Sign In

মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিখন-শেখানো

মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিখন-শেখানো

প্রিয় পাঠক, আজকে জানবো মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিখন-শেখানো কৌশল নিয়ে। একটি দেশের জন্য দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করার প্রধান উপায় হচ্ছে শিক্ষা। এই দক্ষ জনশক্তির কর্মজীবনে প্রবেশের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জিত হয় মাধ্যমিক শিক্ষার মাধ্যমে।

মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিখন-শেখানো কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ করার জন্য আমাদের গাণিতিক দক্ষতার পাশাপাশি শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা থাকতে হয়। এই পাঠ আপনাকে রিচ টু টিচ: গণিত শিখন-শেখানো (ষষ্ঠ শ্রেণি) অনলাইন কোর্স এর মডিউল-১ এর প্রথম পাঠ সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে।

মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিখন-শেখানো

কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় পাঠ্যপুস্তক থেকে গাণিতিক সমস্যার সমাধান শেখাতে যত বেশি সময় এবং শ্রম ব্যয় হয়, শিক্ষাক্রমে আসলে কী বলা আছে, বা শিক্ষার্থীদের গাণিতিক ধারণা আদৌ স্পষ্ট হল কি না তা জানতে সাধারণত ততটা সময় ব্যয় করা হয় না। তাই এখানে “শিক্ষাক্রম এবং এর উপাদানসমূহ সম্পর্কিত প্রাথমিক ধারণা”- নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

শিক্ষানীতি অনুসারে আমাদের সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে যার উপর ভিত্তি করে নিম্ন মাধ্যমিক স্তর তথা ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

শিক্ষকের পাঠদানের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যেন এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারে সেজন্য এই বিষয়ে শিক্ষকের স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। শিক্ষাক্রমে বর্ণিত এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য

শিক্ষানীতি অনুসারে, মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য হল-

“শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের মাধ্যমে মানবিক, সামাজিক ও নৈতিক গুণসম্পন্ন জ্ঞানী, দক্ষ, যুক্তিবাদী ও সৃজনশীল দেশপ্রেমিক জনসম্পদ সৃষ্টি সেই সাথে শিক্ষাক্রমে সকল বিষয়ের উপর ১৮টি উদ্দেশ্য দেওয়া আছে৷

এই উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে যেটি মাধ্যমিক স্তরের গণিতকে নির্দেশ করছে, তা হল-

“শিক্ষার্থীকে গাণিতিক যুক্তি পদ্ধতি ও দক্ষতার সাথে পরিচিত করানো এবং জীবন ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বের পারিপার্শ্বিক সমস্যা সমাধানের জন্য গণিতের প্রায়োগিক দক্ষতা বিকশিত করা হয়।”

এটি সামগ্রিকভাবে গণিত বিষয়ের উদ্দেশ্য। অর্থাৎ নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা গণিতের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি এই জ্ঞান প্রয়োগেও যেন দক্ষ হয়ে উঠতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে গণিতে যে অধ্যায়গুলো আছে, সেগুলোর ১২টি উদ্দেশ্য রয়েছে। এগুলো হলঃ

১. গণিত শিক্ষায় উৎসাহী ও আগ্রহী হয়ে যৌক্তিক এবং গঠনমূলক চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হওয়া ।

২. বিভিন্ন প্রকার সংখ্যার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করে গাণিতিক সমস্যা গঠন করতে উদ্বুদ্ধ হয়ে তা সমাধানে সক্ষম হওয়া ৷

৩. ঐকিক, অনুপাত ও শতকরা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে দক্ষতা অর্জন করা।

৪. পরিমাপ সম্পর্কিত জ্ঞান ও ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করা।

৫. বীজগণিতীয় সূত্রাবলি আয়ত্ত করা এবং সূত্রাবলি প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারা।

৬. প্যাটার্ন ও লেখচিত্র সম্পর্কে ধারণা লাভ করে সমস্যা সমাধান করতে পারা।

৭. বীজগণিতীয় সমীকরণের ধারণা লাভ, সমীকরণ গঠন ও সমাধানে সক্ষম হওয়া ।

৮. জ্যামিতিক সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন পন্থা হতে সর্বোৎকৃষ্টটি নির্বাচনে সমর্থ হওয়া ।

৯. গাণিতিক উক্তির সত্যতা যাচাই করার দক্ষতা অর্জন করা ।

১০. জ্যামিতিক চিত্র অঙ্কনের সাহায্যে শিক্ষা ও কর্মজীবনে হাত ও চোখ ব্যবহারের কৌশল রপ্ত করা ৷

১১. সেট ও সেটের কার্যবিধি জেনে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে পারা ।

১২. তথ্য-উপাত্তের প্রক্রিয়াকরণ ও লেখচিত্রের সাহায্যে উপস্থাপন এবং কেন্দ্রীয় প্রবণতা নির্ণয়ে দক্ষতা লাভ করা ৷

এগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায় তিনটি অংশ আছে –

১। পাটিগণিত, ২। বীজগণিত, ৩। জ্যামিতি

পাটিগণিতের অংশে যুক্তির সাহায্যে গাণিতিক সমস্যা বিশ্লেষণ ও মানসিক উৎকর্ষতার লক্ষে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি আধুনিক গণিতের চাহিদার আলোকে এই শ্রেণিতে প্রথম বীজগণিতকে পরিচিত করা হয়েছে।

যুক্তিমূলক জ্যামিতিও এই শ্রেণিতে শুরু করা হয়েছে। সেইসাথে নতুন আঙ্গিকে যুক্তিমূলক জ্যামিতি এবং ব্যবহারিক জ্যামিতিকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

পাটিগণিত, বীজগণিত এবং জ্যামিতিতে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে গাণিতিক যুক্তিকে শিক্ষার্থীর সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের গাণিতিক যৌক্তিক যোগ্যতা এবং চিন্তার বিকাশ করা।

শিক্ষাক্রমে শিখনফল

শিখন- শেখানো কার্যক্রম, খুব সহজে বলতে গেলে শ্রেণিতে পাঠ পরিচালনার ফলে শিক্ষার্থীরা যে সকল সুনির্দিষ্ট জ্ঞান,দক্ষতা বা যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তাই শিখনফল।

শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ শ্রেণির প্রান্তিক শিখনফলগুলো প্রধান তিনটি অংশে ভাগ করে দেখানো হয়েছে। এগুলো হলঃ

১। বুদ্ধিবৃত্তীয়, ২। আবেগীয়, ৩। মনোপেশিজ;

বুদ্ধিবৃত্তীয় শিখনফলগুলোতে শিক্ষার্থীর জ্ঞানীয় এবং যৌক্তিক অংশগুলো তুলে ধরা হয়েছে। শিক্ষাক্রমে যে বুদ্ধিবৃত্তীক শিখনফলগুলো আছে সেগুলো সম্পূরক উপকরণ হিসেবে এই মডিউলে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এরপরে আছে আবেগীয় এবং মনোপেশিজ শিখনফল। প্রতিটি পাঠ শেষে নির্দিষ্ট বিষয়ের শিখনফলগুলোর প্রতি আলোকপাত করে পাঠ পরিকল্পনা করলে প্রয়োজনীয় শিখনফলগুলো অর্জন করা সম্ভব হবে।

পাঠ পরিকল্পনা

পাঠদানের পূর্বে প্রয়োজন হয় পাঠ পরিকল্পনা-এর। পাঠ পরিকল্পনা হচ্ছে শ্রেণিকক্ষে পাঠের বিষয়বস্তু প্রয়োগের কার্যকর পরিকল্পনা। পাঠ পরিকল্পনা নিয়ে পরবর্তিতে আলোচনা করা হয়েছে।

শিখন-শেখানো পদ্ধতি

শিখন-শেখানো পদ্ধতি

একটি শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষার্থীর শিখন অনেকাংশে নির্ভর করে শিক্ষকের পাঠদান পদ্ধতি ও কৌশলের উপর। এটি সঠিকভাবে নির্ধারণ করা গেলে শিক্ষার্থী সহজে শিখতে পারে এবং কাঙ্ক্ষিত শিখনফল অর্জন করতে পারে।

শিক্ষাক্রমে কয়েকটি শিখন-শেখানো পদ্ধতি এবং কৌশল উল্লেখ করা আছে। এগুলো হল –

১। প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতি

২। দলগত সহযোগিতেমূলক শিক্ষা পদ্ধতি

৩। প্রদর্শন পদ্ধতি

৪। অনুসন্ধান মূলক কাজ

এগুলো বিস্তারিত ভাবে পরবর্তিতে আলোচনা করা হয়েছে। শিখন-শেখানো কার্যক্রম আলোচনার পর আমাদের শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

মূল্যায়ন

শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন শিক্ষা কার্যক্রম থেকে শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা নির্ণয় করে। একজন শিক্ষাথী শিখনফলগুলো অর্জন করতে পেরেছে কি না তা মূল্যায়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব। মূল্যায়ন কথাটির বিস্তার অনেক। ধরন এবং প্রকৃতি অনুসারে মূল্যায়ন ২ প্রকারঃ

১। গঠনকালীন বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন

২। সামষ্টিক মূল্যায়ন

গঠনকালীন মূল্যায়ন

পাঠ চলাকালীন বা নির্দিষ্ট পাঠ্যাংশ থেকে যখন শিক্ষার্থীর অর্জন নির্ধারণ করা হয় তখন সেটি হয় গঠনকালীন বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন। তিনটি উপায়ে এটি করা হয়-

ক। শ্রেণির কাজ, খ। বাড়ির কাজ, গ। শ্রেণি অভীক্ষা

অর্থাৎ শিক্ষক নিয়মিত পাঠদানের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের গঠনকালীন মূল্যায়ন করতে পারেন।

সামষ্টিক মূল্যায়ন

নির্দিষ্ট সময় শেষে বা কার্যক্রম শেষে যে মূল্যায়ন করা হয় সেটি হল সামষ্টিক মূল্যায়ন। যেমন- প্রথম সাময়িকী পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা ইত্যাদি। এভাবে সামগ্রিকভাবে মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখনফল অর্জিত হয়েছে কি না তা যাচাই করা যায়৷

মোট কথা, এই পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের জন্য উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে শিক্ষকের সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। শিক্ষাক্রম সম্পর্কে শিক্ষক যত স্পষ্ট ধারণা রাখবেন এবং বর্ণিত বিষয়গুলো যত দক্ষভাবে শ্রেণিতে প্রয়োগ করতে পারবেন, শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান এবং প্রায়োগিক ক্ষমতা তত সমৃদ্ধ হবে।

প্রিয় পাঠক, GulfHive এর মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিখন-শেখানো আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনাদের রিচ টু টিচ: গণিত শিখন-শেখানো (ষষ্ঠ শ্রেণি) অনলাইন কোর্স তথ্য দেওয়ার জন্য প্রকাশিত হয়েছে। এই পোস্ট এর বিষয়ে আপনার কোনো অভিযোগ বা পরামর্শ থাকলে নিচের বাটনে ক্লিক করে কমেন্ট করুন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

প্রশ্ন-১: ষষ্ঠ শ্রেণির প্রান্তিক শিখনফলগুলো কত ভাগে ভাগ করা হয়েছে?

ক. ২ ভাগে, খ. ৩ ভাগে, গ. ৪ ভাগে, ঘ. ৫ ভাগে;

প্রশ্ন-২: ‘সাময়িক পরীক্ষা’ কোন ধরনের মূল্যায়ন?

ক. ধারাবাহিক মূল্যায়ন,

খ. গঠনকালীন মূল্যায়ন,

গ. সামষ্টিক মূল্যায়ন,

ঘ. এককালীন মূল্যায়ন;

প্রশ্ন-৩: ষষ্ঠ শ্রেণির গণিতের কোন অংশের লক্ষ্য শিক্ষার্থীর “গাণিতিক সমস্যা বিশ্লেষণ ও মানসিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি”?

ক. ব্যবহারিক জ্যামিতি,

খ. জ্যামিতির মৌলিক ধারণা,

গ. পাটিগণিত,

ঘ. বীজগণিত;

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *