কুরআনের আলোকে পুরুষের জীবনে নারীর প্রয়োজনীয়তা
পবিত্র কুরআন মুমিনদের জন্য পথপ্রদর্শক। আজকে পবিত্র কুরআনের আলোকে পুরুষের জীবনে নারীর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করি এটি আপনার খুবই কাজে লাগবে এবং আপনার ধারণার কিছুটা পরিবর্তন হবে ইনশাআল্লাহ। সাথেই থাকুন। শিখতে থাকুন।
“আমি আদমকে বললাম, হে আদম! তুমি ও তােমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক। আর সেখান থেকে যা-ই ইচ্ছা, পূর্ণ স্বাচ্ছন্দ্য ও তৃপ্তি সহকারে খেতে থাক। কিন্তু এ গাছটির ধারেও যেয়াে না। অন্যথা তােমরা যালেমদের মধ্যে গণ্য হয়ে যাবে।”
-(সূরা আল বাকারাঃ ৩৫)
পুরুষের জীবনে নারীর প্রয়োজনীয়তা
আল্লাহ তা’আলা হযরত আদম (আ)-কে সৃষ্টি করলেন মাটি থেকে। অতপর তারই সংগিনী স্ত্রী হিসেবে তার দেহাংশ থেকে তৈরী করলেন বিবি হাওয়া (আ)-কে এবং তাদের নির্দেশ দিলেন, জান্নাতে বসবাস করতে।
এখানে আল্লাহ তা’আলা সরাসরি আদমকে নির্দেশ দিলেন যে, তুমি এবং তােমার স্ত্রী জান্নাতে বাস করতে থাক। জান্নাতের হাজারাে রকমের নায-নেয়ামত ভােগ করার জন্যে আদমকে বলা হলাে।
কিন্তু এতসব নিয়ামতের মধ্যেও তাঁর সামগ্রিক প্রশান্তি ও পরিপূর্ণ তৃপ্তির জন্যে তাঁকে সস্ত্রীক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অথাৎ আল্লাহ মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, স্ত্রী ছাড়া একজন পুরুষের জীবন যাপন অপূর্ণ থেকে যায়।
তাই পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ)-কে তৈরী করার পর পূর্ণাঙ্গ জীবন-যাপনের জন্যে সংগিনী (স্ত্রী) হিসাবে সৃষ্টি করলেন হযরত হাওয়া (আ)-কে। পূর্বের আয়াতের মত এখানেও হযরত হাওয়া (আ)-কে আদম (আ)-এর যওজ রূপে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
দুনিয়াতে মানব জাতিকে নর ও নারী রূপে সৃষ্টি করার পেছনে মহান আল্লাহর বিশেষ সুকৌশল ও সুনিপুনতা বিরাজিত রয়েছে। যেমন সূরা আর রূমে ২১নং আয়াতে রাব্বল আলামীন ঘােষণা করেছেন-
ومن أيته أن خلق لكم من أنفسكم أزواجا لتسكنوا إليها۔
অর্থাৎ “তার নিদর্শনসমূহের মধ্যে এও একটি যে, তিনি তােমাদেরই মধ্য হতে তােমাদের জোড় সৃষ্টি করেছেন। যেন তােমরা তাদের কাছে পরম প্রশান্তি লাভ করতে পার।
রাবুল আলামীন এমন ব্যবস্থা করেছেন যে, নর নিজ প্রকৃতির দাবী পূরণ করতে পারে নারীর কাছে, আর নারী তার প্রকৃতির দাবী পূরণ করে নরের কাছে। উভয়ই পরস্পরের সাথে সংযুক্ত সংশ্লিষ্ট হয়ে থাকবে আর একে অপরের কাছে লাভ করবে পরম শান্তি, তৃপ্তি, স্বস্তি ও আশ্বস্তি।
এতে করে আল্লাহ তা’আলা একদিকে যেমন মানব বংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন, অপর দিকে তেমনি মানবীয় সভ্যতা ও তমদুন সৃষ্টির মাধ্যমও বানিয়েছেন।
কুরআনের আলোকে পুরুষের জীবনে নারীর প্রয়োজনীয়তা
আল্লাহ মানুষকে পুরুষ ও স্ত্রী দুটো লিংগে বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। এদের দেহ গঠনের মৌল ফমূলা একই রকম। তবুও তারা পরস্পর হতে ভিন্ন। ধরনের দৈহিক গঠন, মানসিকতা, আবেগ ও ভাবধারা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে।
এতদসত্ত্বেও তাদের মধ্যে বিস্ময়কর সাদৃশ্য ও সামঞ্জস্য রয়েছে। তারা সবাই পরস্পরের জন্যে পরিপূরক জুড়ি। সমস্ত পশু প্রজাতির মােকাবিলায় মানব জাতির মধ্যে সভ্যতা ও তমদুন সৃষ্টির এটাই মূল কারণ যে, আল্লাহ এ নর-নারীকে পরস্পরের প্রতি এমন বাসনা-কামনা ও ব্যগ্রতা-ব্যাকুলতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যে, একজন আরেক জনের সাথে মিলিত ও সংযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কেউই প্রশান্তি লাভ করতে পারে না।
এ প্রশান্তি প্রাপ্তি ও ভােগের আকাক্ষা ও ভূমিকা উভয়েরই সমান। সুতরাং সভ্য জীবন-যাপনে নরের জন্যে যেমন নারী আবশ্যক, ঠিক তেমনিভাবে নারীর জন্যে আবশ্যক নরের।
মানব সৃষ্টির গােড়াতেই আল্লাহ তা’আলা নর-নারীকে পরস্পরের সান্নিধ্যে প্রশান্তি লাভের ব্যবস্থা করেছেন। জান্নাতে তাদের সামষ্টিক বাসস্থান নির্ধারণ করে নির্দিষ্ট গাছের ফল ছাড়া যে কোনাে স্থানের যে কোনাে খাদ্য গ্রহণের অনুমতি দিয়ে দিলেন তাদের।
উপরােক্ত আয়াতে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলাে, আল্লাহ বসবাসের ব্যাপারে বলেছেন, তুমি ও তােমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর। কিন্তু পরবর্তীতে খাদ্য ও অন্যান্য নির্দেশাদি পালনে বলেছেন তােমরা দুজনে যা ইচ্ছা খেতে পারাে;
কুরআনের আলোকে পুরুষের জীবনে নারীর প্রয়োজনীয়তা
কিন্তু দু’জন এ গাছের ধারেও যাবে না। অর্থাৎ তােমাদের অবস্থানের দিক থেকে স্বাতন্ত্র থাকবে ঠিক কিন্তু তােমরা জীবন-যাপনে পরস্পরের সহায়ক ও পরিপূরক হয়ে থাকবে।
এ পৃথিবীতে মানব সষ্টির সূচনাতেই আল্লাহ তাআলা এভাবে মানব। সমাজ ও মানব সভ্যতার ভিত রচনা করেছিলেন। এখান থেকেই পরিবার ও পারিবারিক জীবনের সূচনা।
পরিবার গঠন ও পারিবারিক জীবন-যাপন করা আল কুরআনে নারী মানব জীবনের জন্য যেমন অত্যাবশ্যকীয়, তেমনি তা একটি উত্তম সমাজের জন্যও অপরিহার্য ভিত্তি স্বরূপ। পরিবারকে বাদ দিয়ে মানবতার বিকাশ ও মানবীয় চরিত্র অর্জন ও সংরক্ষণ-কিছুতেই সম্ভব নয়।
তথ্যসূত্র:
১. তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন: মুফতী মুহাম্মদ শফী (র)
২. তাফসীরে ইবনে কাছির ও আন্নামা ইবনে কাছীর (র)
৩. তাফহীমুল কুরআন ও সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (র)
- আপনি আরও পছন্দ করতে পারেন: জান্নাতে যেমন সঙ্গী পাবেন নারী ও পুরুষ