শিখনফলের শ্রেণিবিভাগ ব্লুমস ও এন্ডারসন সংশোধিত স্তরবিন্যাস
প্রিয় শিক্ষকগণ চলুন আজকে জেনে নিই শিখনফলের শ্রেণিবিভাগ ব্লুমস ও এন্ডারসন সংশোধিত স্তরবিন্যাস সম্পর্কে; এটি রিচ টু টিচ: গণিত শিখন-শেখানো (ষষ্ঠ শ্রেণি) মডিউল ১ এর চতুর্থ পাঠ; আশা করছি এটি পড়া শেষ করে আপনি শিখনফলের শ্রেণিবিভাগ করতে পারবেন এবং শ্রেণি কক্ষে তা বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
এর পূর্বে আমরা জেনেছি বিভিন্ন শিখন তত্ত্বের প্রাথমিক ধারণা নিয়ে। মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিখন-শেখানো ধারাবাহিক আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ বলার চেষ্টা করবো শিখনফলের শ্রেণিবিভাগ ব্লুমস ট্যাক্সোনমির সংশোধিত স্তরবিন্যাসশিখনফলের শ্রেণিবিভাগ নিয়ে।
রিচ টু টিচ: গণিত শিখন-শেখানো, মডিউল-০১; নিবন্ধ-০৩: শিখনফলের শ্রেণিবিভাগ
এই মডিউলের পূর্ববর্তি একটি নিবন্ধে মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে নিম্ন মাধ্যমিক শ্রেণির প্রান্তিক শিখনফলগুলোও আলোচনা করা হয়েছে। এই নিবন্ধে শিখনফলের শ্রেণিবিভাগের উপর আলোকপাত করা হয়েছে।
আমাদের শিক্ষাক্রমে শিখনফলগুলোকে যে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে, তা মূলত শিক্ষা- মনোবিদ বেঞ্জামিন ব্লুম এর শিক্ষার উদ্দেশ্যের শ্রেণিবিভাগ অনুসারে করা হয়েছে, যা Bloom’s Taxonomy নামে বহুল পরিচিত।
ব্লুমের এই ট্যাক্সোনমিতে শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলোকে আচরণিক ভাষায় লেখা হয়। এই টেক্সোনমি অনুসারে শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলোকে মূলত ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১। বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্দেশ্য,
২। আবেগীয় উদ্দেশ্য,
৩। মনোপেশীজ উদ্দেশ্য;
বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্দেশ্য
শিখন-শেখানো কার্যক্রমের ফলে শিক্ষার্থীরা কী ধরনের জ্ঞান অর্জন করবে তা প্রকাশ করা হয় এই বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্দেশ্যসমূহের মাধ্যমে।
১৯৫৬ সালে বেঞ্জামিন ব্লুম শিক্ষার্থীদের চিন্তন দক্ষতাকে ৬টি স্তরে বিন্যস্ত করে তার একটি ক্রম বিন্যাস করেন। পরবর্তিতে ১৯৯০ সালে তারই একজন শিক্ষার্থী এন্ডারসন এই স্তরবিন্যাসে কিছু সংশোধন করেন।
এখানে ক্লমের স্তরবিন্যাস এবং সেই সংশোধিত সাথে এন্ডারসনের স্তরবিন্যাস এর একটি চিত্র দেওয়া হল-
ধাপ গুলোর সংক্ষিপ্ত আলোচনা দেওয়া হল-
১। স্মরণ করা (Remember)
পূর্বে পঠিত কোন বিষয় মনে রাখতে পারা, মুখস্ত বলতে বা লিখতে পারা – শিক্ষার এই ধরনের উদ্দেশ্যগুলো স্মরণ করার অন্তর্গত। যেমন- ৮ এর নামতা বলতে পারা।
২। বুঝতে পারা (Understand)
কোনকিছু বুঝতে পারা, বুঝে বলতে বা লিখতে পারা, নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারা – এই ধরনের উদ্দেশ্যগুলো বুঝতে পারার অন্তর্গত। যেমন- সরল অংক করতে পারা।
৩। প্রয়োগ করা (Apply)
কোন কিছু জেনে বুঝে সেই জ্ঞান বাস্তবক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারা এই ধাপের অন্তর্গত। যেমন- ঐকিক নিয়ম জেনে ঐকিক নিয়মে কথার সমস্যার সমাধান করতে পারা।
৪। বিশ্লেষণ করা (Analyze )
কোন বিষয় বোঝার পর তা নতুন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করে সেই পরিস্থিতি বা ঘটনা ব্যাখ্যা করতে পারা হল বিশ্লেষণ।যেমন- উপপাদ্য-সম্পাদ্য শিখে অনুশীলনীর সমস্যা সমাধান করা।
৫। মূল্যায়ন করা (Evaluate)
অর্জিত জ্ঞান নতুন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করে তা ব্যাখ্যা করার পর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারা। যেমন- জ্যামিতি অনুশীলনীর কোন সমস্যা সমাধানে কোন নির্দিষ্ট উপপাদ্য ব্যবহার করবে।
৬। সৃষ্টি করা (Create)
অর্জিত জ্ঞান বুঝে, তা প্রয়োগ এবং ব্যাখ্যা করে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর সম্পূর্ণ নতুন কিছু তৈরিতে ব্যবহার করতে পারা। যেমন- বীজগনিতীয় পদ এবং রাশি ব্যবহার করে বাস্তব সমস্যার ভিত্তিতে সমীকরণ গঠন করবে।
আবেগীয় উদ্দেশ্যঃ
বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্দেশ্যগুলোর পর রয়েছে আবেগীয় উদ্দেশ্য। কোন কিছু আবেগ অনুভূতি দিয়ে অনুধাবন করতে পারা, কোন কিছু উপলব্ধি করতে পারা- এই ধরনের উদ্দেশ্যগুলো আবেগীয় উদ্দেশ্যের অন্তর্গত।
যেমন – দৈনন্দিন জীবনে গণিতের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারা।
মনোপেশীজ উদ্দেশ্যঃ
এরপর রয়েছে মনোপেশীজ উদ্দেশ্য। মস্তিষ্ক এবং পেশীর সমন্বয়ে যে উদ্দেশ্যগুলো অর্জিত হবে সেগুলোই মনপেশীজ উদ্দেশ্য।
যেমন- ছক কাগজ ব্যবহার করে লেখচিত্র অংকন করতে পারা।
মূলত, উপরোক্ত উদ্দেশ্যগুলো অর্জিত হলেই সামগ্রিকভাবে শিখনফল অর্জিত হবে।
নিচের ভিডিওতে শিখনফলের শ্রেণিবিভাগ ব্লুমস ও এন্ডারসন সংশোধিত স্তরবিন্যাস সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক, GulfHive এর শিখনফলের শ্রেণিবিভাগ ব্লুমস ও এন্ডারসন সংশোধিত স্তরবিন্যাস আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনাদের রিচ টু টিচ: গণিত শিখন-শেখানো (ষষ্ঠ শ্রেণি) অনলাইন কোর্স তথ্য দেওয়ার জন্য প্রকাশিত হয়েছে। এই পোস্ট এর বিষয়ে আপনার কোনো অভিযোগ বা পরামর্শ থাকলে নিচের বাটনে ক্লিক করে কমেন্ট করুন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
প্রশ্ন-১: একজন শিক্ষার্থী বীজগণিতীয় রাশি ও পদ ব্যবহার করে বাস্তব সমস্যাভিত্তিক একটি সমীকরণ গঠন করলো। এই দক্ষতাটি এন্ডারসনের স্তরবিন্যাস অনুযায়ী কোন স্তরের অন্তর্গত?
ক. প্রয়োগ করা (Apply),
খ. বিশ্লেষণ করা (Analyze),
গ. সৃষ্টি করা (Create),
ঘ. মূল্যায়ন করা (Evaluate);
প্রশ্ন-২: “ছক কাগজ ব্যবহার করে লেখচিত্র অংকন” শিক্ষার কোন ধরনের উদ্দেশ্য?
ক. জ্ঞানমূলক,
খ. আবেগীয়,
গ. মনোপেশীজ,
ঘ, বুদ্ধিবৃত্তীক;
প্রশ্ন-৩: ৫ এর নামতা বলতে পারা কোন শিখন উদ্দেশ্যের অন্তর্গত?
ক. বিশ্লেষণ করা,
খ. স্মরণ করা,
গ. মূল্যায়ন করা
ঘ. বুঝতে পারা;