগী করতে থাকবে। এভাবে দুর হল আরেক সমস্যা।
ঘড়ি তৈরির অনেক সমস্যাই আঠার শতকে সমাধান করা হয়। এসকেপমেন্ট সহ অনেক যন্ত্রাংশের উন্নতি সাধন হয়। সুইজারল্যান্ড ও জাপানের ঘড়ি নির্মাতারা বেশ সরস ঘড়ি তেরি করে। ফিউজির সাহায্য ছাড়াই তারা ওয়াচ তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। তাতে যান্ত্রিক জটিলতা অনেক পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে।
১৭২৯ সনে বিলেতের এক কাঠ মিস্ত্রির ছেলে জন হ্যারিসন ছয় বৎসর খেটে একটি ক্রনোমিটার তৈরি করেন যাতে যান্ত্রিক ঘর্ষণের ফলে বা তাপের তারতম্যের ফলে সময়ের কোন ভুল-ত্রুটি হয় না।
নাবিকরা কোন স্থানের স্থানীয় বা সৌরসময় বের করতে পারত
এন্ট্রোলেবের সাহায্যে দুপুরটা ঠিক করতে পারলেই হল। কিন্তু নির্দিষ্ট দ্রাঘিমার সময় জানার জন্য একটা যন্ত্রের দরকার ভীষণভাবে পড়েছিল। সমুদ্রের বুকে কোন স্থানের দ্রাঘিমা বের করার দরকার ছিল, কিন্তু এটার সমাধান স্বয়ং নিউটনও করতে পারেননি।
শুধু হ্যারিসন তার অপূর্ব প্রতিভা দিয়ে ক্রোনোমিটার আবিষ্কার করে এ সমস্যার সমাধান করেন। আধুনিক যুগে ঘড়ি যথেষ্ট উন্নত হয়েছে। এর মধ্যে ১২০টি বিভিন্ন অংশ আছে ৷ ব্যালান্স হুইল হচ্ছে আধুনিক ঘড়ির হৃৎপিণ্ড। এই চাকার প্রতিটি উঠানামাতে ঘড়ির প্রাণসঞ্চার হয় । এক বছরে এই হুইল ১৭৪২ মাইল পথ ঘুরে আসে।
ক্রনোগ্রাফ নামের এক ধরণের ঘড়িতে সেকেন্ডের = ভাগ সময় পর্যন্ত হিসেব করা যায়। অনেক ঘড়িতে দিন তারিখ মাস পর্যন্ত থাকে। যান্ত্রিক ঘড়ির ক্ষেত্রে আর একটি সংযোজন হলো অটোমেটিক বা স্বয়ংক্রিয় ঘড়ি।
কিন্তু এসব যান্ত্রিক উন্নয়নকে অতিক্রম করে ঘড়ির জগতে নতুন অগ্রগতি এল বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক ঘড়ির উদ্ভাবনে ১৯৫২ সনে। বৈদ্যুতিক শক্তিকে একটি কুণ্ডলী ও স্থায়ী চুম্বকের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যালেন্স এ হেয়ার স্প্রিং স্পন্দনকে চালনা করে;
একটি বিদ্যুৎ চুম্বক অস্থায়ী চৌম্বক পদার্থের তৈরি ব্যালেন্সকে আকর্ষণ করিয়ে এবং একটি টিউন কর্ককে ইলেকট্রনিক্সের সাহায্যে অনুনাদী করিয়ে তার অপরিবর্তী উচ্চ কম্পনমানকে ঘড়ি চালনায় কাজে লাগানো হয়ে থাকে ।
সবশেষে নির্ভুল সময় মাপার ক্ষেত্রে এসেছে আণবিক ঘড়ি
এ ঘড়ির মূলসূত্র হচ্ছে এ রকম। অ্যামোনিয়ার অণুতে ত্রিভুজের তিন কোণায় সাজানো তিন হাইড্রোজেন পরমাণুর মধ্য দিয়ে নাইট্রোজেন পরমাণুর স্বাভাবিক উঠা-নামা একটি বিশেষ হারেই মাত্র ঘটতে পারে।
সেই হারটি হচ্ছে সেকেন্ডে ২,৩৮৭ কোটি সাইকেল। একটি কোয়ার্জ কেলাসের কম্পন থেকে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করে তা থেকে ২,৩৮৭ কোটি সাইকেলের রেডিও তরঙ্গ উৎপন্ন করা হয় এক্ষেত্রে।
যতক্ষণ এ নির্দিষ্ট কম্পন হারের রেডিও তরঙ্গ অ্যামোনিয়া ভর্তি চেম্বারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় অ্যামোনিয়া অনুগুলো তা শোষক করে নেয়। কম্পন হারের কোন ব্যতিক্রম হলেই অ্যামোনিয়া অণুগুলো তা শোষণ করে নিতে পারে না বলে চেম্বার থেকে এই রেডিও তরঙ্গের শক্তিটা পার হয়ে আসে।
রেডিও তরঙ্গের সঙ্গে সরাসরিভাবে আসা অ্যামোনিয়া চেম্বারের মধ্যদিয়ে আসা তরঙ্গের তুলনা থেকে বুঝা যায় কোয়ার্জ কেলাসটায় কম্পন হার নির্ধারিত কম্পন হার থেকে কোন দিকে সরে গেছে এবং সেভাবে এর কম্পনহার নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
পারমাণবিক ঘড়ির আর একটি উদাহরণ হল সিজিয়াম ঘড়ি। এক্ষেত্রে কম্পন হারকে তিনশো কোটি ভাগের এক ভাগের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব যার অর্থ হল দশ হাজার বছরে এক সেকেন্ডের বেশি ভুল হবে না এই ঘড়িতে।
সিজিয়ামের পরিবর্তে রুবিডিয়াম বা হাইড্রোজেন পরমাণু ব্যবহৃত হতে পারে নির্ভুল সময় মাপার জন্যে । বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এমন ঘড়ি নির্মানের পরিকল্পনা করছেন যা দিয়ে লক্ষ কোটি ভাগের এক ভাগের মধ্যে নির্ভুলভাবে সময়কে মাপা সম্ভব হবে।
প্রিয় পাঠক, GulfHive এর সময় মাপার নীতিসমূহ আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনাদের সময়ের বিচিত্র কাহিনী ও মহাকালের অজানা রহস্য তথ্য দেওয়ার জন্য প্রকাশিত হয়েছে। এই পোস্ট এর বিষয়ে আপনার কোনো অভিযোগ বা পরামর্শ থাকলে নিচের বাটনে ক্লিক করে কমেন্ট করুন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনি চাইলে ফেসবুকে আমাদের সাথে কানেক্ট থাকতে পারেন।