Sign In

পুকুরে মিশ্র মাছ চাষ কৌশল ও প্রয়োজনীয় উপকরণ

পুকুরে মিশ্র মাছ চাষ কৌশল ও প্রয়োজনীয় উপকরণ

বন্ধুরা আজকে জানার চেষ্টা করবো পুকুরে মিশ্র মাছ চাষ করার কৌশল সংক্রান্ত বিষয়ে। আপনারা যারা মাছ চাষের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান করতে তাদের জন্য এই আর্টিকেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; তাহলে চলুন শুরু করি-

এই পাঠে আমরা জানবো- মাছ চাষের গুরত্ব ও ব্যবহৃত উপকরণ, পুকুরে স্থান নির্বাচন, পুকুরের পানি ব্যবস্থাপনা, পুকুরে চুন প্রয়োগের পদ্ধতি, পুকুরে সার প্রয়োগের পদ্ধতি, পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির পরীক্ষা, মাছ চাষের গুরত্ব ও ব্যবহৃত উপকরণ সংক্রান্ত বিষয়ে।

পুকুরে মিশ্র মাছ চাষ এর গুরত্ব

মাছ চাষের গুরুত্ব পুকুরে মাছের চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা । অল্প পুজি খাটিয়ে সহজেই মাছ চাষ করা যায়। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করে একদিকে যেমন আমিষের চাহিদা পুরন করতে পারি তেমনি আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারি।

একক পদ্ধতিতে অর্থাৎ পুকুরে একই জাতের মাছ চাষ করা যেতে পারে আবার দুই বা তার অধিক জাতের মাছ একসাথে মিশ্র পদ্ধতিতে চাষ করা যেতে পারে ।

পুকুরে মিশ্র মাছ চাষ করায় ব্যবহৃত উপকরণ

মাছ চাষে ব্যবহৃত উপকরণ

পাথুরে চুন, ইউরিয়া, টিএসপি, মিউরেট অব পটাশ, জৈব সার, রােটেনন, জাল, খৈল, গমের ভূষি, আটা, চালের কুড়া, সেকিডিক্স, পিএইচ মিটার, অক্সিজেন মিটার, থার্মোমিটার;

পুকুরে স্থান নির্বাচন

মাছ চাষের জন্য পুকুরের স্থান নির্বাচন অত্যন গুরুত্বপূর্ণ। পুকুরের স্থান নির্বাচনের জন্য কিছু বিষয়। বিবেচনা করা দরকার যেমন-

ক. মাটির প্রকৃতি-দোঁয়াশ মাটি,

খ. পলি মাটি বা বেলে দোঁয়াশ মাটি হলে ভাল হয়,

গ. ভাল পানির উৎস্য,

ঘ. পর্যাপ্ত আলাে-বাতাসের ব্যবস্থা,

ঙ. যােগাযােগের সু-ব্যবস্থা,

চ. মাছ চাষের জন্য প্রয়ােজনীয় উপকরনের প্রাপ্যতা,

ছ. নিরাপত্তা ব্যবস্থা,

জ. বাজারজাতকরনের সুবিধা;

পুকুর খনন করার জন্য বিবেচ্য বিষয়াবলী

১. বড় বা মাঝারী আকারের পুকুরের পাড় ৪-৫ফুট উচু হবে, উপরের অংশ ৪.৫ ফুট হবে।

২. পুকুরের বকচর ৩-৪ ফুট হবে।

৩. পুকুরের ঢাল হবে ২:১। এক ফুট মাটি কাটলে ২ফুট ভেতরে দিকে সরে যেতে হবে প্রধান কাজ পুকুরের পাড় যেন না ভাঙ্গে এবং মাছ ধরতে সুবিধা হয়।

৪. পুকুরের তলদেশ সমতল হবে।

৫. পুকুরের গভিরতা ৫-৭ ফুট হবে।

৬. পুরাতন পুকুর নির্বাচন করলে পুকুরের পাড় অবশ্যই মেরামত করে নিতে হবে।

৭. পুকুর পাড়ের ঢাল ভাঙ্গা থাকলে বা ঢালে গর্ত থাকলে তা মেরামত করে নিতে হবে, কারণ।

৮. পাড় মেরামত না করলে বাইরে থেকে রাসে প্রানী (সাপ, ও অবাঞ্চিত মাছ প্রবেশ করতে পারে।

৯. বৃষ্টির সময় মাছ ভেসে যেতে পারে।

১০. পুকুরের তলায় কাঁদার পরিমাণ ৪-৬ ইঞ্চির বেশী থাকলে তা তুলে ফেলতে হবে। তলদেশ অসমান থাকলে সমতল করে নিতে হবে।

