Sign In

গণিত বিষয়ে কার্যকর সফট স্কিলসমূহ আয়ত্ব করার কৌশল

গণিত বিষয়ে কার্যকর সফট স্কিলসমূহ আয়ত্ব করার কৌশল

প্রিয় শিক্ষকগণ, আশা করি ভালো আছেন। গণিত বিষয়ে যারা শিক্ষকতা করেন তাদের জন্য গণিত বিষয়ে কার্যকর সফট স্কিলসমূহ আয়ত্ব করার কৌশল নিয়ে আজকে হাজির হলাম। আমার বিশ্বাস এর মাধ্যমে আপনি শিক্ষার্থীদের গণিত ভীতি দূর করে কার্যকর ক্লাস উপহার দিতে পারবেন।

৬ষ্ঠ শ্রেণি গণিত শিখন শেখানো কৌশল সংক্রান্ত ধারাবাহিক আলোচনায় গত পর্বে আমরা জানতে পেরেছি গণিতের কার্যকর শিখন শেখানো পদ্ধতি এবং কৌশল; যারা পড়েন-নি এখনই পড়ে নিন।

গণিত বিষয়ে কার্যকর সফট স্কিলসমূহ

শ্রেণিকক্ষে গণিত বিষয়টি পড়ানো একটি অত্যন্ত দক্ষতাপূর্ণ কাজ৷ বর্তমান আধুনিক শিক্ষা বিজ্ঞানে একজন গণিত শিক্ষককে তাই গণিতের বিষয়সমূহে সম্যক ধারণা রাখার সাথে সাথে আরও কিছু দক্ষতা অর্জনের ব্যাপারেও যত্নবান হতে হয়।

এই দক্ষতাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-

১. হার্ডস্কিল (Hard skill), এবং

২. সফট স্কিল (Soft skill);

এখানে সাধারণ কিছু সফট স্কিলসমূহ একজন গণিত শিক্ষকের প্রেক্ষাপটে আলোচনা করা হবে। শুরুতেই হার্ডস্কিল এবং সফট স্কিল কী সে সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

হার্ড স্কিল ও সফট স্কিলের ধারণা

সুনির্দিষ্ট কাজে প্রয়োগ করা যায় এবং সঠিকভাবে ও সুনির্দিষ্ট উপায়ে যার মূল্যায়ন করা সম্ভব এমন দক্ষতাকে হার্ড স্কিল বোঝায়। সাধারণত কারিগরি এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতাগুলো এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। যেমন: প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ লিখতে পারা।

হার্ড স্কিল বই থেকে পড়ে কিংবা নির্দিষ্ট কারিকুলাম মেনে শেখা সম্ভব। যেমন, টিউটোরিয়াল দেখে ও সে অনুযায়ী ধাপগুলো অনুসরণ করে চাইলেই ফটোশপের কাজ শেখা সম্ভব। আবার সুনির্দিষ্ট উপায়ে এ সংক্রান্ত দক্ষতা মূল্যায়ন করা সম্ভব।

হার্ড স্কিল ও সফট স্কিলের ধারণা, গণিত বিষয়ে কার্যকর সফট স্কিলসমূহ আয়ত্ব করার কৌশল

এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন, একজন ডাক্তার যিনি তার চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়মিত পড়াশুনা করে এবং রোগী দেখে শিখতে পারেন। তার এই দক্ষতা পরিমাপ যোগ্য।

কিন্তু একজন রোগীর সাথে কীভাবে সহানুভূতির সাথে, সহমর্মিতার সাথে ব্যবহার করে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে, সেটি তাকে স্বপ্রণোদিত হয়ে শিখতে হবে এবং এই ব্যাপারগুলো তার ব্যক্তিত্বের সাথেও সম্পর্কিত বটে। মূলত এটিই সফট স্কিলের ধারণার অন্তর্ভুক্ত।

সফট স্কিল বলতে এমন দক্ষতাকে বোঝায় যা ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত এবং কোন নির্দিষ্ট উপায়ে যার পরিমাপ বা যথাযথ মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। যেমন: প্রচণ্ড মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষমতা৷

সফট স্কিল মানুষের এমন কিছু চারিত্রিক ও ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য, যা অন্যের সঙ্গে ভালোভাবে কাজ করতে বা মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষকে কাজ করতে শেখায়। এই দক্ষতাগুলো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে, আস্থা বাড়াতে এবং দলগতভাবে কাজ করতে দারুণভাবে সাহায্য করে৷

পাঠ্যবই পড়ে অনেক সফট স্কিলই তৈরি করা সম্ভব নয়। সফট স্কিল বৃদ্ধি করতে চাইলে আগে জানতে হবে সফট স্কিল কী। তারপর সচেতনভাবে চর্চা করতে থাকলে সহজাতভাবেই নিজের সফট স্কিলগুলো বৃদ্ধি পাবে।

সাধারণভাবে, শিক্ষকতার মত একটি পেশায় যে গণিত বিষয়ে কার্যকর সফট স্কিল থাকতে পারে

১. যোগাযোগ দক্ষতা,

২. দলগতভাবে কাজ করতে পারার সক্ষমতা,

৩. নেতৃত্বদানের ক্ষমতা,

৪. সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা,

৫. সৃজনশীলতা,

৬. চাপের মধ্যে কাজ করতে পারা,

৭. সময় ব্যবস্থাপনা,

৮. খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা,

৯. ইতিবাচক মনোভাব;

উপরোক্ত গুণগুলো পেশাগত জীবনে একজন মানুষকে সফল করে তুলতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। আর এ ধরনের গুণাবলীই মূলত সফট স্কিলের অন্তর্ভুক্ত। (গণিত বিষয়ে কার্যকর সফট স্কিলসমূহ আয়ত্ব করার কৌশল)

সাধারণভাবে, শিক্ষকতার মত একটি পেশায় যে সফট স্কিলগুলো থাকতে পারে, গণিত বিষয়ে কার্যকর সফট স্কিলসমূহ আয়ত্ব করার কৌশল
গণিত বিষয়ে কার্যকর সফট স্কীল

গণিত শিক্ষকের ক্ষেত্রে গণিত বিষয়ে কার্যকর সফট স্কিলসমূহ কেন প্রয়োজন?

প্রতিটি সুন্দর বিষয়ের শুরু হয় সুন্দর চিন্তা থেকে। আর গণিত হল সুন্দর চিন্তা করতে পারার একটা মাধ্যম। একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে শিশুকে গড়ে তোলার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে সুন্দর গুছিয়ে চিন্তা করতে শেখানো। আর সেটি গণিতের মাধ্যমেই সম্ভব হয়।

সুতরাং জীবনে চলার পথে আসা সমস্যাগুলোকে সুন্দরভাবে সমাধান করার জন্য গাণিতিক দক্ষতা একজন মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

কিন্তু নানা কারণেই শিক্ষার্থীদের কাছে গণিত বিষয়টি খুব ভীতিকর। এর অন্যতম কারণ, গণিতকে আমরা ছোটকাল থেকে কঠিন করে ভাবতে শিখি বা আমাদের শেখানো হয় এবং সেটিই একসময় আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ বা আতঙ্কের রূপ ধারন করে।

অথচ, গণিত হতে পারে সুন্দর চিন্তা করার একটি ভাষা। যে কোন একটি ভাষা রপ্ত করার জন্য যেমন দরকার হয় পর্যাপ্ত অনুশীলন এবং একই সাথে সেটিকে নিজের মধ্যে অনুভব করার, ঠিক তেমনি গণিতকে যদি আমরা একটি চিন্তা করার ভাষা হিসেবে কল্পনা করি, তাহলে তার জন্যও দরকার প্রচুর অনুশীলন এবং নিজের মধ্যে গণিতকে অনুভব করা।

মজার ব্যাপার হল, কোন একটি ভাষা শেখার ক্ষেত্রে যেমন, একজন দক্ষ প্রশিক্ষক দরকার, ঠিক তেমনি, শিক্ষার্থী যেন গণিতকে অনুভব করে বার বার অনুশীলনের মাধ্যমে রপ্ত করতে পারে সেজন্য গণিত শিক্ষককে হতে হয় গণিত বিষয়ে পটু।

মাধ্যমিক স্তরের গণিত হল একজন শিক্ষার্থীর জীবনের আনুষ্ঠানিক গণিত শিক্ষার স্তর, যা তার পরবর্তী শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনকে এগিয়ে নিতে মূল ভূমিকা পালন করে।

মূলত, এই শিক্ষার মাধ্যমেই পরবর্তী স্তরগুলোতে শিক্ষার্থীর গণিত বিষয়ের প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা তৈরী হয়।

এই শিক্ষা মূলত চিন্তা করার মানসিকতা ও সামাজিক দক্ষতার মজবুত ভিত্তি তৈরী করে আজীবন শিখনের ভিত প্রতিষ্ঠিত করে।

তাই এই স্তরের গণিত শেখানোর জন্য একজন শিক্ষকের সহজাত কিছু গুণাবলীর পাশাপাশি বিশেষ কিছু দক্ষতায় পারদর্শিতা অর্জন আবশ্যক যা মূলত সফট স্কিলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

গণিতের ক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণঃ

“গণিত মূলত যৌক্তিক চিন্তার গাণিতিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সৃজনশীলতার উন্মেষ ঘটে”

একজন গণিত শিক্ষকের কী কী অত্যাবশ্যকীয় গুণাবলী ও দক্ষতা থাকা দরকার সেটি এখন জানার চেষ্টা করা যাক। সাধারণ দৃষ্টিতে একজন গণিত শিক্ষকের দক্ষতার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে-

i. গণিতের বিষয় ভিত্তিক পূর্ণ ধারণা

ii. শিক্ষার্থীদের সাথে সহজ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারা

iii. বাস্তব জীবনের সাথে পাঠের বিষয়বস্তুকে সংযোগ করতে পারা

iv. শিক্ষার্থীদের পাঠে নিয়োজিত করার ক্ষমতা

v. ইতিবাচক প্রেষণাদানকারী অর্থাৎ স্বপ্ন দ্রষ্টা

vi. ধৈর্য্যশীল এবং যত্নশীল

vii. পড়ানোর কৌশল সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা

viii. ধারাবাহিক বিকাশ / উন্নয়নের ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা

এই গুনাবলীর মাধ্যমে একজন শিক্ষক তার পাঠদানকে আরো বেশি আকর্ষণীয় এবং গ্রহণীয় করে তুলতে পারেন। নিম্নে এই দক্ষতাগুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

গণিতের বিষয় ভিত্তিক পূর্ণ ধারণা

বিষয়ভিত্তিক পূর্ণ ধারণা একজন গণিত শিক্ষকের প্রধান দক্ষতা। বিশেষ করে মাধ্যমিকের গণিত পাঠদানের জন্য এই সম্পর্কিত সকল বিষয়বস্তুর উপর একজন গণিত শিক্ষকের সম্যক ধারণা রাখা আবশ্যক।

সৃজনশীল বিষয় হিসেবে গণিতের ক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও বিভিন্ন নিয়ম বা কলাকৌশল সম্পর্কে ধারণা একজন শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে পাঠ পরিচালনা করতে সহায়তা করে৷

এই কোর্সটি সম্পন্ন করার মাধ্যমে শিক্ষকগণ ৬ষ্ঠ শ্রেণির জন্য প্রয়োজনীয় গণিত বিষয়ক ধারণা ঝালাই করে নিতে পারবেন।

বাস্তব জীবনের সাথে সংযোগ স্থাপনে সক্ষম

অর্থাৎ গল্প করতে জানা- গণিত এমন একটি বিষয়, যা বাস্তবে দেখা যায় না। এটি ধরা যায় না, ছোয়াও যায় না। পুরো ব্যাপারটাই মস্তিষ্কের বিষয়। আর গণিতের শিখন-শেখানোর ব্যাপারে এটাই সব থেকে চ্যালেঞ্জিং; শিক্ষার্থীকে অদেখা বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া।

এটি করতে গিয়েই শিক্ষার্থী কল্পনা করতে শেখে। তাই, গণিত শিক্ষকের অন্যতম প্ৰধান গুণ হল গল্প করতে জানা। গল্পের মাধ্যমেই একজন শিক্ষক পাঠের বিষয় বস্তুকে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীর জীবনের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, পৃথিবীর সব মানুষ যেমন সমান নয় ঠিক একইভাবে গল্প করার মত সহজাত গুণাবলীও সবার থাকে না। অনেকেই ব্যক্তিগত জীবনে একটু কথা কম বা গল্প কম করতে পছন্দ করতে পারেন৷

সুতরাং এই ধরনের শিক্ষকগণ শ্রেণিতে পাঠ পরিকল্পনার সময়ই কী ধরনের গল্প করবেন, তার একটি তালিকা সাজিয়ে নিতে পারেন।

এইভাবে পরিকল্পনা করতে করতেই একটা সময় শিক্ষক গণিতের বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করবেন এবং বাস্তব জীবনের সাথে সংযোগ করতে পারবেন। সেই সাথে শিক্ষার্থীদেরও এ ধরনের দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করতে পারবেন।

শিক্ষার্থীদের সাথে সহজ সম্পর্ক স্থাপন করা

শ্রেণিকক্ষে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরী করে ও বজায় রেখে যথাযথভাবে শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া পরিচালনা করা একজন শিক্ষকের অন্যতম দায়িত্ব।

শিক্ষককে তাই হতে হবে শিক্ষার্থীর বন্ধু। শিক্ষার্থীর সাথে তিনি এমনভাবে মিশে যাবেন, কথা বলবেন অথবা যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়া করবেন যাতে শিক্ষার্থী পরম আস্থার সাথে তার উপর নির্ভর করতে পারে।

শিক্ষার্থীর শেখা ও বিকাশ বহুগুন বেড়ে যায় যদি তার সাথে শিক্ষকের একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। সম্পর্ক গণিতের শ্রেণিকক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।

শিক্ষার্থীদের পাঠে নিয়োজিত করার ক্ষমতা

মাধ্যমিক স্তরের শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় শিক্ষকের ভূমিকা হবে সহায়তাকারীর (Facilitator)। একটি শ্রেণিকক্ষে যেহেতু অনেক ধরনের শিক্ষার্থী থাকে কিন্তু পাঠের বিষয়বস্তু একই থাকে, তাই একই সময় সকল ধরনের শিক্ষার্থীকে পাঠে নিয়োজিত করা অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায় শিক্ষকের জন্য।

প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার নিজ পরিবেশ থেকে নিজস্ব বিশ্বাস, জীবন অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ নিয়ে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হয়।

শিক্ষক হিসেবে প্রধান কাজ, শিক্ষার্থীর এই অভিজ্ঞতাগুলো সমন্বয় করা এবং শ্রেণিকক্ষের নির্দিষ্ট দিনের পড়ার বিষয় বস্তুর সাথে বাস্তব জীবনের সংযোগ ঘটানো।

এই কাজটি শিক্ষক যদি সঠিকভাবে করতে পারেন তাহলে শিক্ষার্থীর শিখন যেমন দৃঢ় হবে তেমনি তা অনেক বেশি স্থায়ী হবে। এজন্য গণিতের ক্ষেত্রে পাঠ পূর্ব অভিজ্ঞতাকে গুরুত্বের সাথে বাস্তবায়ন করা উচিৎ।

এইক্ষেত্রে শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও শিক্ষার পরিবেশ যথেষ্ট নমনীয় এবং শিক্ষার্থীর স্বতন্ত্র চাহিদা ও শিখন উপায়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে যেন সকল শিক্ষার্থীর শেখার আগ্রহ বজায় থাকে এবং শিখন চাহিদা পূরনের সুযোগ থাকে।

স্বপ্নদ্রষ্টা / ইতিবাচক প্রেষণাদানকারী

আমাদের দেশে অধিকাংশ সময়ে শুধু শেখানো হয় প্রশ্নে কী থাকলে উত্তরে কী লেখতে হবে। কেন কী হয় তা সাধারণত শেখানো হয় না।

স্বাভাবিকভাবেই কোথা থেকে এসব এলো আর এসব শিখেই বা জীবনে কী হবে এরকম প্রশ্ন শিক্ষার্থীর মনে আসে, যার উত্তর অনেক সময় তারা শিক্ষাজীবনের শেষে গিয়েও পায় না। ফলে গণিতের মত সৃজনশীল ব্যাপারও হয়ে দাড়ায় আন্দাজে কিছু নিয়ম মুখস্থ করে যাওয়ার মত ৷

অনেকের কাছে নিয়মগুলো সোজা লাগে, তারা পরীক্ষায় ভাল করে, যদিও জানে না, নিয়মগুলো আসলে কেন কাজ করে। আর বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই এভাবে আন্দাজে অংক করতে করতে গণিতের প্রতি ইচ্ছা ও আগ্রহই হারিয়ে ফেলে, তারাই পরীক্ষায় খারাপ করে। তখন অজান্তেই মনে ভয় ঢুকে যায় এবং শিক্ষার্থী নিজেকে গণিতে দুর্বল মনে করে।

কিন্তু শ্রেণিকক্ষে যদি গণিতের সূত্রগুলোর সাথে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনের একটা সম্পর্ক স্থাপন করা যায় এবং সেটি অর্জন করার জন্য শিক্ষার্থীকে সব সময় উৎসাহ দেওয়া যায়, তাহলে এই অবস্থা হয় না।

যেমন, একজন শিক্ষার্থী যদি গণিতে ভাল হয়, তাহলে সে পাইলট হতে পারবে কিংবা গণিতে ভাল করলে ইঞ্জিনিয়ার, মহাকাশ বিজ্ঞানী, সমুদ্র বিজ্ঞানী কিংবা ভালো খেলোয়ার হতে পারবে- এমন হাজার রকমের পেশায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরী হবে –

এই ধারণা যদি শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে পায়, তাহলে একদিকে যেমন সে গণিতের সাথে বাস্তব জীবনের সংযোগ সম্পর্কে ধারণা পাবে, অন্যদিকে এই বিষয়ে দক্ষ হওয়ার প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হবে।

তাই, গণিতের একজন শিক্ষককে গণিতের মূল বিষয়ে পারদর্শী এবং সেটি সঠিকভাবে শ্রেণিতে উপস্থাপন করতে পারার দক্ষতার পাশাপাশি একজন স্বপ্নচারী মানুষ হওয়াটা খুব দরকারী, যিনি একই সাথে শিক্ষার্থীদেরকে আনন্দের সাথে গণিত শেখাবেন পাশাপাশি নিরন্তর উৎসাহ দিয়ে যাবেন।

ধৈর্যশীল এবং যত্নশীল

কোন ভাষা শেখার জন্য দরকার ধৈর্য্যের সাথে দিনের পর দিন অনুশীলন। গণিত হল বিজ্ঞানের ভাষা। 

তাই, শিক্ষক হিসেবে অন্যতম কাজই হল, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর জন্য বার বার অনুশীলনের পরিবেশ তৈরী করা। শুধু তাই নয়, গণিতের অনেক কিছুই প্রথমবারের জন্য শিক্ষার্থীর সহজে বোধগম্য হয় না। 

যেহেতু অনেক ক্ষেত্রেই গণিতের বিষয়গুলো চোখে দেখা যায় না, তাই শিক্ষককে অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে শ্রেণিকক্ষে গণিত উপস্থাপন করতে হয় এবং যত্নের সাথে শিক্ষার্থী যেন অনুশীলন করতে পারে সেই ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়।

অনেক ক্ষেত্রে শ্রেণিতে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী থাকতে পারে, কিন্তু শিখনফল অর্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষকের তখন ধৈর্য ও যত্ন এই দুটি গুনাবলীরই অধিকারী হওয়া বাঞ্চনীয় হয়ে পরে।

পড়ানোর কৌশল সম্পর্কে সম্যক ধারণা

গণিতের বিষয়বস্তুর ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ধরন ও কৌশল নির্ধারিত হয়। মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের শিখনফল অর্জনের জন্য একেক বিষয়বস্তু একেক ভাবে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপনের প্রয়োজন দেখা দেয়। 

গণিত শিক্ষককে বিষয়বস্তুর ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে পড়ানোর কৌশলগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে কীভাবে সেটি উপস্থাপন করা যায়, সেই ব্যাপারেও দক্ষ হতে হয়। 

উদাহরণস্বরূপ, যোগ যেভাবে পড়ানো হবে, সেই একই ভাবে বিয়োগ পড়ালে শিক্ষার্থীরা যোগ ও বিয়োগের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারবে না। কিংবা পাটিগণিত আর জ্যামিতির বিষয়গুলো পড়ানোর ধরন হয়তো এক হবে না। 

২টি বিষয় পড়ানোর ধরন ও কৌশল ভিন্ন এবং একজন গণিত শিক্ষককে তাই আলাদা ভাবে পারদর্শিতা অর্জনের জন্য সচেষ্ট হওয়াটা জরুরী।

ধারাবাহিক বিকাশ / উন্নয়ন- বর্তমান পৃথিবী দ্রুত পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক সময় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সময়মত বিভিন্ন কর্মশালা বা প্রশিক্ষনের আয়োজন করা সম্ভব হয় না।

তাই আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য সার্বক্ষণিক নিজেকে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়া এবং একই সাথে চারপাশের পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা আবশ্যক। গণিত শিক্ষক হিসেবে, নিজেকেই তাই উদ্যোগী হয়ে নিজের ধারাবাহিক বিকাশের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াটা খুবই দরকারী।

যে দক্ষতাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল, সেগুলো একদিনে অর্জন করা অবশ্যই সম্ভব নয়। কিন্তু প্রতিদিনের শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত অনুশীলন এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টাই পারে একজন সাধারণ শিক্ষককে শিক্ষার্থীর জীবনের লক্ষ্য অর্জনে মূল কান্ডারির ভূমিকায় পরিণত করতে।

প্রিয় পাঠক, GulfHive এর গণিত বিষয়ে কার্যকর সফট স্কিলসমূহ আয়ত্ব করার কৌশল আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনাদের রিচ টু টিচ: গণিত শিখন-শেখানো (ষষ্ঠ শ্রেণি) অনলাইন কোর্স তথ্য দেওয়ার জন্য প্রকাশিত হয়েছে। এই পোস্ট এর বিষয়ে আপনার কোনো অভিযোগ বা পরামর্শ থাকলে নিচের বাটনে ক্লিক করে কমেন্ট করুন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনি চাইলে ফেসবুকে আমাদের সাথে কানেক্ট থাকতে পারেন।

গণিত বিষয়ে কার্যকর সফট স্কিলসমূহ আয়ত্ব করার কৌশল নিয়ে ভিডিও

প্রশ্ন-১: গণিত শেখানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কোনটি?

  • শিক্ষার্থীকে অদেখা বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া
  • অংক করতে দেওয়া
  • শ্রেণিকক্ষে গণিত ক্লাস নেওয়া
  • পরীক্ষা নেওয়া

প্রশ্ন-২: একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে শিশুকে গড়ে তোলার প্রথম পদক্ষেপ কী হতে পারে?

  • বেশি বেশি খেলতে দেওয়া
  • সারাক্ষণ শাসন করা
  • সুন্দর গুছিয়ে চিন্তা করতে শেখানো
  • নিয়মিত স্কুলে পাঠানো

প্রশ্ন-৩: সফট স্কিল মানুষের কী ধরনের বৈশিষ্ট্য?

  • পেশাগত
  • চারিত্রিক ও ব্যক্তিগত
  • সাংসারিক
  • গোপন

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *