সময় সম্পর্কে প্রাচীন বিজ্ঞানপূর্ব ধারণা এবং তার প্রভাব
আপনি কি সময় সম্পর্কে প্রাচীন (বিজ্ঞানপূর্ব) ধারণা এবং তার প্রভাব সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আজকের আয়োজন শুধুই আপনার জন্য। বিজ্ঞান চর্চা শুরুর পূর্বে মানুষ সময় সম্পর্কে কি ভাবতো এবং কিভাবে সময় পরিমাপ করতো তার সব কিছুই জানানো হবে এখানে। সময় সম্পর্কে প্রাচীন মানুষদের ধারনা দেওয়া হবে আজ।
গত পর্বে আপনাদের জানিয়েছি বিশ্বকোষের ভাষায় সময় বা কাল বিষয়ে। এর মাধ্যমে আপনার বিশ্ব জ্ঞানের আলোকের সময় বা কাল এর বিষয়ে জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
সময় সম্পর্কে প্রাচীন বিজ্ঞানপূর্ব ধারণা
বিজ্ঞান চর্চার পূর্বে মানুষ সময় সম্পর্কে কি ভাবতো বা কিভাবে সময়ের পরিমাপ করতো তা জানতে চায় অনেকে। আমরা মাঝে মাঝে এটি ভাবি যখন মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে এতটা উন্নত ছিলনা তখন কিভাবে সময় হিসেব রাখা হতো।
সময় সম্পর্কে প্রাচীন বিজ্ঞানপূর্ব গ্রীক, চীনা, হিন্দু ও ইরানী মতবাদ
বৃক্ষের গায়ে যৌবন আসে প্রতি বৎসর, কিন্তু মানুষের যৌবন একবার গত হলে আর আসে না ফিরে, দেহের বৃদ্ধি স্তব্দ হয়ে আসে, ক্ষয়ে ক্ষয়ে একদিন শেষ হয়ে যায়, জীবনের ঘড়ি স্তব্ধ হয়ে যায়। এটা জানার পর মানুষ সময় সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠে সে অনেক হাজার বছর আগে।
- আরও পড়ুনঃ সাধারণ ভগ্নাংশ এবং ভগ্নাংশের তুলনা
যদিও এমন কোন প্রমাণ মানবজাতির হাতে নেই, যে মৃত্যু জীবনের শেষ নয় । তথাপি এটা জরোয়াস্ত্রীয়ান, জুডাইজম, খৃস্টীয় এবং ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করা হয় মৃত্যুর পরপারে অন্য জগতে মানুষ চিরজীবন বাস করবে।
মানুষ জন্ম নেয় একবার মরবেও একবার
তারপর অসীমকালের জন্য পুনর্জাগরণ ঘটবে এমন একদেশকাল দর্শী ধারণার বাইরে রয়েছে দ্বিতীয় মতটি: বৌদ্ধ, অরফিকরা, পিথাগোরাসের মতাবলম্বী বা এবং প্যেটোবাদীরা মনে করে যে মানুষ জীবজন্তু বারে বারে চক্রাকারে জন্ম নেবে বিশ্বসৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে। (সময় সম্পর্কে প্রাচীন বিজ্ঞানপূর্ব ধারণা এবং তার প্রভাব)
তারপর সৃষ্টি ধ্বংসের সময় সবাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। তারপর আবার জন্মাবে, এরকম করে লক্ষকোটি বছর ধরে মহাবিশ্বে জীবনের বিকাশ চলতে থাকবে। হিন্দুরা আরো এক ধাপ এগিয়ে বিশ্বাস করে যে বিশ্ব ধ্বংসের আগে মানুষ চুরাশি লাখ বার জন্ম নেবে।
সময় সম্পর্কে প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক পীথাগোরাস ও এমফিডোক্লস
গ্রীক দার্শনিক পীথাগোরাস ও এমফিডোক্লস (খৃস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ-৫ম শতাব্দীতে) বুদ্ধের মতই নাকি পূর্বজন্মে কি ছিলেন তা স্মরণ করতে পেরেছিলেন।
তারা প্রচার করেন এ রকম পুনর্জন্ম বহুবার ঘটবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের নির্বান, মুক্তি বা মোক্ষলাভ না ঘটবে। শুধু সময়ের আবর্তনে সব ঘুরবে। মানুষ তার চতুষ্পার্শে প্রকৃতির মাঝে চক্রাকারে ঋতুতে ঋতুতে বিভিন্ন পরিবর্তন দেখেই এসব ধারণায় উপনীত হয়েছিল ।
মানুষের এ অভিজ্ঞতা এবং সময়ের পর্যবেক্ষণ বিভিন্ন যুগে বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন হয়েছে। খৃস্টপূর্ব ৫ম-৬ষ্ঠ শতাব্দীতে ইটালীয়ান-গ্রীক দার্শনিক পারমেনিডেস, জেনো প্রচার করেন যে শুধুমাত্র যুক্তিই চিরসত্য।
অভিজ্ঞতার চাইতেও বাস্তবতার যুক্তি মূল্যবান। (সময় সম্পর্কে প্রাচীন বিজ্ঞানপূর্ব ধারণা এবং তার প্রভাব) তাই বাস্তবতা হচ্ছে একক এবং চিরস্থায়ী। তাই সময় হচ্ছে মনের ভুল।
ভারতীয় মায়াবাদীরাও মনে করতেন
ভারতীয় মায়াবাদীরাও মনে করতেন যে এ জগতে সময় জীবন সবকিছুই হচ্ছে মায়া, ফাঁকি। খৃস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে ইরানী ধর্ম প্রচারক জরাথ্রস্ট প্রচার করেন যে স্বল্পকালীন মানবজীবনে দুঃখ কষ্ট পাবার পর রয়েছে মৃত্যুর পর অনন্তজীবন-শেষ বিচার হবে সবাইকে তার কর্মফলের জন্য হিসেব দিতে হবে, তারপর মিলবে তার পুরস্কার।
এখানেই শেষ হবে সময়ের। সময়হীন মহাকালের এক বিরতির ঘোষণা হবে তখন ফেরাউনের মিশরে, ইহুদীরা, খৃস্টানরা এবং মুসলমানরা এতে বিশ্বাসস্থাপন করেছে।
চীনারা, হিন্দুরা ও গ্রীকরা মনে করে যে সময় ধাপে ধাপে ছন্দে ছন্দে প্রবাহিত হয় । প্রথমে ‘ইন’ বা নিষ্ক্রিয় স্ত্রীরূপের প্রকৃতি রাজত্ব করে এরপরে ‘ইয়াং’ বা পুরুষ প্রকৃতি রাজত্ব করে।
চূড়ান্ত সীমায় যাবার পর তাদের লয় শুরু হয় এবং দ্বিতীয়জন তার রাজত্ব শুরু করে। তেমনি দিন-রাত্রি, শুভ-অশুভ, সাদা-কালো তাদের সময় অতিবাহিত করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে।
ইটালীয়ান গ্রীক দর্শনের গতিহীন সময়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন ‘এমফিডোেক্লস’। তিনি বলেন চারটি পদার্থ (মাটি, বায়ু, পানি, আগুন) এবং ‘ভালবাসা’ ও ‘শত্রুতা’ নিয়ে বিশ্বজগৎ বয়ে চলছে।
প্ল্যাটো তার এ ধারণাকে বিকশিত করেন সময় সম্পর্কে প্রাচীন
নব পর্যায়ে যে, দেবতারা মহাশূন্যকে পরিচালনা করেন; স্টার্ট দেওয়ান এবং তারপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে শুরু করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড।
এতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। একেবারে বারোটা বাজার একটু আগে তারা হস্তক্ষেপ করেন । এভবেই চলতে থাকে সৃষ্টি। পর্যায়ক্রমে এ কাজ তারা করে থাকেন।
হিন্দুরাও এ মতে পৌঁছেছে। তাদের ‘কল্প’ পরিবর্তন, ব্রহ্মার দিন-রাত্রি এ ধারণারই পরিচায়ক । মায়া সভ্যতার ধারকরাও এরকম ধারণা করত। হিন্দুরা ও ‘মায়া’রা খুব নিখুতভাবে তাদের ‘কাল’ গণনা করে এসেছে। এটাই আশ্চর্য্যের বিষয় যে সময় সম্বন্ধে তাদের এই বিষ্ময়কর জ্ঞান বিংশ শতাব্দীতেও অভাবনীয়।
প্ল্যাটো এবং অ্যারিস্টোটল মনে করতেন
বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের মতই মানবসমাজ ও ছন্দে ছন্দে ভাল-মন্দের আধিপত্যে গড়বে, ধ্বংস হবে আবার শুরু হবে। প্রাচীন মিশরীয় ও চীনা সভ্যতার উদয় এবং ক্ষয় এ রকম চক্রাকারে ঘটেছিল।
(সময় সম্পর্কে প্রাচীন বিজ্ঞানপূর্ব ধারণা এবং তার প্রভাব) সাম্প্রতিককালে ইটালীর ইতিহাসবিদ গিয়ামবাতিস্তা ভিকো গবেষণায় দেখিয়েছেন যে প্রাচীন গ্রীক রোমান সভ্যতার মতই বিভিন্ন সময়ের চক্রে বর্তমানের পশ্চিমা সভ্যতার উন্নতি ঘটছে।
জার্মান বিজ্ঞানী অসওয়াল্ড স্পেনগ্লার বিভিন্ন সভ্যতায় একটি তুলনামূলক আলোচনায় দেখিয়েছেন যে প্রত্যেকটি সভ্যতাই ধ্বংস হয়ে যায় এবং নির্দিষ্ট সময়ের বিরতিতে আবার জাগে!
ইতিহাসের দর্শনে একমুখী সময়ের ধারণা
‘সব শুরুর শেষ আছে’, এ ধারণা থেকেই বলা হয় সময়ের শুরুও যেমন আছে, তার শেষও তেমনি আছে। আর এমনি ধরাবাঁধা সময়ের কথা কল্পনা করা যায় ঠিক তখনি যদি কোন সময়হীন শক্তি সময়ের এই ঘড়িটাকে চাবি দিয়ে চালু করে দেন, তাহলে তিনিই পারবেন এর গতিকে বন্ধ করতে।
কিন্তু তাকে থাকতে হবে সময়ের বাইরে। এমনি এক ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার কল্পনা করতে হয়েছে মানবজাতিকে সেই প্রাচীনকালে । যার জন্ম নেই, মৃত্যু নেই, জরা নেই, সময় দিয়ে তার কিছুই আসে যায় না। এমনি এক ঈশ্বর পরিকল্পনা অনুযায়ী বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে সাজান মনের আনন্দে।
তিনিই জীবজগতের জন্য সময়ের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করেন । তাদের জন্য নবী পাঠান। তাদেরকে সাবধান করে দেন ধ্বংসের কথা বলে । সোজা কথায়, প্রত্যেকের সময় নির্ধারিত, এটা শেষ হবেই হবে।
সুতরাং সময় থাকতেই মানবজাতিকে সচেতন হতে হবে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে। তার আদেশ নিষেধ অনুসারে জীবনযাপন করতে হবে। মোটামুটি এটাই হচ্ছে সব ধর্মের সার কথা।
বিংশ শতাব্দীর অপর এক দার্শনিক কার্ল জাম্পার সময়ের “অক্ষ বয়স”
বিন্দু বের করেছেন এভাবে—ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ হচ্ছে খৃস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক যখন কনফুসিয়াস, বুদ্ধ, জোরাস্তু, ডিয়াটেরো ইসাইয়া এবং পীথাগোরাস জন্ম নেন প্রায় একই সময়ে।
এ অক্ষ- বিন্দুকে যীশু খৃষ্ট এবং হজরত মোহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত বর্ধিত করলে এর সার্থকতা বোঝা যায়। এ সময়টাকে বলা হয় মানবচেতনার শীর্ষবিন্দু যখন চরম শক্তি ঈশ্বরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হয়েছিল। এটা ছিল সরাসরি যোগাযোগ। কিন্তু সর্বশক্তিমান কালের আওতার বাইরের ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছোড়া হয়েছে যুগে যুগে। (সময় সম্পর্কে প্রাচীন বিজ্ঞানপূর্ব ধারণা এবং তার প্রভাব)
কোন কিছুর বাইরে শুধু শূন্য থেকে সময়ের সৃষ্টি হয়েছে এটা কল্পনা করা বেশ কষ্টসাধ্য। যদি ঈশ্বর সৃষ্টি না করে শুধু বস্তুজগতকে বিন্যস্ত করে থাকেন বা সাজান তাহলে বুঝতে হবে তার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে স্বাধীন সত্ত্বার অধিকারী বস্তুর বেপরোয়া ধর্মের কথা স্বীকার করে নিতে হয়।
প্ল্যাটো তার ‘টাইমাস’ বা ‘সময়’ প্রবন্ধে ঈশ্বরকে এমনভাবেই উপস্থাপিত করেছেন
এবং ‘শয়তান’ বা ‘দুষ্ট প্রকৃতিকে’ এর মাঝে ঢুকিয়েছেন। জরোস্তু জগৎকে দেখেছেন ‘মন্দ দেবতা’ ও ‘ভাল দেবতার’ মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্র এবং যুদ্ধের কালকে ধরেছেন সময় হিসেবে।
যদিও তার মতে সবশেষ ‘ভাল দেবতাই’ জিতবেন। তথাপি তিনি বলতে চাচ্ছেন যে ঈশ্বরকে যুদ্ধ করেই জিততে হবে, এটা আপনাআপনি ‘ফ্রিলাঞ্চ’ হবে না তার জন্যে। এ ধারণা থেকেই ইহুদী ও খৃস্টানরা ‘শয়তানের’ ধারণা ধার নিয়েছে।
ইতিহাসের ঘটনাপঞ্জী থেকে জরোস্ত্রর এ ধারণার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় । সত্য চিরদিনই শেষ পর্যন্ত জিতে থাকে। মানবজাতির উদ্ধারের জন্য একজন ত্রানকর্তা বেরিয়ে আসেন এবং কিছুকালের জন্য হলেও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন—শান্তির রাজত্ব শুরু হয়-চলতে থাকে মানবসভ্যতার ক্রমোন্নতি-বিকশিত হয় সমাজ সংস্কার, সংস্কৃতি।
ডারউইনের “যোগ্যতমের ঊর্ধ্বতন” এ সূত্রের কথাই বলে (সময় সম্পর্কে প্রাচীন)
এমপিডফ্লোসের দর্শনকে বাড়িয়ে নেন লুসি পাস ও ডেমোক্রিটাস – তারা পদার্থের আণবিক অবস্থা পর্যন্ত পৌঁছেন।
বাস্তবতাকে বর্ধিত করেন চোখের আগে পরে অণুর কল্পনা পর্যন্ত, এটা আড়াই হাজার বছর আগে একটা বিরাট বিপ্লব বৈকি। ডেমোক্রিটাস ও ডারউইনের ক্রমবিবর্তনবাদ সময় যে নিত্য, বাস্তব এটার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
হেরাক্লিটাস মনে করতেন সংগ্রামই হচ্ছে জীবজগতের বিকাশের জন্য অপরিহার্য উপাদান’। বিরুদ্ধতা, সংগ্রাম, অস্বীকৃতি হচ্ছে উন্নতির মোটিভ শক্তি।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে জার্মান দার্শনিক হেগেল এ মতবাদকে গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, ‘সংশ্লেষক’ এবং ‘প্রতিসংশ্লেষণে’র পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, টানাপোড়নের ঠেলায়ই ফল হিসেবে বেরিয়ে আসে প্রগতির শক্তি।
হেরাক্লিটাসের দর্শনকে কার্ল মাক্সই তার বস্তুবাদের দ্বন্দ্ব সমস্যায় রূপান্তরিত করেন
এবং প্রমাণ করেন যে বুর্জোয়া শ্রেণী ও সর্বহারা শ্রেণীর দ্বন্দ্বই ইতিহাসের চালিকা শক্তি। এ সংগ্রামে সর্বহারা শ্রেণীর বিজয় অবশ্যম্ভাবী এটা মার্কস এবং তার অনুসারীদের দৃঢ়বিশ্বাস।
আজকের মানুষ প্রত্যক্ষ করছে যে, ইতিহাস খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সময়ও দ্রুত গড়িয়ে যাচ্ছে। মানুষের চিন্তার জগতে সময়ের ধারণা বদলে গেছে। ধরতে গেলে পালেওলিথিক যুগের সর্বোচ্চ সীমায় আজ থেকে ৩০,০০০ বছর আগেই সময়ের দ্রুত চলা শুরু হয়।
বিরাট বিরাট লাফে মানবজাতি এগিয়ে চলছে সামনে। কৃষির প্রসারের সঙ্গে মানবসভ্যতা এক নতুন রূপ নিয়েছে। গত দু শতাব্দী ধরে মানুষ প্রকৃতির গুপ্ত সূত্রগুলিকে আবিষ্কার করে ফেলেছে।
নবী বা ধর্ম প্রচারকেরা সময়ের চরম সীমার কথা যা আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন তা মনে হয় গনিয়ে আসছে। পৃথিবীর শেষদিন বা ‘রোজ কেয়ামত’ আজ আর কেবল বিশ্বাসের ব্যাপার নয়—এটা পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার ফসল।
চারশত বৎসর আগে ফ্রান্সের নস্টারডামুস ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন ১৯৯৯ সালের ৭ই জুলাই আণবিক যুদ্ধে মানবজাতি ধ্বংস করবে নিজদেরকে। (সময় সম্পর্কে প্রাচীন বিজ্ঞানপূর্ব ধারণা এবং তার প্রভাব)
এ বৎসর ঐদিন এই ব্যাপারটি ঘটেনি, বলা হচ্ছে হিসেবে ভুল ছিলো, ব্যাপারটি ঘটবে সামনে! ত্রিকালদর্শী সর্বজ্ঞ এডগার কেইসী (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক-
অশিক্ষিত কিন্তু বেশ চমকদার সব তথ্য দিয়ে গেছেন স্বপ্নাবেশে —যা নিয়ে আজও গবেষণা চলছে) এরকম অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে গেছেন মানবজাতির বিজ্ঞানে উন্নতির বিষয়ে যা তার সময়ে ছিল অবাস্তব। তারা সময়কে অতিক্রম করে গেছিলেন।
নিউটনীয় গতিবিদ্যায় সময়
নিউটনীয় গতিবিদ্যায় সময়কে পরম বলে ধরে নেয়া হয়। অর্থাৎ অনুমান করা হয় যে সব জড়কাঠামোর দর্শকের কাছে যথাযথভাবে মেলানো ঘড়ি আছে এবং একই ঘটনার সময় সব দর্শকের কাছে একই।
প্রত্যেকটি জড়কাঠামোর সর্বত্র এই ধরণের মেলানো ঘড়ি আমরা রেখে দিতে পারি। কোন ঘটনার সময় তার নিকটবর্তী ঘড়ি থেকে জানা যাবে।
নিউটনের পরম সময়ের অর্থ এই যে প্রত্যেক প্রসঙ্গ – কাঠামোর সর্বত্র আমরা স্থায়ীভাবে ঘড়ি মিলিয়ে নিতে পারি । কোন ঘটনার সময় এইসব ঘড়িতে একই সময় পাওয়া যাবে।
আইজাক নিউটন আপেক্ষিক’ ‘মনে হয়’ এবং ‘সাধারণ সময়’ থেকে ‘পরম সময়’কে বিচ্ছিন্ন করেন তার বস্তুর ‘গতির সূত্র’ দিয়ে। পৃথিবীর তুলনায় সূর্য, গ্যালাক্সি এরা আপেক্ষিকভাবে স্থিতিশীল।
“আপেক্ষিক’ ও ‘পরম’ সময়ের ধারণার উৎপত্তি
পৃথিবীর গতিপথের অসম অবস্থার জন্য ঘুর্ণনের সময়ের তারতম্যের দরুন “আপেক্ষিক’ ও ‘পরম’ সময়ের ধারণার উৎপত্তি ঘটেছে। নিউটনের দেশ-কালের পরম আধিভৌতিক ধারণাকে জার্মান দার্শনিক এমানুয়েল কান্ট বিকশিত করেন।
যেকোন ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতাকে কোন স্থানের বিন্দুতে (দৈশিক) এবং কালিক (সময়) মুহূর্তে সংঘটিত হতে হবে। কোন বস্তুরই স্থান ও কালের বাইরে থাকার উপায় নেই ৷
তবে দেশ ও কাল আমাদের সংবেদন বা অভিজ্ঞতার উপাত্তের অংশ নয়। এরা আবার অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত ধারণাও নয় । কান্টের মতে, এরা ইন্দ্রিয়স্বজ্ঞা বা প্রতক্ষণের প্রাক-সিদ্ধ আকার ।
আমাদের কোন ইন্দ্রিয় দেশ ও কালকে মনের সামনে উপস্থিত করে না। আমাদের মনই যাবতীয় সংবেদনকে দেশ ও কালের পরিচ্ছদে সজ্জিত করে।
দেশ ও কালের জ্ঞান প্রাক-সিদ্ধ বা প্রত্যক্ষ-পূর্ব, প্রত্যক্ষোত্তর নয়
এ জন্যই দেশ ও কালের জ্ঞান প্রাক-সিদ্ধ বা প্রত্যক্ষ-পূর্ব, প্রত্যক্ষোত্তর নয়। এ জ্ঞান না থাকলে কোন সংবেদনই প্রতীতিতে পরিণত হতে পারে না। অভিজ্ঞতা দ্বারা আমাদের দেশকালের জ্ঞান হয় না, বরং দেশ-কালের কল্যাণেই অভিজ্ঞতা সম্ভব হয় ৷
দেশ ও কাল যে প্রত্যক্ষ-পূর্ব, এ কথাটি কান্ট পরাতাত্ত্বিক ও অতীন্দ্রিয় এই দ্বিবিধ যুক্তির সাহায্যে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। হেগেলের মতে, দেশ ও কাল ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার একটি গভীর শর্ত ও নিয়মের দ্বিবিধ প্রকাশ।
আর এ নিয়মটি হলো কার্যকারণ নিয়ম । বস্তুজগতের অসংখ্য বস্তু ও ঘটনার কোনটিকেই কারণ ছাড়া প্রত্যক্ষ করা যায় না। শত শত দার্শনিকের এ রকম দার্শনিক বচন রয়েছে দেশ ও কাল সম্পর্কে। এখন আমরা দেখব বিংশ শতাব্দতিতে সময়ের ধারণার কি বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন ঘটেছে তার ধারা বর্ণনা।
প্রিয় পাঠক, GulfHive এর সময় সম্পর্কে প্রাচীন বিজ্ঞানপূর্ব ধারণা এবং তার প্রভাব আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনাদের সময়ের বিচিত্র কাহিনী ও মহাকালের অজানা রহস্য তথ্য দেওয়ার জন্য প্রকাশিত হয়েছে। এই পোস্ট এর বিষয়ে আপনার কোনো অভিযোগ বা পরামর্শ থাকলে নিচের বাটনে ক্লিক করে কমেন্ট করুন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনি চাইলে ফেসবুকে আমাদের সাথে কানেক্ট থাকতে পারেন।