আদর্শ পুকুরের বৈশিষ্ট

পুকুরে মিশ্র মাছ চাষে আদর্শ পুকুরের বৈশিষ্ট

ক. পুকুরটি আয়তকার হবে

খ. মাটি দোঁ-আশ অথবা বেলে দোঁ-আশ হবে

গ. সারা বছর ৫-৭ফুট পানি থাকবে

ঘ. দৈনিক ৬-৮ ঘন্টা সূর্যের আলাে পড়বে

ঙ. তলায় কাঁদার পরিমান ৪-৬ ইঞ্চি।

পুকুরের পানি ব্যবস্থাপনা

মাছ চাষে পানি ব্যবস্থাপনা বা পানির গুনাগুন জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ মাছ চাষের জন্য একটি আদর্শ পুকুরের গুনাগুন এবং ব্যবস্থাপনার জন্য করণীয় বিষয়াবলী হল-

i. হালকা সবুজ, লালচে সবুজ বা বাদামী সবুজ বর্ণের পানি,

ii. পানির গভীরতা ৫-৭ ফুট হতে হবে,

iii. পানির গভীরতা কমে গেলে পানির গুণাগুন পরিবর্তন হয়,

iv. পুকুরের তলদেশে গরম হয়, পানি ঘােলাটে হয়ে পড়ে।

v. পুকুরের পানি স্বচ্ছ হলে প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণ কমে যায় ফলে মাছের বৃদ্ধি হয় না।

vi. পানির স্বচ্ছতা ২৫-৩০ সে.মি. সর্বোত্তম।

vii. সেকিডিক্স দিয়ে আমরা সচ্ছতা পরিমাপ করতে পারি।

viii. পুকুরে নিয়মিত সার প্রয়ােগ করে স্বচ্ছতা দূর করা যায়।

ix. তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে পুকুরের উৎপাদনশীলতা বাড়ে, মাছের খাদ্য চাহিদা ও দৈহিক বৃদ্ধি দ্বিগুন পরিমানে বাড়ে।

মাছ চাষের জন্য পানির তাপমাত্রা ২৫-৩০০ সেলসিয়াস হলে ভাল হয়। পানির তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বাড়তি পানির সরবরাহ করে পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মাছ চাষে দৈনিক ৬-৮ ঘন্টা সূর্যের আলাের প্রয়ােজন।

কারণ সূর্যের আলাে পুকুররে সবুজ উদ্ভিদ কনা তৈরিতে সহায়তা তরে যা মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মাছের বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধির জন্য অক্সিজেন প্রয়ােজন। পুকুরে দিনের বেলায় অক্সিজেন বেশী থাকে।

রাত বাড়ার সাথে সাথে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। খুব ভােরে অক্সিজেনের মাত্রা সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে। সে কারনে অনেক সময় অক্সিজেনের অভাবে মাছ খাবি খেতে থাকে এবং কখনাে কখনাে পুকুর ভর্তি মাছ এক সাথে মারা যেতে পারে। সে জন্য পুকুরের পানিতে অক্সিজেন কমে গেলে পুকুরে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে।

পুকুরে অক্সিজেন কমে গেলে বিভিন্নভাবে পুকুরে অক্সিজেন বাড়ানাে যেতে পারে, যেমন-

ক. পানি পরিবর্তন বা নতুন পানি প্রবেশ করিয়ে 

খ. অক্সিজেন ট্যাবলেট সরবারহ করে

গ. এরেটর মেশিনের সাহায্যে বায়ু সঞ্চালন করে;

আদর্শ অক্সিজেনের মাত্রা ৪-৮ পিপিএম, অক্সিজেন মিটারের সাহায্যে অক্সিজেন পরিমাপ করা যায়।

মাছ চাষের জন্য পানির পিএইচ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পানির পিএইচ অস্বাভাবিকভাবে কমে বা বেড়ে গেলে মাছের উৎপাদন কমে যাবে পানির পিএইচ বলতে পানির অষ্ণ, ক্ষার বা নিরপেক্ষ অবস্থাকে বােঝায়।

যা ১-১৪ পর্য বিস্ত৷ পিএইচ ৭ দ্বারা নিরপেক্ষ মান,৭ এর নিচে অায় এবং ৭ এর উপরে ক্ষারীয় অবস্থা নির্দেশ করে। আদর্শ পিএইচ মান ৭.৫-৮.৫। পিএইচ মিটার দিয়ে পানির পিএইচ পরিমাপ করা যায়।

প্রয়ােজনীয় পরিমাণ চুন প্রয়ােগ ও পানি পরিবর্তন করে পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করা যায় । পুকুরে বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাসের সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে অ্যামােনিয়া সবচেয়ে ক্ষতিকর গ্যাস পুকরে অব্যবহৃত খাদ্য জৈব পদার্থের পচন,আগাছার পচন ইত্যাদি কারনে পানিতে গ্যাসের সৃষ্টি হয়।

অ্যামােনিয়ার আদর্শ মান ০.০২৫ পিপিএম, অ্যামােনিয়া মিটার দ্বারা অ্যামােনিয়ার মাত্রা পরিমাপ করা যায়। তলদেশের কাঁদা অপসারণ এবং পানির পরিবর্তন করে গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

টেবিল: পুকুরে পানির গুনাগুনের আদর্শ মাত্রা (টেক্স)

পানির গুনাগুনআদর্শ মাত্রা
পুকুরের পানির বর্ণহালকা সবুজ, লালচে সবুজ বা বাদামী সবুজ বর্ণ
পানির গভীরতা৫-৭ ফুট
পানির স্বচ্চতা২৫-৩০ সে.মি.
পানির তাপমাত্রা২৮-৩০°সেলসিয়াস
সূর্যালােকের উপস্থিতিদৈনিক ৬-৮ ঘন্টা
অক্সিজেন৪-৮ পিপিএম
পানির পিএইচ৭.৫-৮.৫
অ্যামােনিয়া০.০২৫ পিপিএম

গালফ্হাইব ডট কম এর সকল তথ্য সবার আগে পাওয়ার জন্য আমাদের ফেসবুক পেইজটি লাইক ও ফলো করে রাখুন এবং ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে নিন।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *